ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গ্যাসের দাম বাড়ছে না নির্বাচনের আগে

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৭ অক্টোবর ২০১৮

গ্যাসের দাম বাড়ছে না নির্বাচনের আগে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নির্বাচনের আগে কোন ধরনের গ্যাসের দাম বৃদ্ধি না করার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী গত ৭ অক্টোবর বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) গ্যাসের দাম বৃদ্ধি না করার নির্দেশ দেন। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির বদলে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস এলএনজি আমদানিতে তিন হাজার ১০০ কোটি ভর্তুকি দেয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে বিইআরসি। কমিশন সদস্য আব্দুল আজিজ খান মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে জানায়, সরকার এলএনজি আমাদানির আর্থিক সংস্থানের দায়িত্ব নিয়েছে। এজন্য তিন হাজার ১০০ কোটি টাকার ভর্তুকি প্রয়োজন। এজন্য আর গ্যসের দাম বৃদ্ধির প্রয়োজন হচ্ছে না। কমিশন মঙ্গলবার জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে জানায়, নিরাপত্তা জামানতের পরিমাণ তিন মাসের পরিবর্তে ২ মাসের, ছয় মাসের পরিবর্তে ৪ মাসের বিলের সব পরিমাণ অর্থ নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রিপেইড মিটার গ্রাহকের আর নিরাপত্তা জামানত দিতে হবে না। গ্যাসের বিলের কাগজে গ্যাসের মূল্যহার ঘনমিটারে ঘণ্টা প্রতিও মাসিক অনুমোদিত লোড, চালনা পদ্ধতি, (দৈনিক কর্মঘণ্টা এবং মাসিক কার্য দিবস), ডায়ভারসিটি ফ্যাক্টর ও সরবরাহ চাপ উল্লেখ করতে হবে। সকল গ্যাস ব্যবহারকারী সরবরাহ মাসের পরবর্তী মাসের শেষ তারিখ পর্যন্ত বিলম্ব মাসুল ছাড়া বিল পরিশোধ করতে পারবেন। এই সময় সীমার কমপক্ষে ১৫ দিন আগে গ্রাহকের কাছে বিতরণকারী কোম্পানিকে বিল পৌঁছাতে হবে। ক্যাপ্টিভ পাওয়ার এবং শিল্প গ্রাহকের কো-জেনারেশন স্কিম অব্যাহতভাবে তিন মাস চালু থাকলে পরের তিন মাসের মধ্যে ওই গ্রাহকের তিন মাসের মোট বিলের ( সারচার্জ বা বিলম্ব মাসুল ব্যতীত) ওপর শুন্য দশমিক ২৫ শতাংশ হারে ছাড় (রিবেট) প্রদান করা হবে। দেশের জ¦ালানি সঙ্কট নিরসনে এলএনজি ব্যবহারের সিদ্ধান্তের পর থেকেই গ্যাসের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়। এর আগে বছরের মাঝামাঝি সময়ে বিতরণ কোম্পানিগুলো গড়ে ৭৫ ভাগ দাম বৃদ্ধির আবেদন নিয়ে কমিশনে আসে। কমিশন ওই আবেদনের শুনানির পর এলএনজি আমদানিতে অর্থেক সঙ্কট দূর করতে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে মনে করে। নানামুখী বিশ্লেষণের মধ্যে গত ৭ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর কাছে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির অনুমোদনের জন্য গেলে বিইআরসি চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলামকে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি না করার নির্দেশ দেন তিনি। এরপর বিইআরসি দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। কমিশনের সংবাদ সম্মেলনে বিইআরসি চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম বলেন, বিইআরসি চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ১৭ মার্চ গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি (জিটিসিএল) কমিশনে সঞ্চালন ট্যারিফ বৃদ্ধির আবেদন করে। এরপর ২০ মার্চ গ্যাস বিতরণ তিতাস, বাখরাবাদ, পশ্চিমাঞ্চল এবং কর্ণফুলি এবং ২১ মার্চ জালালাবাদ এবং সুন্দরবন গ্যাস বিতরণ কোম্পানি পৃথকভাবে তাদের বিতরণ চার্জসহ ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির আবেদন করে। কমিশন আবেদনগুলো বিবেচনা করে জুনে শুনানি করে। গ্যাসের উৎপাদন, এলএনজি আমদানি, সঞ্চালন এবং বিতরণ ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও সার্বিক দিক বিবেচনা করে বিইআরসি রেগুলেটরি আইন ২০০৩ এর ধারা ২২ (খ) এবং ৩৪ এ প্রদত্ত ক্ষমতা বলে কমিশন ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যমান মূল্যহার পরিবর্তন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের জারি করা ২৬ সেপ্টেম্বরের এসআরও এর মাধ্যমে ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে এলএনজি আমাদনির শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়া ওই বিভাগের জারি করা ৩ অক্টোবরের আলাদা দুটি এসআরও এর মধ্যেমে ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন পর্যায়ে সম্পূরক শুল্ক এবং আমাদিন পর্যায়ে অগ্রিম কর ও অগ্রিম মূসক প্রত্যাহার করা হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে বিদ্যমান গ্যান মূল্যহার বণ্টন, বিবরণী সংশোধন করে কমিশন আদেশ জারি করার সিদ্ধান্ত নেয়। কমিশন নিরাপত্তা জামানত, বিল পরিশোধ, বিল পৌঁছানোর বিষয়ে আগের নিয়মের পরিবর্তন করেছে। বিতরণ সিস্টেম লস নিরুপণের প্রচলতি পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এছাড়া গ্যাস সঞ্চালন এবং বিতরণ ব্যবস্থায় আরও কিছু সংস্কার বাস্তবায়নের আদেশ দেয়া হয়েছে। এই আদেশ ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে। এখন প্রতিদিন ৩২০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে। চলতি মাস থেকে এলএনজি জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করার কথা রয়েছে। এতে প্রতিদিন আরও অন্তত ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে। এতে করে সব মিলিয়ে তিন হাজার ১০০ কোটি টাকা ভর্তুকি প্রয়োজন হবে। সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের অন্য সদস্য রহমান মুরশেদ, মাহমুদ ইল হক ভূঁইয়া এবং মিজানুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
×