ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মহাসমাবেশে ঘোষণা

জাপার জোটে বেশ কয়েক ইসলামী দল যুক্ত হতে পারে

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৭ অক্টোবর ২০১৮

জাপার জোটে বেশ কয়েক ইসলামী দল যুক্ত হতে পারে

রাজন ভট্টাচার্য ॥ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ৩০০ আসনে প্রার্থী তালিকা করলেও মহাসমাবেশে তা প্রকাশ করবে না জাতীয় পার্টি। তবে সমাবেশে জাপার জোটে বেশ কয়েকটি ইসলামী দল ও জোট যুক্ত হওয়ার ঘোষণা আসতে পারে। সেই সঙ্গে জাপার রাজনৈতিক অবস্থানও এরশাদ ঘোষণা করতে পারেন। তাছাড়া নির্বাচনে তরুণ, জনপ্রিয় ও নিবেদিত নেতাদের মনোনয়ন দেয়ার চিন্তা করছে দলটি। চলতি মাসেই পার্লামেন্টারি বোর্ড গঠনের পর সব আসনে মনোনয়ন চূড়ান্ত করার কথা জানিয়েছেন জাপার শীর্ষ নেতারা। দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সকল আসনে দলের জনপ্রিয় নেতা নেই। অর্থাৎ প্রার্থী সঙ্কট আছে। যদিও সকল আসন থেকে সম্ভাব্য তিনজন করে প্রার্থীর নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। প্রায় শতাধিক আসনে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী পাওয়ার কথা জানা গেছে দলের একাধিক সূত্রে। তাছাড়া আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য বর্তমানে ৪০ সংসদ সদস্যের কেউই বাদ যাচ্ছেন না বলে জানা গেছে। টেকনোক্র্যাট কোটায় নারী সংসদদের কয়েকজনকে সরাসরি মনোনয়ন দেয়ার চিন্তা করছে দলটি। ২০১৪ সালের নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে সকল প্রার্থীকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। রাজনীতির নাটকীয়তায় অসুস্থ বলে তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। কিন্তু তার নির্দেশ অমান্য করে অনেকেই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাপা নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিরোধী দল হিসবে সংসদে আছে। এরশাদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেও সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তাছাড়া সংসদ সদস্য হিসেবেও আছেন বহাল তবিয়তে। দলটির নেতারা বলছেন, বিশ্বাসের অভাব ও রাজনীতিতে এরশাদের দ্বৈত অবস্থানের কারণে সারাদেশে সাংগঠনিক অবস্থা খুব ভাল নয়। বিরোধী দলে থেকেও গত পাঁচ বছরে দলকে চাঙ্গা করতে পারেননি তিনি। বরং কোন কোন ক্ষেত্রে দলের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় যোগ্য প্রার্থীরা দল ছেড়ে অনত্র চলে গেছেন। এতে দেখা দিয়েছে প্রার্থী সঙ্কট। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আসনপ্রতি জনপ্রিয় প্রার্থী বাছাই করতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে দলটিকে। জানতে চাইলে জাপা মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, মহাসমাবেশে প্রার্থী তালিকা ঘোষণার সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, সমাবেশে দলের চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টির নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোটের অবস্থান পরিষ্কার করবেন। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির বেশ কয়েক হতাশাগ্রস্ত নেতা জাপায় যোগ দেয়ার ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, বেশ কয়েকটি ইসলামিক দল ও জোটের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তাদের সঙ্গে কথাবার্তা ঠিক হলে মহাসমাবেশে আমাদের জোটে সে দলগুলোর যোগ দেয়ার ঘোষণা আসতে পারে। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাপার চলমান অবস্থান ধরে রাখার ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, জাতীয় পার্টিকে নিয়ে মানুষের আগ্রহ আছে। তাই সহজে সবকিছু শেষ করে দিলে রাজনীতির মাঠ চাঙ্গা থাকবে না। পরিস্থিতি বুঝে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করা হবে বলে জানান তিনি। তবে জাপার একাধিক প্রেসিডিয়ামের সদস্য জানিয়েছেন, নির্বাচনে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে জাপার নানা ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। বিএনপি অংশ না নিলে জাতীয় পার্টি একক নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। আর যদি বিএনপি অংশ নেয় তাহলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোট করবে জাতীয় পার্টি। এক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের কাছে ৮০টি আসন চেয়েছেন এরশাদ। একক নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য আরও কিছু দলকে জাপায় ভেড়ানোর চেষ্টা চলছে। নেতাদের ধারণা, বেশ কয়েকটি দল জাপার জোটে থাকলে প্রার্থী সঙ্কট থাকবে না। তবে নির্বাচন পর্যন্ত জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের অনুগত থাকবে কিনা তাই ভাবনার বিষয়। এ ব্যাপারে দলের মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই। আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছি। কোন দল নির্বাচনে না এলে আমরা আসব। কারণ জাতীয় পার্টি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল। তিনি বলেন, সামনে চমক আছে। ২০ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত মহাসমাবেশ থেকেও নতুন রাজনৈতিক চমক দিতে পারেন এরশাদ। জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলের একটি অংশ ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিতে আগ্রহী। অপর একটি অংশ থাকতে চায় বিএনপির সঙ্গে। ইতোমধ্যে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে জাপার শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। বিরোধী দলের রওশনপন্থীরা মনে করছেন, আসনের লোভ দেখিয়ে এরশাদকে ঐক্যফ্রন্টে কাছে টানার চেষ্টা হতে পারে। তবে এই চেষ্টা কোন অবস্থাতেই সফল হতে দেয়া যাবে না। জাতীয় পার্টির বেশিরভাগ নেতাই মনে করেন আওয়ামী লীগই জাপার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ। তাছাড়া বিএনপি আমলে এরশাদকে জেল খাটতে হয়েছিল। সেকথাও ভুলেননি অনেকেই। জেএসডি সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন বলেছেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট হয়েছে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান দেশবাসীকে উপহার দিতে। আমরা সে লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছি। আশা করছি কিছু রাজনৈতিক দল আমাদের যাত্রায় শামিল হবে। তবে কোন্ দলগুলো এ যাত্রায় শামিল হতে পারে তা প্রকাশ করেনি তিনি। দলের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শুনিল শুভ রায় বলেন, পার্লামেন্টারি বোর্ড গঠন না হওয়া পর্যন্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা সম্ভব নয়। ২০ অক্টোবরের মহাসমাবেশে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, জনপ্রিয়তা, নির্বাচন করার সামর্থ্য, দলের জন্য অবদান, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা এসব মানদ- বিবেচনায় নিয়ে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত একজন প্রার্থীও চূড়ান্ত হয়নি। মহাসমাবেশের পর দলের পার্লামেন্টারি বোর্ড গঠন হবে। সেখানে আলোচনা শেষে সকলের মতামত নিয়ে তালিকা চূড়ান্ত হবে। তিনি বলেন, যেসব আসনে একজন জনপ্রিয় প্রার্থী আছেন এদিক বিবেচনায় কেউ হয়ত ধরে নিতে পারে তিনি ছাড়া আর কেউ মনোনয়ন পাচ্ছেন না। তবে দল থেকে নির্বাচনের জন্য মাঠে কাজ করতে অনেককেই নির্দেশ দিয়েছেন পার্টির চেয়ারম্যান। হাওলাদার বলেন, দেশের মানুষ জানে, পল্লীবন্ধুর ৯ বছরের শাসনামলে উন্নয়ন এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের যে নজির আছে, তা গেল ২৭ বছরে কেউ করতে পারেনি। জাতীয় পার্টি কোটি কোটি শান্তিপ্রিয় মানুষের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। জাতীয় পার্টি দেশের মানুষের শেষ ভরসা। ২০ অক্টোবর সম্মিলিত জাতীয় জোটের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত মহাসমাবেশে এরশাদ নির্বাচন ও জোট গঠন নিয়ে কথা বলবেন- নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নের কথা। মহাসমাবেশে তিনি জাতিকে দিক-নির্দেশনা দেবেন। বিগত নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণের বিষয়টি টেনে তিনি বলেন, ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার পর গত ২৭ বছরের প্রতিটি সংসদে জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণ ছিল। জাতীয় পার্টি একটি নির্বাচনমুখী দল। তাই আগামী নির্বাচনেও অংশ নিতে ৩০০ আসনেই প্রস্তুত রয়েছে জাতীয় পার্টি।
×