ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জরিমানার বিধানসহ গণমাধ্যম কর্মী আইন অনুমোদন

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৬ অক্টোবর ২০১৮

জরিমানার বিধানসহ গণমাধ্যম কর্মী আইন অনুমোদন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে ‘গণমাধ্যম কর্মী (চাকরির শর্তাবলী) আইন, ২০১৮’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গণমাধ্যম কর্মীদের চাকরি সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়মের জন্য এই শাস্তির বিধান সংযুক্ত করা হয়েছে খসড়া এই আইনে। সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, এই আইনটি ভিন্নভাবে ছিল। ‘দ্য নিউজ পেপার এমপ্লয়িজ কন্ডিশন সার্ভিস এ্যাক্ট-১৯৭৪’ এই আইনের আওতায় এগুলো চলত। এটার সঙ্গে শ্রম আইনের ‘ওভারল্যাপিং’ হয়। সাংবাদিকদের শ্রম আইনের আওতায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং সংজ্ঞার মধ্যে শ্রমিক হিসেবে চিহ্নিত (ডিফাইন) করা হয়েছিল। ওই অংশটি ওখান থেকে বেরিয়ে এখানে এসেছে। যারা গণমাধ্যমে কাজ করবে তারা গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে পরিচিত হবেন। শফিউল আলম বলেন, এই আইনে কোন ধারা বা আইনের অধীনে প্রণীত বিধি লঙ্ঘন করলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এ জন্য সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা ও সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা যাবে। জরিমানা আদায় না হলে আদালত জেল দিতে পারবে। খসড়া আইনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, গণমাধ্যম কর্মীর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, গণমাধ্যমে কর্মরত পূর্ণকালীন সাংবাদিক, কলাকৌশলী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, কর্মচারী বা নিবন্ধিত সংবাদপত্রের মালিকাধীন ছাপাখানা এবং বিভিন্ন বিভাগে নিয়োজিত কর্মী। সম্প্রচার কর্মী হচ্ছেন, সম্প্রচারের কাজে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত গণমাধ্যমের কর্মী। প্রযোজক, পা-ুলিপি লেখক, শিল্পী, ডিজাইনার, কার্টুনিস্ট, ক্যামেরাম্যান, অডিও ও ভিডিও এডিটর, চিত্র সম্পাদক, শব্দ ধারণকারী, ক্যামেরা সহকারী, গ্রাফিক্স ডিজাইনারসহ পেশাজীবীরা যারা এই কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের কলাকুশলী বলা হবে। আইনে পরিদর্শন কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, পরিদর্শন কমিটির সদস্যরা পরিদর্শক হিসেবে গণ্য হবেন। পরিদর্শন কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে প্রত্যেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব চাকরিবিধি থাকবে, যা হতে হবে এই আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি বলেন, প্রভিডেন্ট ফান্ড গঠন করতে হবে। নিয়োগের একবছর পর থেকে ভবিষ্যত তহবিলে মাসিক চাঁদা দিতে পারবেন। আগে দুই বছর চাকরি হলে ভবিষ্যত তহবিলে চাঁদা দিতে পারতেন। সর্বনিম্ন ৮ ও সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ অর্থ এই তহবিলে জমা রাখা যাবে। আগে ৭ শতাংশ অর্থ জমা রাখা যেত। মালিককে সমহারে টাকা রাখতে হবে। নতুন আইনে সপ্তাহে কর্মঘণ্টা ৪৮ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৩৬ ঘণ্টা করা হয়েছে। এর থেকে বেশি কাজ করালে ওভারটাইম দিতে হবে। আগে ১০ দিনের নৈমিত্তিক ছুটি বাড়িয়ে ১৫ দিন করা হয়েছে। অর্জিত ছুটি ৬০ দিনের বদলে ১০০ দিন করা হয়েছে। ১১ দিনে একদিন করে জমা হবে। প্রত্যেক গণমাধ্যমকর্মী চাকরির ১৮ ভাগের এক ভাগ সময় পূর্ণ ওয়েজে অসুস্থতাজনিত ছুটি পাবেন। এক্ষেত্রে নিবন্ধিত রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকের প্রত্যয়নপত্র থাকতে হবে। গণমাধ্যম কর্মীরা এককালীন বা একাধিকবার সর্বোচ্চ ১০ দিন উৎসব ছুটি পাবেন। নারীদের জন্য সরকারী বিধি অনুযায়ী অর্থাৎ ছয় মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি পাবেন। আগে আট সপ্তাহ মাতৃত্বকালীন ছুটি পেতেন নারী গণমাধ্যমকর্মীরা। খসড়া আইন অনুযায়ী গণমাধ্যম কর্মীরা তিন বছর পর পর পূর্ণ বেতনসহ শ্রান্তি বিনোদন ছুটি পাবেন। গণমাধ্যমকর্মী বিধিমালা অনুযায়ী স্বাস্থ্য বীমা সুবিধা পাবেন। গণমাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে নারীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রচলতি আইন অনুসরণ করে নীতিমালা প্রণয়ন করে অভিযোগ নিরসন পদ্ধতি প্রবর্তন করতে হবে। তিনি বলেন, গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য প্রজ্ঞাপন দিয়ে সরকার ওয়েজবোর্ড গঠন করবে। ওয়েজবোর্ডের সিদ্ধান্ত সকল গণমাধ্যম মালিককে পালন করতে হবে। যদি কোন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের নিকট একজন গণমাধ্যম কর্মীর বকেয়া পাওনা থাকে তবে গণমাধ্যম কর্মী বা তার লিখিত ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তি, মৃত গণমাধ্যম কর্মীর ক্ষেত্রে তার পরিবারের কোন সদস্য বকেয়া পাওনা আদায়ে যথোপযুক্ত আদালতে মামলা করতে পারবেন। নতুন আইনে গণমাধ্যম কর্মীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি, এটি বিধি দিয়ে নির্ধারণ করা হবে।
×