ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গরু মহিষের শিং ও হাড়ে তৈরি হচ্ছে বোতাম শোপিস

বর্জ্য দিয়েই আশার আলো

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ১৬ অক্টোবর ২০১৮

বর্জ্য দিয়েই আশার আলো

তাহমিন হক ববী, নীলফামারী ॥ বহুকাল ধরে অবহেলা করে ফেলে দেয়া সেই গরু, মহিষের হাড় ও শিং আজ আর অবহেলিত নয়। এসব ফেলে দেয়া বর্জ্য আশার আলো জগিয়ে তুলেছে। এই বর্জ্যে নয়া প্রযুক্তিতে প্রক্রিয়াজাত করে যোগ করেছে উন্নতমানের পণ্য বোতাম বা শোপিস। আশ্চর্য মনে হলেও এটি এখন দৃশ্যমান। উত্তরবঙ্গের নীলফামারীর সৈয়দপুরে এই গবাদী পশুর শিং ও হাড়ে তৈরি হচ্ছে বোতাম বা শোপিস। দেশীয় বাজারে এর কদর এখনও জমে না উঠলেও এই বোতাম রফতানি হচ্ছে জার্মান, অস্ট্রিয়া, চীন ও স্পেনসহ একাধিক দেশে। এই বোতাম বা শোপিস আকর্ষণীয় বাহারী ডিজাইনের ও টেকসই। যা ব্যবহার করা হচ্ছে শার্ট, সাফারী, কোট ও প্যান্টসহ বিভিন্ন পোষাকে। রফতানিতে প্রতিবছর প্রায় ২০ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হচ্ছে। এ্যাগ্রো রিসোর্স কোম্পানি লিঃ। এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক নজরুল ইসলাম। তিনি সাংবাদিকদের জানান, ১৯৮০ সালে সৈয়দপুর শহরের কুন্দল নামক এলাকায় প্রায় ৬০ শতক জমির ওপর ছোট একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে। বর্তমানে তিনটি কারখানা। বিনিয়োগ করা হয়েছে প্রায় ৩২ কোটি টাকা। শহর বা গ্রামে এক সময় গরু মহিষের জবাইয়ের পর শিং ও হাড় ফেলে দেয়া হতো। এখন আর সেটি কেউ ফেলে দেয় না। প্রতিটি এলাকায় লোক নিয়োগ করা রয়েছে। তারা ওই সব সংগ্রহ করে এ্যাগ্রো রিসোর্স কোম্পানিতে নিয়ে আসে। এরপর প্রক্রিয়াজাত করে তা দিয়ে বোতাম ও শোপিস তৈরি করা হচ্ছে। নজরুল ইসলাম জানান, সৈয়দপুরে শহরের নতুন বাবুপাড়া মহল্লায় ও ঢাকার মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় তার অফিস রয়েছে। বোতাম বা শোপিস তৈরির পর তিনি দেখেন এক একটি বোতামে খরচ পরছে প্রায় ৩ টাকা থেকে ৮ টাকা পর্যন্ত। দেশের বাজারে এসবের মূল্য তেমন একটা মিলে না বলে বিদেশে রফতানি করছে। ১৯৯০ ও ১৯৯১ সালে তিনি রফতানিখাতে পর পর দুইবার সিআইপি (বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি) হিসেবে সম্মানিতও হয়েছেন। বোতাম শোপিসের পাশাপাশি কৃষি জমিতে অধিক ফসল উৎপাদনে তার ফ্যাক্টরির তৈরি হাড়ের গুড়ার সার দেশের বাজারে কৃষকদের কাছে অতি পরিচিতি লাভ করেছে। এদিকে তার এই সফলতার পাশাপাশি তিনি অভিযোগ করেন এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী উন্নতমানের শিং ও হাড় প্রক্রিয়াজাত না করে ভুয়া কাগজ তৈরি করে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করছে। যা ব্যবহার করা হচ্ছে বুড়িমারী সীমান্ত পথসহ বিভিন্ন স্থল বন্দর। এর ফলে আর্কষণীয় পণ্য উৎপাদন করেও কাঁচামালের অভাবে সুনাম ধন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও প্রায় বন্ধের উপক্রম হতে চলেছে। ওইসব অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে করে অবৈধভাবে ও অসত্য কাগজপত্র আন্ডার ইন ভয়েজের মাধ্যমে যেতে না পারে এবং কোন স্থলবন্দর ব্যবহারের সুযোগ না পায় সেটির দাবি জানিয়ে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো, বাংলাদেশ ফেডারেশন চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ সভাপতি, বুড়িমারী ও বেনাপোল স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষকে।
×