ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভুল করে ক্ষমা চাওয়া

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১৫ অক্টোবর ২০১৮

 ভুল করে ক্ষমা চাওয়া

প্রতিদিন কাজের মাঝে আমরা কতই না ভুল করে থাকি। মানুষের পক্ষে তো আর সবসময় শতভাগ সঠিক থাকাও সম্ভব না। তবে কিছু সময় আমরা এমন কিছু ভুল করে বসি যার জন্য আমাদের স্বাভাবিক জীবনে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয় এবং এই ভুলের কোন সমাধানে না পৌঁছাতে পারলে হয়ত কিছু সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এজন্য যত বড় ধরনের ভুলই হোক না কেন, পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য আমাদের ক্ষমা চাওয়া এবং এই ভুলের সমাধান বের করা ছাড়া আর কোন রাস্তা থাকে না। শুরুতে জেনে নিই ‘ক্ষমা চাওয়া’ কথাটি দ্বারা আমরা কী বুঝি এবং এই ক্ষমা চাওয়ার কাজটি করা এত কঠিন কেন। ইচ্ছাকৃত কিংবা অনিচ্ছাকৃতভাবে কাউকে না কাউকে আমাদের কাজ অথবা আচরণ দ্বারা আঘাত করে ফেলি। এর পরিণাম হতে পারে মারাত্মক। ক্ষমা চাওয়ার মানে হলো, আপনি আপনার ভুলের জন্য যথেষ্ট অনুতপ্ত। আপনি এমন ভুল ভবিষ্যতে আর করবেন না বলে অঙ্গীকারাবদ্ধ। আপনি একবার ক্ষমা চেয়ে যদি একই ভুল আবার করেন, তবে সেটা কিন্তু ক্ষমা চাওয়ার মধ্যে পরে না। আর ভুল উপলব্ধির মধ্য দিয়ে ক্ষমা চাওয়ার কাজটাও অতটা সহজ না। একটি ভুল করে ফেলার পর থেকেই আপনার মধ্যে অনুশোচনা কাজ করতে থাকে। ক্ষমা চাওয়ার আগে আপনার মাথায় এই চিন্তা কাজ করে যে, ‘ক্ষমা চাইতে গিয়ে আবার অপমানিত হয়ে আসব না তো?’ ভুল যেহেতু করেই ফেলেছেন, সেহেতু কিছুটা হলেও অপমানের শিকার হবেন সেটা ধরে নিয়েই ক্ষমা চেতে হবে। তাছাড়া সবসময় যে অপমানিত হবেন এমন তো না। হতেই পারে আপনার ভালর জন্যই অপরপক্ষ আপনার ভুল আগে থেকেই ক্ষমা করে রেখেছে! তাই সব ভুলের অনুশোচনা থেকে ক্ষমা চাওয়ার আগে সব রকম বাধা ঝেড়ে ফেলুন। নিজের সামনে যত বেশি বাধা তৈরি করে রাখবেন, অনুশোচনার চাপ তত বেশি বাড়তে থাকবে। পরিস্থিতি শুনে বোঝার চেষ্টা করুন শুরুতেই আপনার বন্ধু অথবা অপরপক্ষ কী কারণে আপনার উপর রেগে আছে তা বোঝার চেষ্টা করুন। তার পুরো কথা শুনুন এবং তার সম্পূর্ণ রাগ আপনার উপর ঝেড়ে দিতে দিন। তার কথার মাঝে আপনি কোন কথা বলবেন না। শুধু কথা শুনবেন এবং খেয়াল করে যাবেন। রাগ একবার ঝাড়া হয়ে গেলে স্বাভাবিকভাবেই তা অনেকটা কমে আসে। আপনি যদি এর মাঝে কথা বলে ফেলেন, তাহলে আপনার বন্ধু মনে করতে পারে আপনি তার কথার মাঝে আপনার অজুহাত দেখানোর চেষ্টা করছেন। বিষয়টা তিনি ভালভাবে নাও নিতে পারেন। তাই তার কথা বলার মাঝে আপনি কোন অভিযোগ না তুলে কেবল শুনে যাবেন। এটা হলো আপনার বন্ধুর রাগ ভাঙানোর জন্য প্রথম ধাপ। নিজের ভুল স্বীকার করে নিন পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাওয়ার আগেই নিজের ভুল স্বীকার করে নিন। আপনি যখনই ভুলটা নিজের বলে মেনে নেবেন তখনই আপনার বন্ধু বা অন্য যে কেউ আপনার উপর রাগ করে থাকলে তার রাগ অনেকটা কমে যাবে। কারণ এখানে আপনি পরিস্থিতি এড়ানোর চেষ্টা করছেন না। বরং নিজের ভুল মেনে নিয়েছেন। অর্থাৎ আপনি আপনার ভুলের ব্যাপারে অবগত আছেন এবং এর জন্য কী করণীয় তা নিয়ে কথা বলতেও আপনি আগ্রহী আছেন। তাই কারও রাগ ভাঙানোর দ্বিতীয় ধাপ হলো, সময় থাকতেই নিজের ভুল স্বীকার করে নেয়া। সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা নিন যেহেতু আপনার একটি ভুল হয়ে গিয়েছে এবং অতি শীঘ্রই এর একটি সমাধানে আসা জরুরী, সেহেতু আপনার বন্ধুকে বোঝাতে পারেন যে আপনি এই সমস্যার একটি সমাধান বের করার চেষ্টা করছেন। যেহেতু এ্যাসাইনমেন্ট জমা দেয়ার তারিখ ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গিয়েছে, তাই আপনি আপনার বন্ধুকে নিয়ে স্যারের কাছে যেতে পারেন যাতে তিনি এ্যাসাইনমেন্ট জমা দেয়ার শেষ তারিখটি বাড়িয়ে দেন। এতে আপনার বন্ধু সমস্যার সমাধানের দিকে যাওয়ার একটি আশা দেখতে পাবে। আপনার ওপর রাগ ঝাড়ার জন্য একটি ধন্যবাদ দিন সাধারণত যেটা হয়, কারও ওপর যদি রাগ থাকে সেটা অনেক মানুষ সামনাসামনি জানায় না। বরং ভেতরে এই রাগ পুষতে থাকে এবং একপর্যায়ে সেই মানুষটির সঙ্গে সম্পর্কের দূরত্ব কেবল বাড়তেই থাকে। আপনার বন্ধু যে আপনার সঙ্গে এই কাজ না করে বরং রাগটা ঝেড়ে দিয়েছে, সেটার জন্য তাকে একটি ধন্যবাদ আপনি দিতেই পারেন। এই রাগটা যদি সে কোনদিন প্রকাশ না করত, তাহলে হয়ত আপনাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কে একটি ফাটল ধরে যেতে পারত। আপনি নিশ্চয়ই চান না আপনার ভুলের জন্য একটি সম্পর্ক ভেঙে যাক! তাই অবশ্যই আপনার বন্ধুকে একটি ধন্যবাদ দেবেন এবং সম্ভব হলে তাকে কিছু খাওয়াতেও পারেন। সবশেষে আপনার ভুলের কারণ ব্যাখ্যা করুন বন্ধুর সঙ্গে চা পান করতে করতে কেন আপনি এ্যাসাইনমেন্টের কথা তাকে জানাতে ভুলে গিয়েছিলেন, তা তুলে ধরতে পারেন। এটা যে অবশ্যই বলতে হবে এমনটা না। আপনার মূল কাজ হলো সমস্যার সমাধান বের করা। সেটা হয়ে গেলে পরে আপনার যদি কিছু বলার থাকে তা বলুন এবং আপনার ভুলের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করুন। এর ফলে আপনার ব্যাপারে আপনার বন্ধুর যদি ভুল কোন ধারণা থাকে, তাহলে তা কেটে যাবে। আপনার ভুলের জন্য ক্ষমা চান তাহলে এটি হলো আমাদের ওপর কারও রাগ জমে থাকলে তা নিরসন করার কার্যকর একটি পদ্ধতি। পরবর্তীতে আমাদের ওপর কারও রাগ থাকলে আমরা লাট্যো থিওরির কথা মাথায় রাখব এবং সেই অনুযায়ী কাজ করে যাব।
×