ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কমিশন গঠনের প্রস্তাব রেখে সম্প্রচার আইন অনুমোদন

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৬ অক্টোবর ২০১৮

কমিশন গঠনের প্রস্তাব রেখে সম্প্রচার আইন অনুমোদন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ কমিশন গঠনের প্রস্তাব রেখে ‘সম্প্রচার আইন-২০১৮’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, আইনটি নতুন। যারা স্টেকহোল্ডার তাদের সঙ্গে অনেক আলোচনা করে আইনটি তৈরি করা হয়েছে। খসড়া আইনে অনলাইন গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে। একটি কমিশন করার প্রস্তাব আছে। কমিশনের সংজ্ঞা দেয়া আছে। ক্যাবল অপারেটর, ক্যাবল টেলিভিশন চ্যানেল, ক্যাবল টেলিভিশন নেটওয়ার্কেরও সংজ্ঞা দেয়া আছে। খসড়া আইনে ৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিশন গঠনের প্রস্তাব রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটার জন্য একটা সার্চ (অনুসন্ধান) কমিটির বিধানও রয়েছে। এই সার্চ কমিটি হবে ৫ সদস্য বিশিষ্ট, তাদের যোগ্যতা বলে দেয়া আছে। সার্চ কমিটি যে সুপারিশ করবে সেটা মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করা হবে। রাষ্ট্রপতি তাদের মধ্য থেকে একজন চেয়ারম্যানসহ কমিশন করে দেবেন। এর মধ্যে একজন নারী কমিশনারও থাকবেন। কমিশনারদের যোগ্যতাও উল্লেখ করা হয়েছে আইনে। যদি কেউ বাংলাদেশে নাগরিক না হন, জাতীয় সংসদ সদস্য বা স্থানীয় সরকারের যে কোন স্তুরের জনপ্রতিনিধির জন্য নির্ধারিত কোন পদে নির্বাচিত হন, কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ খেলাপী ঘোষিত হলে, দেউলিয়া বা অপ্রকৃতস্থ হলে, নৈতিক স্খলনের দায়ে যদি দুই বছরের কারাদ-ে দ-িত হন, যদি প্রজাতন্ত্রের কোন লাভজনক পদে কর্মরত থাকেন, কোন সম্প্রচার বা গণমাধ্যম শিল্প সংক্রান্ত কোন ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যদি সম্পৃক্ত থাকেন, কোন সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানের চাকরি যদি থাকেন- তবে তারা কেউ কমিশনার হতে পারবেন না। কমিশনার হতে হলে সম্প্রচার, গণমাধ্যম শিল্প, গণমাধ্যম শিক্ষা, আইন, জনপ্রশাসন ব্যবস্থাপনা, ভোক্তা বিষয়াদি বা ডিজিটাল প্রযুক্তির ওপর বিশেষ জ্ঞান ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। চেয়ারম্যান কমিশনারের একই যোগ্যতা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের মেয়াদ হবে নিয়োগের তারিখ থেকে ৫ বছর বা ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত তারা কাজ করতে পারবেন। তাদের অপসারণের প্রভিশনও রাখা আছে খসড়া আইনে। শারীরিক বা মানসিকভাবে যদি দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হন, কমিশন ও রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর এমন কোন কাজে লিপ্তসহ এমন ৬টি কাজের জন্য অযোগ্যতা প্রমাণ করে অপসারণের সুযোগ আছে। তিনজন সদস্যের উপস্থিতিতে কমিশনের কোরাম হবে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, কমিশনের কার্যাবলীর মধ্যে রয়েছে- সম্প্রচার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী ও গতিশীল করা, সম্প্রচার মাধ্যমের মানোন্নয়নে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা। সম্প্রচার মাধ্যমে মতপ্রকাশ ও সম্প্রচার মাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক রীতি ও মানদ- অনুসরণ করা। সম্প্রচার ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিযোগিতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির পথ সুগম করা। এছাড়া নতুন লাইসেন্স ও নিবন্ধন দিতে নির্দেশনা প্রদান; টেলিভিশন, বেতার, ইন্টারনেট ইত্যাদি সম্প্রচার মাধ্যম ও সম্প্রচার যন্ত্রপাতির জন্য সম্প্রচারকারীর অনুকূলে লাইসেন্স ইস্যুর জন্য সুপারিশ করা, সরকারের অনুমতি পেলে কমিশন লাইসেন্স ইস্যু করবে। সম্প্রচার লাইসেন্স ও অনলাইন গণমাধ্যম নিবন্ধন দেয়ার বিষয়ে কমিশনের একক কর্তৃত্ব থাকবে। অনলাইনের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে- বাংলাদেশের ভূখ- থেকে হোস্টিং করা বাংলা, ইংরেজী বা অন্য কোন ভাষায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ইন্টারনেটভিত্তিক রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র ও ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে সম্প্রচারের উদ্দেশে ব্যবহৃত স্থির ও চলমান চিত্র, ধ্বনি ও লেখা বা মাল্টিমিডিয়ার অন্য কোন রূপে উপস্থাপিত তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ বা সম্প্রচারকারী বাংলাদেশী নাগরিক বা বাংলাদেশে নিবন্ধিত সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকে বোঝাবে। কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স অনুযায়ী ক্ষমতাপ্রাপ্ত না হলে যন্ত্রপাতি আমদানি, বিক্রি, বিক্রির প্রস্তাব, বিক্রির উদ্দেশে নিজের অধিকার রাখা এই কাজগুলো করতে পারবেন না। লাইসেন্স লাগবে। নির্ধারিত ফি দিয়ে লাইসেন্স ও নিবন্ধন নবায়ন করতে হবে। সম্প্রচার মাধ্যম বা অনলাইন গণমাধ্যমের বিষয়ে ভোক্তা কমিশনের কাছে নালিশ করতে পারবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কমিশন সর্বোচ্চ ৩০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করবে। দুই বা ততোধিক সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোন ঝামেলা বা বিরোধ হয় তবে কমিশন এই নিষ্পত্তি করতে পারবে। এর বিরুদ্ধে সরকারের কাছে আপীল করা যাবে। খসড়া আইনে কন্টেন্ট সম্পর্কে বলা হয়েছে- সম্প্রচারের উদ্দেশ্য ব্যবহৃত যে কোন অডিও, টেক্সট, উপাত্ত, চিত্র বা নক্সা (স্থির বা চলমান), দৃশ্যমান(ভিজ্যুয়াল) উপস্থাপনা, সঙ্কেত বা যে কোন ধরনের বার্তা বা এগুলো যে কোন এরূপ সংমিশ্রণ যা ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে সৃষ্ট প্রক্রিয়াজাত সংরক্ষিত, উদ্ধারকৃত বা কমিউনিকেটেড হতে সক্ষম। কোন কিছু সম্প্রচার করতে অনুমতি বা লাইসেন্স লাগবে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, কোন সম্প্রচারকারী বা অনলাইন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান আলোচনা অনুষ্ঠানে বিভ্রান্তিকর ও অসত্য তথ্য উপস্থাপন ও প্রচার, বিভিন্ন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে যথা রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের ভাষণ, জরুরী আবহাওয়া বার্তা- এ জাতীয় নির্দেশ অমান্য করা। মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনা, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি ও রাষ্ট্রীয় আদর্শ-নীতিমালা পরিপন্থী অনুষ্ঠান ও বিজ্ঞাপন প্রচার করলে অপরাধী হবেন। এমন ২৪টি কাজ করলে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে শাস্তি সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদ- বা সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা অর্থদ- বা উভয় দ-ে দ-িত হবেন। অপরাধ সংগঠন চলমান রাখলে প্রতিদিনের জন্য সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা হবে। এই শাস্তি সম্প্রচারকারীর জন্য প্রযোজ্য হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আদালত যদি বলে তিনি বিকৃত মস্তিষ্ক, আদালত যদি ২ বছর বা এর বেশি শাস্তি দেয়, দ-িত হওয়ার পর যদি ৫ বছর পার না হয়, আদালত কর্তৃক দেউলিয়া ঘোষিত হয়, ঋণখেলাপী হিসেবে চিহ্নিত হয়, ৫ বছরের মধ্যে যদি কমিশন লাইসেন্স বা নিবন্ধন বাতিল করে থাকে তবে লাইসেন্স পাবেন না। এই ব্যক্তিরা যদি লাইসেন্স না নিয়ে সম্প্রচার কার্যক্রম চালিয়ে যান তবে সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদ- বা সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা অর্থদ- বা উভয়দ-। এই অপরাধ চলমান রাখলে দৈনিক এক লাখ টাকা জরিমানা করা যাবে। তিনি বলেন, খসড়া আইনানুযায়ী বিনা পরোয়ানায় কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না, এগুলো জামিনযোগ্য অপরাধ।
×