ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

চিনি মুক্ত থাকতে

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১৫ অক্টোবর ২০১৮

চিনি মুক্ত থাকতে

আপনার প্রতিদিনের খাদ্যাভাসের সবচেয়ে খারাপ জায়গাটি হলো চিনি খাওয়া। এর চেয়ে ক্ষতিকর কিছু এত বেশি ভালবেসে আপনি খান না। ওবেসিটি, টাইপ টু ডায়াবেটিস, হৃদযন্ত্রের অসুস্থতা, দাঁতক্ষয়- সবকিছুই আপনাকে দিতে পারে চিনি। চিনি প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যবহৃত রাসায়নিকের কারণে হতে পারে ক্যান্সার। ফল-সবজিতে যে চিনি পাওয়া যায় তাকে স্বাস্থ্যকর মানা হয়, কারণ এতে প্রাকৃতিক চিনির সঙ্গে পর্যাপ্ত ভিটামিন ও মিনারেল থাকে। প্রক্রিয়াজাত চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবারের চিনিই শরীরের জন্য বেশি ক্ষতিকর। বিশেষজ্ঞদের মতে, নারীদের জন্য সর্বোচ্চ ২৫ গ্রাম, পুরুষদের জন্য ৩৭ গ্রাম চিনি গ্রহণ করা যেতে পারে। কিছু বুদ্ধি খাটিয়ে রোজকার খাবারে চিনি গ্রহণের পরিমাণ কমানো যেতে পারে। চিনি ভর্তি পানীয় ছাড়ুন সোডা, এনার্জি ড্রিংক, কোমল পানীয়, ফলের কৃত্রিম রসে প্রচুর পরিমাণ চিনির ব্যবহার করা হয়। পানীয়ের সঙ্গে যে চিনি আমরা গ্রহণ করি তা দ্বিগুণ ক্ষতিকর। কারণ চিনি তো শরীরে যাচ্ছেই, উল্টো পানীয়তে পেট ভরে না। ফলে পেট ভরাতে আরও ক্যালরি গ্রহণ করা হয়। বাড়তি এই ক্যালরি আমাদের ওজন বাড়ায়। পানীয়ের বদলে অন্য অনেক স্বাস্থ্যকর উপায় আছে তৃষ্ণা মেটানোর। খাওয়ার পর অনেকের কোমল পানীয় পান করতে মন চায়। এক্ষেত্রে ঠা-া পানি পানেও প্রায় একই কাজ হবে, পানীয় গ্রহণের ইচ্ছা কমে যাবে। লেবুর শরবত, কম চিনি অথবা চিনি ছাড়া খাওয়া যেতে পারে। এছাড়া গরমের দিনে শসা, পুদিনার রসের মতো অনেক পানীয় সুস্বাস্থ্যের সঙ্গে তরতাজা বোধ করাতে পারে আমাদের। দিনে যে কয়বার চা পান করেন, তাতে ধীরে ধীরে কমিয়ে দিন চিনির পরিমাণ। এতটাই ধীরে যে একেবারে চিনি ছাড়া চায়ের সঙ্গে এক মাসেই অভ্যস্ত হয়ে যেতে কষ্টই হবে না। ডেজার্টকে না বলুন বেশিরভাগ ডেজার্টেই পুষ্টিগুণ বলতে তেমন কিছু থাকে না। চিনি ভর্তি এই মজার খাবারগুলো আমাদের শরীরের রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে চোখের পলকে। বাড়িয়ে দিতে পারে ক্লান্তির পরিমাণ, ক্ষুধা ও আরও বেশি ডেজার্ট খাওয়ার ইচ্ছা। ডেজার্ট খাওয়ার খুব বেশি ইচ্ছা হলে তাজা ফল খাওয়া যেতে পারে। পুষ্টিতে পরিপূর্ণ, সুস্বাদু, এন্টিঅক্সিডেন্ট ও আঁশসমৃদ্ধ ফল শরীরে ডেজার্টের উল্টো ভূমিকা রাখবে। খাওয়া যেতে পারে খেজুর। বেশ মিষ্টি হওয়ার কারণে এটি ডেজার্ট খাওয়ার ইচ্ছা পূর্ণ করে দেবে। চিনি দেয়া সস বাদ দিতে হবে কেচাপ, বারবিকিউ সস, চিলিসসের মতো সসগুলো প্রতিদিনের রান্নাঘরের উপাদান। খাবার সুস্বাদু করে তুলতে এদের জুড়ি নেই। কিন্তু এক টেবিল চামচ সসে যখন এক চা চামচ চিনি থাকে, তখন তা পরিহার করাই ভাল। সস কেনার সময় লেবেলে কতটুকু চিনি আছে দেখে নিতে হবে। একদম না খাওয়াই ভাল, তবু ছাড়তে না পারলে কম খাওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। সসের বদলে কাঁচামরিচ, ভিনেগার, কাসুন্দি, মেয়নেজ ব্যবহার করা যেতে পারে। যদিও মেয়নেজে প্রচুর চর্বি থাকে, তাই সাবধান হওয়া ভাল। পূর্ণ ননীযুক্ত খাবার ওজন কমাতে চাইছেন এমন কেউ নিঃসন্দেহে পূর্ণ ননীযুক্ত খাবারের নামে চমকে উঠবেন। কিন্তু বেশি অবাক হওয়ার মতো তথ্য এটাই যে, কম ননীযুক্ত খাবারে অধিক পরিমাণে চিনি আর ক্যালরি থাকে। যেহেতু শুধু ননী আর চর্বি নয়, চিনিও ওজন বাড়াতে পারে। যারা খাদ্যতালিকা থেকে চিনি ঝেড়ে ফেলতে চাইছেন, তাদের জন্য ভাল হবে পূর্ণ ননীযুক্ত খাবার বেছে নেয়া। প্রক্রিয়াজাত খাবারকে ছুটি দিন প্রক্রিয়াজাত খাবারে চিনি, লবণ, তেলের পাশাপাশি আপনার চোখের আড়ালে স্বাদবর্ধক ও বিষাক্ত রং দেয়া হচ্ছে। কৃত্রিম এই খাবারগুলো খাওয়ার চেয়ে আস্ত শস্য ও সবজি কিনে খাওয়া শরীরের জন্য ভীষণভাবে উপকারী। কখনও দেখা যায় তথাকথিত স্বাস্থ্যকর নাস্তার প্রতিশ্রুতি দেয়া খাবার। যেমন- ড্রাই ফ্রুট বা শুকনো ফল। এদের অনেকগুলোতেই চিনি থাকে তাদের অস্বাস্থ্যকর বিপরীত খাবারগুলোর চেয়ে বেশি। ফলের চিনিও অন্য চিনির মতোই। কিন্তু কাঁচা ফল আর ড্রাই ফ্রুটের মাঝে পার্থক্য হলো, কাঁচা ফলে পানি ও আঁশ থাকে, আর শুকনো ফলে এসব থাকলেও পরিমাণে খুব কম। নাস্তা হিসাবে সিদ্ধ ডিম, বাদাম, খেজুর বা অন্যান্য ফলকে বেছে নেয়া যেতে পারে স্বাস্থ্যকর বিকল্প হিসেবে। আট সপ্তাহ অভ্যাস ধরে রাখুন গবেষণা বলে, যে কোন অভ্যাস বন্ধ করতে ৬০ দিন সময় লাগে। তাই চিনির সঙ্গে দৃঢ় যে বন্ধন তৈরি করা হয়, তা ছাড়িয়ে আসতে ৬০ দিন সময় লাগবে। এরপর শরীর নিজেই বুঝে যাবে তার ঠিক কতটুকু চিনির প্রয়োজন। দৈনন্দিন কতটুকু চিনি খাবেন ঠিক করে নিন। সেটা চামচে করে কাঁচা চিনি হতে হবে এমন কথা নেই। ডেজার্টে থাকা চিনিও রুটিনের চিনির মাঝে ধরুন। চিনিকে বলা হয় ‘সাদা মৃত্যু’। এই মৃত্যুকে আমরা গ্রহণ করব, নাকি এর থেকে বেঁচে চলব, তার পূর্ণ স্বাধীনতা আমাদের আছে। কিন্তু কেউ যদি সত্যিই চিনির অভ্যাস থেকে বেরিয়ে এসে স্বাস্থ্যকর খাদ্যতালিকায় নির্ভরশীল হতে চান, উপরের পদ্ধতিগুলো তার জন্য সমাধানের মতো কাজ করতে পারে।
×