স্টাফ রিপোর্টার ॥ ২০৩০ সালে বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত। কৃষি বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের বিস্ময়কর উত্থান হয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে উন্নয়নের অনেক সূচকে ভারত ও পাকিস্তানকেও ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন মানব সম্পদ উন্নয়ন, মাথাপিছু আয় ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা তিনটি সূচকে ওসব দেশ থেকে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে।
মঙ্গলবার রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) অডিটরিয়ামে বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০১৮ উপলক্ষে আয়োজিত জাতীয় সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ, সবজি উৎপাদনে তৃতীয় এবং আলুতে আমরা উদ্বৃত্ত রয়েছি। কৃষির প্রতি সেক্টরে আমাদের ঈর্ষণীয় সাফল্য এসেছে। স্বাধীনতার পর ৩৪৮ মিলিয়ন ডলারের মাত্র তিনটি কৃষি পণ্য পাট, চা ও চামড়া রফতানি হতো। বর্তমানে কৃষি পণ্যের সংখ্যা ও রফতানি আয়ের পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে রফতানি আয় ৬০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। ২০৩০ সালে বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকারের ক্রমাগত সমর্থনে কৃষির সকল ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছে। খাদ্য শস্যের ক্ষেত্রে এ প্রবৃদ্ধির হার লক্ষ্যণীয়। ১৯৭২ সালে এ দেশে খাদ্য শস্যের উৎপাদন ছিল এক কোটি টন। বর্তমান তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার কোটি টনেরও ওপরে।
বিবিএস-এর উদ্ধৃতি দিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশের বড় তিনটি খাতের মধ্যে কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২.৯৭ শতাংশে। ১৯৯১ সালে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৫৬.৭ শতাংশ। বর্তমানে এ হার দাঁড়িয়েছে ২৪.৩ শতাংশে। সরকার রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে দেশকে মুক্ত রাখা, দূষণমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং দেশের পানি ও প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষার লক্ষ্যে সমন্বিত প্রয়াস অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান কৃষিমন্ত্রী। কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২০০৯ সালে ঘোষণা দিয়েছিলেন ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করবেন। আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে পারি আমরা সে লক্ষ্য অর্জনের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছি।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোঃ নাসিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে সম্মানিত অতিথির বক্তব্য দেন এফএও বাংলাদেশ প্রতিনিধি মি. রবার্ট ডি. সিম্পসন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম। মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় নেন ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক নাজমা শাহীন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) এর নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. মোঃ কবির ইকরামুল হক।
সেমিনারের আগে বাণিজ্যমন্ত্রী কৃষিমন্ত্রীসহ অন্যান্যরা আ কা মু গিয়াস উদ্দীন মিলকী অডিটরিয়াম চত্বরে তিন দিনের খাদ্য মেলা উদ্বোধন করেন। সকালে বিশ্ব খাদ্য দিবসের বর্ণাঢ্য র্যালি জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা থেকে শুরু হয়ে মেলা চত্বরে শেষ হয়। এবারের বিশ্ব খাদ্য দিবসের প্রতিপাদ্য ‘কর্ম গড়ে ভবিষ্যত, কর্মই গড়বে ২০৩০-এ ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব’। কৃষি মন্ত্রণালয় ও জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থা (এফএও) অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
