ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচন সামনে রেখে জঙ্গী গ্রুপগুলোকে মাঠে নামাচ্ছে বিএনপি-জামায়াত

প্রকাশিত: ০৪:২০, ১৫ অক্টোবর ২০১৮

নির্বাচন সামনে রেখে জঙ্গী গ্রুপগুলোকে মাঠে নামাচ্ছে বিএনপি-জামায়াত

শংকর কুমার দে ॥ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনী পরিবেশ বিনষ্টের লক্ষ্যে বিএনপি-জামায়াতের একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপের ইন্ধনে উগ্রবাদী জঙ্গী সংগঠনগুলোর সক্রিয় হয়ে টার্গেট কিলিং, নাশকতা ও নৈরাজ্য চালানোর আশঙ্কা করছে গোয়েন্দা সংস্থা। বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও তার পুত্র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় এবং জামায়াত-শিবির নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না বিধায় নির্র্বাচনী পরিবেশ বিনষ্ট করার জন্য উস্কানি দিতে পারে জঙ্গী গোষ্ঠীকে। নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি-জামায়াতের বিভক্তি ও বিভাজন সৃষ্টিতে দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে নেতৃত্ব ধরে রাখতে জঙ্গীদের ব্যবহার করে অরাজকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেহেতু জামায়াত-শিবিরের অংশগ্রহণের সুযোগ নেই সে কারণে আবারও তারা পুরনো কায়দায় জঙ্গীদের সংগঠিত করে মাঠে নামিয়ে জঙ্গীদের পুরনো লিস্টে থাকা দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদেরও টার্গেট করাতে পারে। এ জন্য নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন অব বাংলাদেশ (জেএমবি) এরই মধ্যে সংগঠিত হয়ে অপতৎপরতা শুরু করেছে। চট্টগ্রামের একটি জঙ্গী ঘাঁটিতে অভিযান চালানোর সময় দুই জঙ্গী আত্মঘাতী হয়েছে, যাদের পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি। জঙ্গী ঘাঁটি থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ, বিস্ফোরক জব্দ করেছে অভিযান পরিচালনাকারীরা। এসব ঘটনায় জঙ্গী তৎপরতার কিছু আলামত ও তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। এই জঙ্গী সংগঠনটি এখন পুরনো জেএমবি হিসেবে চিহ্নিত। পুলিশ সদর দফতর থেকে সারাদেশের থানাগুলোকে ইতোমধ্যেই জঙ্গীদের অপতৎপরতা রোধে সতর্ক করে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেছেন, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ডাঃ বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে বাদ দিয়ে ড. কামালের নেতৃত্বে যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়েছে তাতে জামায়াত-শিবিরকে সঙ্গে নিয়েই যোগ দিয়েছে বিএনপি। বিএনপির সঙ্গে ২০ দলীয় জোট তথা জামায়াত ঐক্যফ্রন্টে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাওয়ায় যুদ্ধাপরাধী, জামায়াত, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে স্বাধীনতা বিরোধীরা নির্বাচনকে সামনে রেখে তৎপরতা চালানোর সুযোগ পাবে। নির্বাচন ঘনিয়ে এলে এই বিষয়ে তখন আর কেউই আপত্তি তুলতে পারবে না এবং আপত্তি তুললেও নির্বাচনের ডামাডোলে তা কারও কানে ঢুকবে না। বিএনপি ড. কামাল হোসেনকে সামনে এনে তাদের যুদ্ধাপরাধী, জামায়াত-জঙ্গীবাদের মতো স্পর্শকাতর বিষয়টি আড়ালে করতে সক্ষম হয়েছে। এতে নির্বাচনের আগে জামায়াত-শিবির ও জঙ্গী তৎপরতা ছড়িয়ে পড়তে পারে এমন আশঙ্কা প্রবল হচ্ছে বলে মনে করেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। পুলিশ সদর দফতরের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচনের আগে সারাদেশে বিএনপি-জামায়াতের উস্কানিতে জঙ্গী তৎপরতা বাড়তে পারে এমন আশঙ্কা থেকে সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ইউনিটগুলোকে সতর্ক নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এছাড়া পুলিশের স্থাপনাগুলোতেও সার্বিক বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পুরনো জেএমবি নতুনভাবে সংগঠিত হওয়ার বেশ কিছু আলামত পাওয়া গেছে। তাদের কিছু নাশকতা পরিকল্পনাও এরই মধ্যে নস্যাৎ করা হয়েছে। বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জঙ্গীদের পরিকল্পনাগুলো ভেস্তে দিতে গোয়েন্দারা প্রতিনিয়ত কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং এদের অপতৎপরতা রুখে দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সার্বিক সক্ষমতাও রয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের মুখে আলোচিত জঙ্গী সংগঠন নব্য জেএমবি এবং হুজিবিসহ অন্য জঙ্গী গ্রুপগুলো সাংগঠনিকভাবে অস্তিত্ব সঙ্কটে থাকলেও সংগঠিত হয়ে তৎপরতা জোরদার করার চেষ্টার খবর পাওয়া যাচ্ছে। বিএনপির মূল নেতৃত্ব খালেদা জিয়া ও তার পুত্র তারেক রহমান এবং জামায়াত-শিবির নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ হারানোর কারণে পুরনোর জঙ্গী সংগঠন জেএমবি এখনও চিন্তার কারণ। পুরনো জঙ্গী সংগঠন জেএমবিতে যারা জঙ্গী হয়েছেন তাদের মধ্যে জামায়াতের অঙ্গসংগঠন ছাত্রশিবিরের ক্যাডাররা রয়েছে। এই জঙ্গী সংগঠনটি তলে তলে অনেকটাই সংগঠিত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এরই মধ্যে এর কিছু আলামতও পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম ছাড়াও মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে প্রকাশক ও লেখক শাহজাহান বাচ্চু হত্যার মাধ্যমে নিজের অস্তিত্ব নতুন করে জানান দেয় এই জঙ্গী সংগঠনটি। ওই হত্যাকা-ে সরাসরি জড়িত জেএমবির ঢাকা বিভাগীয় অপারেশনাল প্রধান আবদুর রহমান ওরফে লালু নামে একজনকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে জঙ্গী সংগঠনের সাম্প্রতিক কার্যক্রম সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায় পুলিশ। এর আগে তহবিল সংগ্রহে জেএমবি জঙ্গীরা উত্তরাঞ্চলে কয়েকটি ডাকাতি ও ছিনতাইয়ে অংশ নেয় এমন তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে বলে পুলিশের দাবি। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক অবস্থা স্বাভাবিক। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা, নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরুর সময়টায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শান্ত ও স্বাভাবিক থাকা দরকার। এ পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক পরিবেশ উত্তপ্ত এবং আগামী সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্ট করার লক্ষ্যে স্বার্থান্বেষী অশুভ মহল নাশকতা ও টার্গেট কিলিংয়ের মাধ্যমে উত্তপ্ত পরিবেশ সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাতে পারে। নাশকতা, টার্গেট কিলিং ও স্পর্শকাতর স্থানে হামলা চালানোর মাধ্যমে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তোলা হতে পারে। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, জঙ্গী সংগঠন জেএমবির কোন জঙ্গী সক্রিয় ও তাদের টার্গেট করা ব্যক্তির বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা বা লক্ষ্যবস্তুর তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। জঙ্গীদের সব ভাড়া বাসা, আবাসিক হল, মেসের নতুন ভাড়াটে বা এলাকায় অপরিচিত নতুন লোকজন সম্পর্কে যথাযথভাবে ও গুরুত্ব সহকারে খোঁজ-খবর নিয়ে সঠিক পরিচয় নিশ্চিত করার কাজ শুরু করা হয়েছে।
×