ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঢাবি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে ১৭ বিজ্ঞানীর গবেষণা

খুরা রোগ প্রতিরোধে নতুন টিকা উদ্ভাবন ॥ বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের সাফল্য

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১৭ অক্টোবর ২০১৮

খুরা রোগ প্রতিরোধে নতুন টিকা উদ্ভাবন ॥ বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের সাফল্য

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গবাদিপশুর খুরা রোগ প্রতিরোধে নতুন টিকা উদ্ভাবন করেছেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে ১৭ বিজ্ঞানী। নতুন উদ্ভাবিত এ টিকা প্রাণীর প্রটেক্টিভ লেভেলের চেয়ে বেশি এ্যান্টিবডি ও ভাইরাস আক্রমণ প্রতিহত করতে সক্ষম। দেশে বিদ্যমান খুরা রোগের তিন ধরনের ভাইরাসের সকল প্রকার সংক্রমণ থেকেই গবাদিপশুকে অত্যন্ত সফলভাবে সুরক্ষা দিতে সক্ষম, যার মূল্যও হবে বাজারে প্রচলিত টিকার চেয়ে অনেক কম। প্রতিটি টিকার মূল্য ৬০ থেকে ৭০ টাকা। মঙ্গলবার রাজধানীর মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে গবাদিপশুর খুরা রোগ প্রতিরোধে উদ্ভাবিত টিকা নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এ সময় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, খুরা রোগের কারণে বাংলাদেশে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১২৫ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু অর্থ ব্যয় করার পরও টিকার মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ এ্যান্টিজেন ব্যবহার না করার ফলে অকার্যকর হয়। তাছাড়া টিকার বিশাল ঘাটতি রয়েছে। ভাইরাস নিউট্রালাইজেশনে পরীক্ষা করে দেখা গেছে নতুন উদ্ভাবিত টিকা দেশের খুরা রোগের ভাইরাসের আক্রমণ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবে। সংবাদ সম্মেলনে নতুন এ আবিষ্কারের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন টিকা উদ্ভাবন টিমের প্রধান অধ্যাপক ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন। উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান, হেকেপ প্রকল্পের ডিরেক্টর গৌরাঙ্গ চন্দ্র মোহান্ত, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ইউসুফ আলী মোল্লা। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, দেশের অর্থনীতির জন্য প্রাণিসম্পদ অত্যন্ত সম্ভাবনাময় হলেও কিছু সংক্রামক রোগের কারণে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারছে না। অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে উদ্ভাবিত খুরা রোগের নতুন ট্রাইভ্যালেন্ট দেশের প্রাণিসম্পদে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এ টিকার দামও মানুষের সাধ্যের মধ্যে রাখা হয়েছে। পশুকে প্রতিটি টিকা দিতে গুনতে হবে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের উচ্চশিক্ষা মানোন্নয়ন প্রকল্পের (হেকেপ) আওতায় এ গবেষণা পরিচালিত হয় বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, এ গবেষণা পরিচালনার জন্য ল্যাব স্থাপনসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় মেটাতে অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগকে দুটি উপ-প্রকল্পের আওতায় হেকেপ কর্তৃক মোট ১০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে ১৭ গবেষক এই উদ্ভাবনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এ উদ্ভাবনের প্যাটেন্টের জন্য ইতোমধ্যে আবেদন করা হয়েছে। অধ্যাপক ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের দেশে আমদানিকৃত খুরা রোগের ভ্যাকসিনের অধিকাংশই কাজ করছিল না। আবার খুরা রোগের উপস্থিতিও বেশি। এজন্য আমরা গবেষণায় হাত দেই। আমাদের গবেষণা প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ও সরকারের সহযোগিতায় এবং হেকেপের তত্ত্বাবধায়নে ১০ কোটি টাকা ঋণ দিয়ে সহযোগিতা করে। প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা দেশের খুরা রোগের নমুনা সংগ্রহ করে জানতে পারি দেশে তিন ধরনের খুরা রোগের উপস্থিতি আছে। পরে গবেষণায় আমাদের রেজাল্ট আসে। তিনি জানান, উদ্ভাবিত এ টিকা প্রাণীর প্রটেক্টিভ লেভেলের চেয়ে বেশি এ্যান্টিবডি ও ভাইরাস আক্রমণ প্রতিহত করতে সক্ষম। দেশে বিদ্যমান খুরা রোগের তিন ধরনের ভাইরাসের সকল প্রকাশ সংক্রমণ থেকেই গবাদিপশুকে অত্যন্ত সফলভাবে সুরক্ষা দিতে সক্ষম, যার মূল্যও হবে বাজারে প্রচলিত টিকার চেয়ে অনেক কম। গত ১ অক্টোবর এই উদ্ভাবন ওসসঁহড়মবহরপ ধমবহঃং, ঃযবরৎ বীঢ়ৎবংংরড়হ ধহফ ধঢ়ঢ়ষরপধঃরড়হং, ভড়ৎ বভভবপঃরাব চৎড়ঢ়যুষধীরং ড়ভ ভড়ড়ঃ ধহফ সড়ঁঃয ফরংবধংব শিরোনামে বাংলাদেশের প্যাটেন্টস, ডিজাইনস ও ট্রেডমার্কস অধিদফতরে প্যাটেন্টের জন্য আবেদন করা হয়েছে। এছাড়া ভারতে প্যাটেন্ট আবেদন দাখিলের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন উল্লেখ করে এ অধ্যাপক বলেন, খুরা রোগ গবাদিপশুর একটি অন্যতম প্রধান সংক্রামক রোগ যা গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, শূকরসহ অন্যান্য প্রাণীকে আক্রমণ করে। এটি সমগ্র বাংলাদেশে ব্যাপ্ত এবং প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্যমতে, এ রোগের কারণে বাংলাদেশে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে। টিকা প্রদান এ রোগ নিয়ন্ত্রণের প্রধান উপায় এবং বাংলাদেশে প্রধানত আমদানিকৃত টিকা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। দেশে উৎপাদিত টিকাও ব্যবহৃত হয়। কিন্তু প্রায়ই টিকাগুলো কাজ করে না। কারণ টিকা উৎপাদনে যে ভাইরাস ব্যবহৃত হয় তা এদেশে বিদ্যমান ভাইরাস থেকে ভিন্ন কিংবা টিকাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ এ্যান্টিজেন থাকে না। তাছাড়া আমদানিকৃত টিকার প্রতিমাত্রার মূল্য ন্যূনতম ১২০-২০০ টাকা। টিকার এ উচ্চমূল্যের কারণে খামারিগণ তাদের গবাদি প্রাণীর জন্য টিকা প্রদানে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন।
×