স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দলগত শিরোপা জিততে হলে চাই ভাল দলগঠন। এজন্য চাই দক্ষ, কার্যকর ও কুশলী ফুটবলার। সেই সঙ্গে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও কিছুটা ভাগ্যের পরশও। ঘরোয়া পেশাদার বাংলাদেশ লীগের পরিসমাপ্তির পর আবারও চলে এসেছে নতুন মৌসুম। ফুটবলাররা আবারও ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। তবে তার আগে কিছু আনুষ্ঠানিকতা বাকি ছিল। সেটা হচ্ছে নতুন মৌসুমের দল বদল। সোমবার ছিল দল বদলের শেষ দিন। এদিন দল বদল করে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। টিম বিজেএমসি, চট্টগ্রাম আবাহনী, রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি, ঢাকা আবাহনী, আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ, শেখ জামাল ধানম-ি এবং ব্রাদার্স ইউনিয়ন লিমিটেড।
অনেকটা অনাড়ম্বরভাবেই দল বদলের আনুষ্ঠানিকতা সেরেছে ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। এমিলি-মিঠুন-তকলিসদের মতো স্থানীয় ফুটবলারের পাশাপাশি চার বিদেশী ফুটবলার নিয়েছে তারা। অথচ লীগ চ্যাম্পিয়ন হবেÑ এই কথাটা বলার সাহস নেই তাদের! দলীয় ম্যানেজার আমিরুল ইসলাম বাবু তেমনটাই জানালেন, ‘এবার মোহামেডানের কোন লক্ষ্য নেই। তবে ফেডারেশন কাপের দু’একটা ম্যাচ দেখে তারপর একটা লক্ষ্য স্থির করব।’
যেখানে বসুন্ধরা কিংসের মতো পেশাদার লীগে নবাগত দল সাহস নিয়ে বলতে পারে লীগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ব্যাপারে, সেখানে মোহামেডানের মতো ঐতিহ্যবাহী দল চ্যাম্পিয়ন হতে ভয় পায়!
ক্লাবটির ম্যানেজমেন্টের ভাষ্য, গতবার মোহামেডান যে রকম পারফর্মেন্স করেছে সে অনুযায়ী ক্লাবটির লীগে দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্থানে থাকার কথা ছিল। কিন্তু ভাগ্যেদোষে তারা জেতা ম্যাচও হেরেছে বা ড্র করেছে। চ্যাম্পিয়ন হতে যেমন শক্তিধর দল গড়তে হয় তেমনি ভাগ্যের সহায়তাও লাগে। তবে দলের সম্ভাব্য অধিনায়ক জাহিদ হাসান এমিলি বলেন, ‘গতবার দু’জন বিদেশী ছিল। একজনের রিপ্লেসমেন্টে আরেকজন নামতে পারত। এবার চার বিদেশী খেলবে। আমাদের সব ক্লাবের স্থানীয় ফুটবলাররা উনিশ-বিশ। খুব একটা পার্থক্য নেই। চ্যাম্পিয়ন হব সেটা বলব না। তবে যদি আমাদের স্থানীয়দের ফিটনেস লেভেল ঠিক থাকে আর বিদেশীরা ভাল খেলতে পারে। তবে আমরা মৌসুমের একটা দুইটা শিরোপা জিতেও যেতে পারি।’
যেহেতু স্ট্রাইকিং জোনে একজন বিদেশী ফুটবলার আছে। তাই স্থানীয় ফুটবলারদের জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জ। এমিলি বলেন, ‘আমি বলব না যে আমাদের খেলার সুযোগ নেই। আমাদের স্ট্রাইকিং পজিশনে এক বিদেশী খেলোয়াড়। স্থানীয়দের মধ্যে আমি আছি, তকলিস, মিঠুন ও বাপ্পী আছে। এটা ঠিক যে স্ট্রাইকিং পজিশনে চ্যালেঞ্জ আছে।’
যেহেতু ঘরোয়া ফুটবলে ক্লাবগুলোর পার্থক্য গড়ে দেয় বিদেশীরাই। তাই এবার মোহামেডান চেষ্টা করেছে স্থানীয় উদীয়মান ফুটবলার আর অভিজ্ঞদের পাশাপাশি যতটা সম্ভব ভালমানের বিদেশী ফুটবলার সংগ্রহ করার। গত বছরের এক মাত্র বিদেশী ফুটবলার কিংসলে। তিনজন নতুন। এশিয়ান কোটায় জাপানী এক ফুটবলার আনা হয়েছে (উরয়ু নাগাতা)। আবাহনী থেকে আনা হয়েছে গাম্বিয়ান ল্যান্ডিং ডারবোকে। নতুন ব্রিটিশ কোচ ক্রিস্টোফার ইভান্সের অধীনে প্রায় একমাস ধরে অনুশীলন করছেন এমিলিরা। তবে একটিও প্রস্তুতি ম্যাচ খেলা হয়নি তাদের। তবে আর দু’একদিন অনুশীলন শেষে ফিটনেস লেভেল দেখে একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে সাদা-কালোরা। দলের ফুটবলাররা পরিশ্রম করছে। ফেডারেশন কাপে খেলোয়াড়দের ফিডব্যাক দেখে তারপর একটা লক্ষ্য স্থির করার কথা জানিয়েছেন ক্লাবটির ম্যানেজার। মোহামেডানের হোম ভেন্যু বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম। গতবার পেশাদার লীগে চতুর্থ হয়েছিল সাদা-কালোরা।
মোহামেডান দলÑ এমিলি, মিঠুন, তকলিস, বিপু, লিংকন, জহিরুল, মিন্টু শেখ, খোকন মিয়া, মিশু, ল্যান্ডিং ডার্বোয়ে (গাম্বিয়া), শরিফ, রাব্বি, সোহাগ, কোমল, মিঠু, সিফাত, জাভেদ, ওরিও নাগাতা (জাপান), এনকোচা কিংসলে (নাইজিরিয়া), গালিব নেওয়াজ, সরোয়ার, পাশবন, অনীক ঘোষ, আরেফিন রুবেল, সাইফ, মুন্না, সাইরিল ওরিয়াকো (নাইজিরিয়া), বাপ্পী, আল-আমীন, সালাউদ্দিন রুবেল, ফুয়াদ সাফাত, রাকিব চৌধুরী, ইসলাম।
বাফুফের বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দলের হয়ে কোচিং করিয়ে দীর্ঘদিন পর আবারও ক্লাব কোচিংয়ে ফিরলেন সৈয়দ গোলাম জিলানী। যোগ দিয়েছেন রহমতগঞ্জে। মজার বিষয়Ñ সর্বশেষ ক্লাব ফুটবলে কোচ ছিলেন এই রহমতগঞ্জেরই, ২০০৮ সালে!
চট্টগ্রাম আবাহনীতে আছেন বেশ কজন তারকা খেলোয়াড়। যেমনÑ কেষ্ট কুমার বোস, মোনায়েম খান রাজু, আবদুল বাতেন মজুমদার, কৌশিক বড়ুয়া, মনসুর আমিন, অরূপ কুমার বৈদ্য, রাসেল মাহমুদ।
রহমতগঞ্জের নিজস্ব ক্লাব মাঠে গরুর হাট বসায় মাঠ অনুশীলনের অনুপযোগী নেই। ফলে খেলোয়াড়রা অন্যত্র অনুশীলন করছি মাসখানেক ধরে। অনুশীলনের ঘাটতি থাকায় রহমতগঞ্জ ফেডারেশন কাপ নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী নয়। জিলানী বলেন, ‘আমাদের ভাবনা লীগ নিয়ে। আমরা লীগে সম্মানজনক ফল করতে চাই।’
ক্লাবটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ হামিদ সবুজ বলেন, ‘এবার আমাদের দলে ৩১ ফুটবলার নিবন্ধন করিয়েছি। এদের অধিকাংশই পুরনো ও সিনিয়র খেলোয়াড়। চারজন বিদেশী নিয়েছি। আমরা কখনও পাতানো ম্যাচ খেলিনি, এবারও খেলব না। আসলে লীগের মাঝপথে বড় দলগুলো আমাদের খেলোয়াড়দের গোপনে চুক্তিবদ্ধ করে ফেলে। ফলে তারা মনযোগ দিয়ে খেলে না। এজন্য রহমতগঞ্জ প্রথম পর্বে ভাল করলেও দ্বিতীয় পর্বে খারাপ করে। এভাবেই আমরা সবসময় লীগে প্রত্যাশিত ফল করতে পারি না।’