ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জলি রহমান

অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন ২ মার্কিনী

প্রকাশিত: ০৬:৫৩, ১৪ অক্টোবর ২০১৮

অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন ২ মার্কিনী

বিশ্ব অর্থনীতিতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির মধ্যেই দীর্ঘমেয়াদী কল্যাণের মডেল এবং যুক্তিগত উদ্ভাবন কিভাবে বাজার অর্থনীতির ভিতকে আরও সুসংহত করতে পারে তার দিশা দেখিয়ে ২০১৮ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছেন দুই মার্কিন অর্থনীতিবিদ। স্টকহোমে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি যৌথভাবে পুরস্কার জয়ী হিসেবে অর্থনীতিবিদ উইলিয়াম ডি নরডাস ও পল এম রোমারের নাম ঘোষণা করেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির অধ্যাপক, উইলিয়াম ডি নরডাস অর্থনীতি এবং জলবায়ুর সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ককে বর্ণনা দিয়ে একটি যথাযথ মডেল তৈরি করেছেন। আর নতুন ভাবনা ও উদ্ভাবনের জন্য দৃঢ় ইচ্ছার উপর অর্থনৈতিক শক্তির প্রভাব নিয়ে কাজ করেছেন রোমার। বিশ্বব্যাংকের এই প্রধান অর্থনীতিবিদ দেখিয়েছেন, কিভাবে অর্থনীতিবিদরা আরও গতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার অর্জন করতে পারেন। আগামী ১০ ডিসেম্বর অসলোতে তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হবে। পুরস্কারের অর্থ তারা সমান ভাগে ভাগ করে নেবেন। প্রযুক্তির উন্নতি, আর জ্ঞান কিভাবে আলাদা করে দেয় একটা দেশকে? অথবা, অর্থনীতির বৃদ্ধি জলবায়ুর উপর কিভাবে প্রভাব ফেলে, আর জলবায়ুর পরিবর্তন কিভাবে প্রভাবিত করে বৃদ্ধির হারকে? তার চেয়েও বড় কথা, এই ঘটনাগুলো কিভাবে প্রভাব ফেলতে থাকে স্থান-কালের গণ্ডি অতিক্রম করে? অর্থনীতির একেবারে কেন্দ্র্রে থাকা, কিন্তু অবহেলিত, এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজেছেন এই দুই অর্থনীতিবিদ। রোমার আর নরডাসের কাজের গুরুত্ব হলো, তাঁরা দেখিয়েছেন, প্রযুক্তি আর পরিবেশ, কোনওটাই অর্থনীতির ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার উর্ধে নয়। অর্থনীতির দুটো মূল প্রশ্ন হলো, দীর্ঘমেয়াদে আর্থিক বৃদ্ধি কিসে হয়, আর সেই বৃদ্ধির সীমা নির্ধারিত হয় কিভাবে। রোমারের কাজ প্রথম প্রশ্নটার উত্তর দেয়, আর নরডাসের কাজ দ্বিতীয় প্রশ্নের। ‘একদিকে অর্থনীতির টানে প্রযুক্তি আর পরিবেশ প্রভাবিত হয়, আবার উল্টো দিকে তারা প্রভাব ফেলে অর্থনীতিতে এ বছরের নোবেল পুরস্কার এই সত্যটার স্বীকৃতি।’ উইলিয়াম ডি নরডাস বিশ্লেষণ করেছেন কিভাবে জলবায়ু পরিবর্তনকে দীর্ঘমেয়াদে সামষ্টিক অর্থনীতির সঙ্গে একীভূত করে। তিনি প্রথম ব্যক্তি হিসেবে সামষ্টিক অর্থনীতি এবং জলবায়ুর মধ্যে পারস্পরিক প্রভাবের একটি সংখ্যাত্মক মডেল দাঁড় করিয়েছেন। দেখিয়েছেন, জলবায়ু ও অর্থনীতি কিভাবে একটি অন্যটির ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। এই মডেলটি দাঁড় করাতে নরডাস গেল শতকের সত্তরের দশক থেকেই কাজ শুরু করেন। সেই সময় বিজ্ঞানীরা জীবাষ্ম জ্বালানির ব্যবহার বাড়িয়ে অর্থনীতির চাকাকে সচল করার প্রবণতা জলবায়ুতে যে নেতিবাচক প্রভাব রাখছে তার আলোচনা শুরু করেছিলেন। মানব সভ্যতার কথিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে জলবায়ুতে যে প্রভাব পড়বে তা ব্যাখা করতে তিনি তখন পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও অর্থনীতির তত্ত্বগুলোকে একীভূত করে ব্যাখ্যা করার কাজ শুরু করেন। তখন থেকেই তিনি বলতে শুরু করেন, মানুষের কর্মকাণ্ডই শুধু জলবায়ুকে হুমকির মধ্যে ফেলছে না বরং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও তাতে বিরাট ভূমিকা রাখছে। রোমার প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনকে দীর্ঘমেয়াদে সামষ্টিক অর্থনীতির সঙ্গে একীভূত করে বিশ্লেষণ করেছেন। নিউইয়র্কের ইউনিভার্সিটি স্টার্ন স্কুল অব বিজনেসের অধ্যাপক রোমার দেখিয়েছেন কিভাবে অর্থনৈতিক শক্তিগুলো নতুন নতুন ধারণা এবং উদ্ভাবন সৃষ্টির জন্য সংস্থাগুলোর ইচ্ছাকে নিয়ন্ত্রণ করে। এজন্য তিনি যে তত্ত্ব দিয়েছেন তা এন্ডোজেন প্রবৃদ্ধি তত্ত্ব নামে পরিচিত। এই তত্ত্বে রোমার দেখিয়েছেন, প্রযুক্তিগত পরিবর্তন অর্থনীতির পরিধিকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করে সেই চিত্র। আবার অর্থনৈতিক পরিবর্তন দশকের পর দশক কিভাবে উদ্ভাবনকে নিয়ন্ত্রণ করেছে তার চিত্রও আছে রোমারের তত্ত্বে। আশির দশকে রোমার যখন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডির গবেষক তখনই এই তত্ত্ব নিয়ে কাজ শুরু করেন। তখনই তিনি দেখেন প্রযুক্তিগতভাবে এগিয়ে থাকা দেশ ও অন্যান্য দেশের আয় বৃদ্ধির বিষয়টি একরকম হয় না। তিনিই প্রথম ব্যক্তি হিসেবে একটি মডেলের মাধ্যমে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হন। নোবেল কমিটি বলেছে, উইলিয়াম ডি নরডাস ও পল এম রোমার দুজনের মডেলই টেকসই অর্থনীতির ভিতকে আরও মজবুত করতে প্রত্যেকটি দেশের সরকারকে জলবায়ু পরিবর্তন এবং নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও ব্যবহারের নীতিগত পরিবর্তন আনতে ভূমিকা রাখবে। উইলিয়াম ডি নরডাস যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক। ১৯৪১ সালে তিনি দেশটির নিউ মেক্সিকোতে জন্মগ্রহণ করেন। ইয়েল ইউনিভার্সিটিতেই পড়াশোনা করেন তিনি। পল এম রোমার ১৯৫৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ডেনভারে জন্মগ্রহণ করেন। শিকাগো ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেছেন তিনি। চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ও ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। উল্লেখ্য, ৯ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রাউন (১ মিলিয়ন ডলার) মূল্যের অর্থনীতির পুরস্কার দেয়া শুরু হয় ১৯৬৮ সাল থেকে। ১৮৯৫ সালে সুইডিশ শিল্পপতি এ্যালফ্রেড নোবেলের শুরু করা মূল পাঁচটি নোবেল পুরস্কারের অংশ ছিল না অর্থনীতির বিষয়টি।
×