ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ত্বকের সোরিয়াসিস একটি দুরারোগ্য রোগ

প্রকাশিত: ০৭:২৯, ১৬ অক্টোবর ২০১৮

ত্বকের সোরিয়াসিস একটি দুরারোগ্য রোগ

সোরিয়াসিস একটি দীর্ঘস্থায়ী চর্মরোগ। এই রোগ নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই হতে দেখ যায়। এখনও পর্যন্ত এই রোগের সুনির্দিষ্ট কারণ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। এক্ষেত্রে ত্বকের প্রথমে প্রদাহের সৃষ্টি হয় এবং সে স্থানে লালচে ভাব দেখা যায়। একই সঙ্গে ছোট ছোট গুটি বা চামড়া থেকে সামান্য উঁচুতে থাকে। ধীরে ধীরে এগুলো বড় হতে পারে। মাছের আঁইশের মতো উজ্জ্বল সাদা শুকনো চটলা দ্বারা গুটিগুলো আচ্ছাদিত থাকে। এই আঁশগুলো ঘষে ঘষে তুললে আঁশের নিচের চামড়ায় লালচে ভাব দেখা যায় এবং তা থেকে রস-কষ ঝড়তে পারে এবং সেখান থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রক্তক্ষরণও হতে থাকে। সাধারণভাবে একজন সোরিয়াসিসের রোগীকে দেখলে অন্যরা ভয় পেয়ে যান এবং অনেকেরই ধারণা এটা বুঝি ছোঁয়াচে। আসলে এটা কোনক্রমেই ছোঁয়াচে রোগ নয়। এটা কোন জীবাণুজনিত রোগও নয়। তাই তার থেকে অন্য কারও হওয়ার কোন ঝুঁকি নেই। এটা তেমন বড় কোন শারীরিক সমস্যার সৃষ্টিও সাধারণত করে না। কাদের হবে : নারী-পুরুষ উভয় ক্ষেত্রেই সমহারে হতে দেখা যায়। যে কোন বয়সেই হতে পারে। তবে ১৫ থেকে ৪০ বছরে মধ্যে বেশি হতে দেখা যায় তবে এর সুনির্দিষ্ট কারণ। এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। এক্ষেত্রে জেনেটিক বা পারিবারিক প্রভাব অবশ্যই আছে বলে প্রমাণিত হয়েছে এবং অনেক কিছুর প্রভাবে বাড়তে দেখা গেছে যেমন আঘাত, ইনফেকশন, দুশ্চিন্তা, আবহাওয়ার পরিবর্তন, নানারকম ওষুধ যেমন, কোন ম্যালেরিয়ার ওষুধ, ব্লাড প্রেসারে ওষুধ, হরমোন এবং কার্টিসেন জাতীয় ওষুধ সেবন প্রাথমিকভাবে উপকার পেলেও পরবর্তীকালে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। উপসর্গ : সোরিয়াসিসের উপসর্গ ত্বকের কোন স্থানেই দেখা দিতে পারে। ত্বক ছাড়া নখেও দেখা দিতে পারে। ত্বকের যে সমস্ত এলাকা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়, তাহলো কনুই, হাঁটু, মাথার চামড়া, কোমরের নিচের মধ্যখানের স্থানে ইত্যাদি। তবে এটি শরীরের যে কোন স্থানের যে কোন চামড়ায়ই হতে পারে। সাধারণত এ রোগে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য উপসর্গই থাকে না। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে সামান্য চুলকানি ভাব থাকতে পারে। তবে যাদের এ রোগ হয় তারা লোকসমাজে যেতে ইতস্তত করেন, যাদের কাছে যান তারাও দেখলে ছোঁয়াচে ভেবে ভয়ে দূরে থাকতে চান। কারণ চামড়া উঠতে উঠতে এমন এক ভয়ঙ্কর অবস্থার সৃষ্টি হয় যা কি না রোগীর জন্য এক তীব্রতর অবস্থার সৃষ্টি করে। আসলে কিন্তু এ রোগটি কোন অবস্থাতেই ছোঁয়াচে নয়। প্রথমে ত্বকে প্রদাহের সৃষ্টি হয়, তারপর লালচে ভাব ধারণ করে, সেখানে ছোট ছোট গুটি দেখা দেয়, উপরের ত্বকে চটলার আকারে মাছের আঁশের মতো শুকনো চামড়া দেখা দেয় যা কি না টানলে চটলা আকারে উঠে আসে। খুঁটে বা টেনে এই চামড়া তুললে লালচে দেখা যায়। যা থেকে রস ঝরে এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রক্তক্ষরণ দেখা যায়। সোরিয়াসিসের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। যেমন হাত ও পায়ের গিরায় গিরায় বাতব্যথার মতো ব্যথা দেখা দিতে পারে, যাকে বলা হয় সোরিয়াটিক আর্থোপ্যাথি। এছাড়া হাত ও পায়ের তালুতে পুঁজ ভর্তি দানা দেখা দিতে পারে, যাকে বলা হয় প্যাস্টুলার সোরিয়াসিস। আবার ছোট ছোট দানার আকারে লালচে আঁশযুক্ত সোরিয়াসিস যা সারা দেহসহ হাত-পা পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে, যাকে বলা হয় গাটেট সোরিয়াসিস। সোরিয়াসিসে নখও আক্রান্ত হতে পারে। সেক্ষেত্রে নখের রঙ হলদে হতে পারে এবং নখের গায়ে ছোট ছোট দানার আকারে ফোঁটা দেখা যায়। নখ পুরো হয়ে যেতে পারে, নখের গায়ে ফাটা ফাটা দাগ দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া সোরিয়াসিসে আর একটি জটিলতা দেখা দিতে পারে যাকে বলা হয় সোরিয়াটিক এরিথ্রোডারমা, যাতে সারা শরীরের ত্বকে প্রদাহ দেখা দেয় এবং সারা শরীরের ত্বক লালচে হয়ে ফুটে ওঠে। তার সারা শরীর থেকে শুকনো আঁশ ঝরে পড়তে থাকে। এ অবস্থায় রোগীর জীবন আশঙ্কাযুক্ত হয়ে পড়ে এবং তাকে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। সোরিয়াসিস যখন মাথায় দেখা দেয় তখন তাকে বলা হয় স্কাল্প সোরিয়াসিস। আমাদের দেশে কেন, পৃথিবীজুড়েই ব্যাপক আকারে দেখা যায়। তবে অনেকেই এটাকে মাথার ত্বকের ছত্রাকজনিত চর্মরোগ (টিনিয়া ক্যাপিটিস) ভেবে ভুল করে থাকেন। এক্ষেত্রে মাথার ত্বক থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি আঁশ উঠতে থাকে এবং আঁশের নিচের ত্বকে লালচে প্রদাহজনিত ভাব দেখা যায়। তবে মাথায় তেমন কোন চুলকানি থাকে না। অল্প সামান্য থাকলেও অনেকে আবার খুশকি ভেবেও ভুল করে থাকেন। চিকিৎসা : চিকিৎসায় এটি সম্পূর্ণরূপে সেরে যাবে একথা বলা ঠিক সঙ্গত হবে না। তবে বর্তমানে কিছু কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি বেরিয়েছে যা প্রচুর সাফল্য আনতে সক্ষম হয়েছে। এর মধ্যে চাঁধ থেরাপি অন্যতম মলমের মধ্যে ক্যালসিপট্রিয়ল ও ক্লোবেটাসল প্রপায়নেট অন্যতম। ডা. দিদারুল আহ্সান চর্ম এলার্জি ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ ০১৭১৫-৬১৬২০০
×