সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রবাদপ্রতিম শিল্পী অন্নপূর্ণা দেবী আর নেই। ভারতের একাধিক গণমাধ্যম জানিয়েছে, শনিবার ভোরে মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রখ্যাত এই সুরবাহার শিল্পীর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। গত কয়েক বছর ধরেই বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছিলেন সঙ্গীতগুরু অন্নপূর্ণা দেবী। তার মৃত্যুতে ভারতের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। ১৯২৭ সালের ২৩ এপ্রিল মধ্যপ্রদেশের মাইহারে জন্ম নেয়া অন্নপূর্ণার আসল নাম রওশন আরা বেগম। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অন্যতম দিকপাল ওস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁ তার বাবা। কিংবদন্তি সরোদ বাদক আলী আকবর খাঁ তার ভাই। সেতারবাদক পি ত রবি শঙ্কর তার প্রথম স্বামী। বাবার কাছে সঙ্গীতে হাতেখড়ি পাওয়া অন্নপূর্ণা কৈশোরেই তারযন্ত্র সুরবাহার বাদনে অসামান্য পারদর্শিতা অর্জন করেন। তবে সঙ্গীতকে তিনি পেশা হিসেবে নেননি। মেয়ের বাদনের প্রশংসায় ওস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁ বলেছিলেন, আমার বাজনা যদি সত্যিকারে কেউ বাজিয়ে থাকে তো সে আমার মেয়ে। অন্নপূর্ণা নিজেও বহু শিল্পীকে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের দীক্ষা দিয়েছেন। তার শিষ্যদের মধ্যে রয়েছেন পি ত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া, পি ত নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়, পি ত আমিত ভট্টাচার্য, নিত্যানন্দ হলদিপুর, সেতারবাদক রুশিকুমার পাে , পি ত প্রদীপ বরাটের মতো সুর সাধকরা। মাত্র ১৪ বছর বয়সে বাবা আলাউদ্দীন খানের ছাত্র রবি শঙ্করকে বিয়ে করে রওশন হয়ে যান অন্নপূর্ণা দেবী। তাদের ছেলে শুভেন্দ্র শঙ্কর শুভ অল্প বয়সেই মারা যান। পরে ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্ট রুশিকুমার পাে র সঙ্গে বিয়ে হয় অন্নপূর্ণার। তারুণ্যের শুরুতে বিভিন্ন আসরে বাজিয়ে দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠছিলেন অন্নপূর্ণা। সে সময় রবি শঙ্করের সঙ্গেও এক মঞ্চে তার যুগলবন্দী হয়েছে। তবে ওই সময় থেকেই টানাপোড়েনের শুরু। বিচ্ছেদের পর নিজেকে অনেকটাই আড়ালে নিয়ে যান অন্নপূর্ণা। তবে নিভৃতেই চলতে থাকে তার সঙ্গীতের সাধনা আর শিক্ষাদান। কোন বাণিজ্যিক রেকর্ড কখনও প্রকাশিত না হলেও ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত জগতে অন্নপূর্ণার অবস্থান ছিল অত্যন্ত উঁচুতে। ভারত সরকারের পদ্মভূষণ, সঙ্গীত নাটক একাডেমি এ্যাওয়ার্ড, দেশিকোত্তমসহ নানা সম্মাননায় তিনি ভূষিত হয়েছেন।
