ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এক ব্যাংকারের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ॥ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ১৪ অক্টোবর ২০১৮

এক ব্যাংকারের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ॥ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’

বঙ্গবন্ধুকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালবাসেন এমন মানুষের সংখ্যা এদেশে অগণিত। আবার মুজিব-পাগল লাখো-কোটি বঙ্গবন্ধুপ্রেমীর মতো এমন কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা সেই সাধারণের কাতারে থেকেও যেন অসাধারণ এবং বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। এঁদের কেউ কেউ কাব্যমনা, শিল্পমনা, ভাবুক- আবার কেউ বা থাকেন স্বপ্নচারী। নিজের অজান্তেই এঁরা জগতের অনেক কিছু নিয়ে ভাবেন, স্বপ্ন দেখেন। এমনকি কল্পনায় আকাশ ভ্রমণ করেন অনেকে। বক্ষমান নিবন্ধ যাঁকে নিয়ে তিনি একজন ব্যাংক ব্যক্তিত্ব যিনি আদতেই বঙ্গবন্ধুকে তাঁর হৃদয়ে লালন করেন, ধারণ করেন। এই বিশেষ ব্যক্তি একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ শামস্-উল ইসলাম। তিনি বঙ্গবন্ধু, তাঁর কর্ম ও আদর্শকে মন দিয়ে ভালবাসেন বলেই তাঁকে নিয়ে নিজস্ব উদ্ভাবনী চিন্তার উন্মেষ ঘটিয়েছেন। এটি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সম্পূর্ণ নতুন এক আবিষ্কার, যা আজ দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ হিসেবে। তাঁর উদ্যোগে আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকে প্রথম এবং অগ্রণী ব্যাংকে দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু কর্ণার প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণার’ প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। তাই তিনি মনে করেন, তাঁর এই সৃষ্টি অচিরেই সারাদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাবে, যার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর আদর্শ আগামী প্রজন্মের কাছে আরও বেশি বেশি পরিচিতি লাভ করবে। মোহাম্মদ শামস্-উল ইসলাম ২০১৬ সালের ২৮ আগস্ট অগ্রণী ব্যাংকে (লি:) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও হিসেবে যোগদান করেন। এর আগে তিনি আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। এছাড়া তিনি ২০০৮ সাল থেকে অগ্রণী ব্যাংকে মহাব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করেন এবং একই ব্যাংকে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বও পালন করেন। তিনি দীর্ঘ সাত বছর অগ্রণী এক্সচেঞ্জ হাউস (প্রা:) লিমিটেড, সিঙ্গাপুরের সিইও এবং পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং রেমিটেন্স আহরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। জনাব ইসলাম ১৯৮৪ সালে অগ্রণী ব্যাংকে সিনিয়র ফিন্যান্সিয়াল অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ১৯৮১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগ থেকে সম্মানসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি যুক্তরাজ্য, হল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে ব্যাংকিং ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত উচ্চতর প্রশিক্ষণ ও সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব ছাড়াও বিভিন্ন শাখা, অঞ্চল এবং কর্পোরেট শাখা প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মোহাম্মদ শামস্-উল ইসলাম জানান, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কিছু একটা করার ইচ্ছা তাঁর বহু দিনের। সেই সুপ্ত প্রয়াস থেকেই সৃষ্টি করা হয় ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণার’। প্রকৃত অর্থে বঙ্গবন্ধুকে সাধারণ মানুষের কাছে আরও বেশি পৌঁছে দেয়ার চিন্তা থেকে, নতুন প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধু সম্বন্ধে আরও তথ্য দিতে এবং মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির নির্ভুল ইতিহাস আপামর জনগণকে জানাতে ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণার’ করার স্বপ্ন দেখেন তিনি। এই উদ্ভাবনী ভাবনার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ের সপ্তম তলায় ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ স্থাপন করেন তিনি। এখানে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বই-পুস্তক, ছবি, লেখা ও প্রামাণ্যচিত্র স্থান পেয়েছে। যে কেউ এখানে এসে বিস্মিত না হয়ে পারেন না। এখানে জাতির পিতাকে নিয়ে অন্তত ৪ শ’ বই রয়েছে, যেগুলো বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মসহ দেশের সুস্পষ্ট ইতিহাস পাঠককে তথ্য দিতে যেন অপেক্ষা করছে। রয়েছে বঙ্গবন্ধু সংশ্লিষ্ট তিনটি ছবির এ্যালবাম। সেখানে পাওয়া যায় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিময় অনেক ছবি। রয়েছে বঙ্গবন্ধুর ছবি সংকলিত ৫ ও ১০ টাকার দুটি বড় নোট। এই কর্নারের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয়টি হলো ১১৭ কেজি ওজনের বঙ্গবন্ধুর ব্রোঞ্জের আবক্ষ ভাস্কর্য। তবে এটি দেশের দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু কর্ণার। এর আগে তিনি আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকে একটি বঙ্গবন্ধু কর্ণার স্থাপন করেন। মজার বিষয় হলোÑ শামস্-উল ইসলামের পরিকল্পনা নিয়ে দেশের সর্বস্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গ্রন্থাগার বা লাইব্রেরিতে সরকার ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণার’ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মোহম্মদ শামস্-উল ইসলাম সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে বলেন, ‘কৃতজ্ঞতা ও দায়িত্ববোধ থেকে বঙ্গবন্ধুর ৪১তম শাহাদাত বার্ষিকীতে ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণার’ স্থাপন করি। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে জানার মধ্য দিয়েই দেশ ও জাতির বিষয়ে জানতে হবে। তার সমালোচনা করতে হলেও তাকে জেনে করা উচিত। আর জানতে হলে বই পড়তে হবে। আজকের তরুণ প্রজন্মকে আরও বেশি বই পড়তে হবে, ইতিহাস জানতে হবে। বঙ্গবন্ধু কর্ণার সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থী, জ্ঞানপিপাসু ও বঙ্গবন্ধুপ্রেমীদের তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে।’ উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর এখন পর্যন্ত দেশ-বিদেশে প্রায় ১৩ শতাধিক মৌলিক গ্রন্থ রয়েছে। এইগুলো বাংলা ও ইংরেজী ভাষায় প্রকাশিত। এছাড়াও বঙ্গবন্ধুর ওপর বেশ কিছুসংখ্যক বই চীনা, জাপানী, ইতালি, জার্মানি ও সুইডিশসহ কয়েকটি বিদেশী ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। এ কথা সবার জানা যে, ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর থেকে এই ভূ-খ-ের নিরীহ নির্যাতিত নিপীড়িত বঞ্চিত মানুষের নিজস্ব পরিচয় আর বাঙালী জাতিসত্তা প্রতিষ্ঠা প্রশ্নে যিনি ছিলেন বরাবরই অনড়। ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের সাড়ে সাত কোটি মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় যিনি কখনও আপোস করেননি। শত হুমকি-ধমকি আর প্রলোভনেও মেনে নেননি পশ্চিমা শাসক শ্রেণীর অন্যায্য কোন প্রস্তাব। নিজের জীবন বিপন্ন করে, সমস্ত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়ে যিনি বাঙালী জাতির মুক্তির সংগ্রামে নিজেকে অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছেন- তিনি আর কেউ নন, শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালীর অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দেশ ও জাতির জন্য তাঁর এই অপরিসীম ত্যাগ আর অবিস্মরণীয় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ কোটি কোটি মানুষের কাছে আজ তিনি বঙ্গবন্ধু, বাঙালী জাতির পিতা। বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি।
×