ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ডিজিটাল দক্ষতা ও মানবসম্পদ

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৪ অক্টোবর ২০১৮

ডিজিটাল দক্ষতা ও মানবসম্পদ

বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তর ও তার কৌশল : আমি মনে করি, ২০২১ সালের পরবর্তী জ্ঞানভিত্তিক সমাজ, ডিজিটাল শিল্প বিপ্লবের দেশ বা উন্নত বাংলাদেশ কিংবা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন হবে দেশটির সম্পূর্ণ ডিজিটাল রূপান্তর। এর একমাত্র কারণ হচ্ছে এখন থেকে সমাজ-সভ্যতার অগ্রগতির সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হলো ডিজিটাল প্রযুক্তি। আমরা এই প্রযুক্তির সমষ্টিকে ডিজিটাল শিল্পবিপ্লব, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব, সোসাইটি ৫.০, ৫জি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বিগডাটা বা অন্য যে কোন নাম বা প্রযুক্তি হিসেবেই চিনি না কেন সকল অগ্রগতির প্রাথমিক নিয়ামক হচ্ছে ডিজিটাল রূপান্তর। বাংলাদেশের এই ডিজিটাল রূপান্তরের জন্য আপাতত আমাদের চারটি বড় কৌশল নিয়ে কাজ করতে হবে। বর্তমানের ভাবনায় চারটি প্রধান কৌশল আমাদের ২০২০-২১ সাল পার করে দিতে পারে। তবে নতুন প্রেক্ষিত ও নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য এই কৌশলগুলোকে পরিবর্তনশীল করতে হবেই। আমাদের আপাত কৌশলগুলো হলো- ১. শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর ও ডিজিটাল দক্ষতাসম্পন্ন মানবসম্পদ উন্নয়ন। ২. সরকারের ডিজিটাল রূপান্তর ও জনগণের সকল সেবা ডিজিটালকরণ। ৩. শিল্প-বাণিজ্য তথা অর্থনীতির ডিজিটাল রূপান্তর। ৪. জনে জনে সংযুক্তি ও একটি ডিজিটাল জীবনধারা গড়ে তোলা এবং বাংলাদেশকে জন্মের প্রতিজ্ঞায় স্থাপন করা। প্রথম কৌশলটি ডিজিটাল শিল্পবিপ্লব বা জ্ঞানভিত্তিক সমাজের উপযোগী মানবসম্পদ সৃষ্টি নিয়ে। আমরা এজন্য শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছি। এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা আবশ্যক। দ্বিতীয় কৌশলটি সরকারের ডিজিটাল রূপান্তর বা একটি ডিজিটাল সরকার প্রতিষ্ঠাবিষয়ক। এর আওতায় সরকার পরিচালনা পদ্ধতি ডিজিটাল করা ছাড়াও জনগণের কাছে সকল সংস্থার সেবাকে ডিজিটাল উপায়ে উপস্থাপন করার বিষয়টিও রয়েছে। তৃতীয় কৌশলটি মূলত শিল্প ও অর্থনীতির ডিজিটাল রূপান্তর। শিল্প-কল-কারখানা-ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অর্থনীতির সকল ধারার ডিজিটাল রূপান্তর-এর প্রধান উদ্দেশ্য। সামগ্রিকভাবে এই কৌশলের উদ্দেশ্য একটি ডিজিটাল, সৃজনশীল বা জ্ঞানভিত্তিক অর্র্থনীতিও গড়ে তোলা। চতুর্থ কৌশলটি হলোÑ তিনটি কৌশলের সম্মিলিত রূপ বা একটি ডিজিটাল জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার স্বপ্নপূরণ। একই সঙ্গে একটি ধর্মভিত্তিক জাতীয়তা ও সাম্প্রদায়িক চেতনার বিপরীতে একটি আধুনিক ভাষাভিত্তিক জাতি রাষ্ট্র গড়ে তোলার স্বপ্ন এটি। কৌশল- ১ শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর ও ডিজিটাল দক্ষতাসম্পন্ন মানবসম্পদ উন্নয়ন : বাংলাদেশের মতো একটি অতি জনবহুল দেশের জন্য দেশটির ডিজিটাল রূপান্তর ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রধানতম কৌশল হতে হবে এর মানবসম্পদকে সবার আগে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বা ডিজিটাল শিল্প যুগের উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর করা। এদেশের মানব সম্পদের চরিত্র হচ্ছে, জনসংখ্যার শতকরা ৬৫ ভাগই পঁয়ত্রিশের নিচের বয়সী। শতকরা ৪৯ ভাগের বয়স ২৫ বছরের নিচে। ২০১৮ সালের শুরুতে শুধু শিক্ষার্থীর সংখ্যাই ছিল প্রায় ৫ কোটি। ঘটনাচক্রে ওরা এখন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করে শিল্পযুগের প্রথম-দ্বিতীয় স্তরের দক্ষতা অর্জনে নিয়োজিত। ওরা তৃতীয় বা চতুর্থ স্তরের শিল্পায়নের কোন খবরও জানে না। ওদের ডিজিটাল শিল্পবিপ্লব, সৃজনশীল অর্থনীতি বা জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির শিক্ষা দিতে না পারলে আমরা এই যুগটাকেও মিস করব। ছাত্র-ছাত্রী ছাড়া অন্য শিক্ষিতরা সিংহভাগ প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ গ্রহণে সক্ষম। অন্যদিকে বিদ্যমান জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেক নারী, যাদের বড় অংশটি ঘরকন্না ও কৃষিকাজে যুক্ত থাকলেও একটি স্বল্পশিক্ষিত নারী সমাজ পোশাকশিল্পে স্বল্পদক্ষ জনগোষ্ঠীতে লিপ্ত হয়ে গেছে। সামনের দিনে এই প্রবণতাটি থাকবে না। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ইন্টারনেট অব থিংস, বিগডাটা এনালাইসিস ও রোবটিক্স এই অবস্থার পরিবর্তন করবে। পোশাকশিল্পে একদিকে স্বল্পদক্ষ নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ কমবে- অন্যদিকে দক্ষ নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে। আমাদের চ্যালেঞ্জ হবে স্বল্পদক্ষ নারীদের চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দক্ষতা প্রদান করা। বিদ্যমান কায়িক শ্রমভিত্তিক শ্রমশক্তিকে নতুন প্রযুক্তিতে দক্ষ শ্রমিকে পরিণত করাটার প্রতি এখন থেকেই গুরুত্ব দিতে হবে। অন্যদিকে নারীদের পোশাকশিল্প কেন্দ্রিক দক্ষতার ওপর একমাত্র নির্ভরতা না রেখে নতুন প্রযুক্তির দক্ষতা দিতে হবে। পোশাকশিল্প খাতটিতে এই ধরনের আরও অনেক দক্ষ নারীর কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা থাকায় এদের আরও দক্ষ করে গড়ে তোলা যায়। এজন্য এ খাতে যথাযথ উচ্চদক্ষতাবিষয়ক প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। তবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত নারী সমাজের জন্য প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা যথাযথ নয়। এদের ডিজিটাল যুগের শিক্ষা দিতে হবে। সুখের বিষয় যে, ডিজিটাল যুগে নারীদের কর্মক্ষেত্র এত ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে যে, তাদের আর পশ্চাদপদ বলে গণ্য করার মতো অবস্থা বিরাজ করছে না। মানবসম্পদ সৃষ্টির প্রধান ধারাটি তাই নতুন রূপে গড়ে তুলতে হবে। প্রচলিত ধারার শিক্ষায় নিয়োজিত জনগোষ্ঠীকে দক্ষ জ্ঞানকর্মী বানাতে হলে প্রথমে প্রচলিত শিক্ষার ধারাকে বদলাতে হবে। এ জন্য আমরা আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কৃষি শ্রমিক বা শিল্প শ্রমিক গড়ে তোলার কারখানা থেকে জ্ঞানকর্মী তৈরি করার কারখানায় পরিবর্তন করতে পারি। আমাদের নিজের দেশে বা বাইরের দুনিয়াতে কায়িক শ্রমিক, কৃষি শ্রমিক ও শিল্প শ্রমিক হিসেবে যাদের কাজে লাগানো যাবে তার বাইরের পুরো জনগোষ্ঠীকে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে সক্ষম ডিজিটাল কাজে সুদক্ষ তথা জ্ঞানকর্মীতে রূপান্তর করতে হবে। বস্তুত প্রচলিত ধারার শ্রমশক্তি গড়ে তোলার বাড়তি কোন প্রয়োজনীয়তা হয়ত আমাদের থাকবে না। কারণ যে তিরিশোর্ধ জনগোষ্ঠী রয়েছে, বা যারা ইতোমধ্যেই প্রচলিত ধারার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পেয়েছে এবং আরও বহু বছর পেতে থাকবে তাদের প্রচলিত কাজ করার দক্ষতা থাকছে এবং তারাই এ খাতের চাহিদা মিটিয়ে ফেলতে পারবে। বরং এই জনগোষ্ঠী এখনই বেকারত্বের যন্ত্রণায় ভুগছে। ফলে নতুন প্রজন্মকে ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থার সহায়তায় জ্ঞানকর্মী বানানোর কাজটাই আমাদের সর্বাগ্রে করতে হবে। এর হিসাবটি একেবারেই সহজ। বিদ্যমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অবিলম্বে নতুন শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলন করতে হবে। এটি বস্তুত একটি রূপান্তর। প্রচলিত দালানকোঠা, চেয়ার-টেবিল বহাল রাখলেও এর শিক্ষকের যোগ্যতা, শিক্ষাদান পদ্ধতি এবং শিক্ষার বিষয়বস্তু পরিবর্তন করতে হবে। আমি ছয়টি ধারায় এই রূপান্তরের মোদ্দা কথাটা বলতে চাই। ক. প্রথমত প্রোগ্রামিংসহ ডিজিটাল প্রযুক্তি বিষয়টি শিশুশ্রেণী থেকে বাধ্যতামূলকভাবে পাঠ্য করতে হবে। রোবটিক্স ও প্রাথমিক স্তরে পাঠ্য করা যায়। প্রাথমিক স্তরে ডিজিটাল প্রযুক্তি শিক্ষা বিষয়ে ৫০ নম্বর হলেও মাধ্যমিক স্তরে ১০০ ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বিষয়টির মান হতে হবে ২০০। স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা, ইংরেজী-বাংলা-আরবী মাধ্যম নির্বিশেষে সকলের জন্য এটি অবশ্য পাঠ্য হতে হবে। পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় বিষয়টিকে অপশনাল নয়, বাধ্যতামূলক করতে হবে। এজন্য সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এই খাতের অবস্থাটি নাজুক। বর্তমানে স্কুল ও কলেজ স্তরে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়টি বাধ্যতামূলক হলেও স্কুল ও কলেজ স্তরে শতকরা ৪০ ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নেই। এমনকি যারা শিক্ষকতা করছে তারা এমপিওভুক্ত নয়। অতি সম্প্রতি সরকার এদের দিকে নজর দিয়েছে। তবে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে তা পর্যাপ্ত নয়। এই বিষয়টি পড়ানোর মতো দক্ষ শিক্ষকেরও ব্যাপক অভাব রয়েছে। এই শিক্ষার জন্য উপযুক্ত পাঠক্রম ও প্রয়োজনীয় এবং উন্নতমানের পাঠ্যবই থাকতে হবে। এই খাতে শিক্ষক প্রশিক্ষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ২০১৮ সাল নাগাদ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে বিষয়টি পাঠ্য হলেও প্রাথমিকে এই বিষয়ে কোন উদ্যোগও নেয়া হয়নি। ২০২১ সালের আগেই প্রাথমিক স্তরে ডিজিটাল প্রযুক্তি শিক্ষা, রোবটিক্স ও প্রোগ্রামিং বাধ্যতামূলক করতে হবে। এমনকি প্রাথমিক স্তর থেকেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিক্স ইত্যাদিরও পাঠ্য করতে হবে। খ. দ্বিতীয়ত প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতি ২০ জন ছাত্রের জন্য একটি করে কম্পিউটার/ল্যাপটপ আনুপাতিক হিসেবে কম্পিউটার ল্যাব গড়ে তুলতে হবে। এই কম্পিউটারগুলো শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে ডিজিটাল যন্ত্র ব্যবহার করতে শেখাবে। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীরা যাতে সহজে নিজেরা এমন যন্ত্রের স্বত্বাধিকারী হতে পারে রাষ্ট্রকে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষায় ইন্টারনেট ব্যবহারকে শিক্ষার্থী-শিক্ষক-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয়ত্তের মাঝে আনতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষার্থী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে দিতে হবে। দেশজুড়ে বিনামূল্যের ওয়াইফাই জোন গড়ে তুললে শিক্ষায় ইন্টারনেটের ব্যবহারকে সম্প্রসারিত করবে। ইন্টারনেটকে শিক্ষা সম্প্রসারণের বাহক হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। ইন্টারনেটের গতি বাড়াতে হবে এবং ইন্টারনেটকে সাশ্রয়ী করতে হবে। শিক্ষার ডিজিটাল উপাত্তকে ইন্টারনেটে পাবার ব্যবস্থা করতে হবে। গ. তৃতীয়ত প্রতিটি ক্লাসরুমকে ডিজিটাল ক্লাসরুম বানাতে হবে। প্রচলিত চক, ডাস্টার, খাতা-কলম ও বইকে কম্পিউটার, ট্যাবলেট পিসি, স্মার্টফোন, বড় পর্দার মনিটর/টিভি বা প্রজেক্টর দিয়ে স্থলাভিষিক্ত করতে হবে। প্রচলিত স্কুলের অবকাঠামোকে ডিজিটাল ক্লাসরুমের উপযুক্ত করে তৈরি করতে হবে। ক্লাসরুম ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যার দিয়ে করতে হবে। ক্লাসরুম মূল্যায়ন ব্যবস্থাকেও ডিজিটাল করতে হবে। এজন্য শিক্ষক প্রশিক্ষণ অত্যাবশ্যক। ঘ. চতুর্থত সকল পাঠ্য বিষয়কে ডিজিটাল যুগের জ্ঞানকর্মী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য উপযোগী পাঠক্রম ও বিষয় নির্ধারণ করে সেসব কনটেন্টসকে ডিজিটাল কনটেন্টে পরিণত করতে হবে। পরীক্ষা পদ্ধতি বা মূল্যায়নকেও ডিজিটাল করতে হবে। অবশ্যই বিদ্যমান পাঠক্রম হুবহু অনুসরণ করা যাবে না এবং ডিজিটাল ক্লাসরুমে কেবল কাগজের বই দিয়ে শিক্ষা দান করা যাবে না। কনটেন্ট যদি ডিজিটাল না হয় তবে ডিজিটাল ক্লাসরুম অচল হয়ে যাবে। এসব কনটেন্টকে মাল্টিমিডিয়া ও ইন্টারএ্যাকটিভ হতে হবে। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ডিজিটাল যুগের বা জ্ঞানভিত্তিক সমাজের উপযোগী বিষয়বস্তু শিক্ষা দেয়া। আমাদের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় কার্যত এমনসব বিষয়ে পাঠদান করা হয় যা কৃষি বা শিল্পযুগের উপযোগী। ডিজিটাল যুগের বিষয়গুলো আমাদের দেশে পড়ানোই হয় না। সেইসব বিষয় বাছাই করে তার জন্য পাঠক্রম তৈরি করতে হবে। ঙ. পঞ্চমত সকল শিক্ষককে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠদানের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সকল আয়োজন বিফলে যাবে যদি শিক্ষকগণ ডিজিটাল কনটেন্ট, ডিজিটাল ক্লাসরুম ব্যবহার করতে না পারেন বা ডিজিটাল পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করতে না জানেন। তারা নিজেরা যাতে কনটেন্ট তৈরি করতে পারেন তারও প্রশিক্ষণ তাদের দিতে হবে। কিন্তু শিক্ষকগণ কোন অবস্থাতেই পেশাদারি কনটেন্ট তৈরি করতে পারবেন না। ফলে পেশাদারি কনটেন্টস তৈরির একটি চলমান প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হবে। প্রস্তাবিত ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়কে ডিজিটাল শিক্ষার গবেষণা ও প্রয়োগে নেতৃত্ব দেয়ার উপযোগী করে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ক্রমান্বয়ে সকল বিশ্ববিদ্যালয়কে ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করতে হবে। চ. ষষ্ঠত তিরিশের নিচের সকল মানুষকে তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ জনগোষ্ঠী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তিতে বিশ্বজুড়ে যে কাজের বাজার আছে সেই বাজার অনুপাতে প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের যেসব মানবসম্পদবিষয়ক প্রকল্প রয়েছে তাকে কার্যকর ও সময়োপযোগী করতে হবে। দেশের কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এজন্য সরকার স্থাপিত ইউনিয়ন ডিজিটাল কেন্দ্রসমূহও ব্যবহƒত হতে পারে। আমি বিশেষ করে বিশ্বব্যাংকের এলআইসিটি প্রকল্প, বেসিসের প্রশিক্ষণ প্রকল্পসহ, আউটসোর্সিং প্রশিক্ষণ কর্মসূচী ও অন্যান্য মানবসম্পদ গড়ে তোলার প্রকল্পগুলোকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য অনুরোধ করছি। এখনও প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের ধারা বাস্তবমুখী ও সঠিক নয়। ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে সরকারের জন্য কঠিনতম চ্যালেঞ্জ। এখনও যেখানে শিক্ষার হারই ৭০-এর কাছে এবং যেখানে আমরা কেবল শিল্পযুগের শিক্ষায় আছি তাতে এটি হচ্ছে একটি মহাযজ্ঞ। তবে শিক্ষার রূপান্তর ছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা ভাবাই যায় না। লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাস-এর চেয়ারম্যান- সাংবাদিক, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যার-এর জনক
×