ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাদল দিনে বিদায়ী শরতের প্রতি ভালবাসা

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১৪ অক্টোবর ২০১৮

বাদল দিনে বিদায়ী শরতের প্রতি ভালবাসা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সকালের আকাশে ছিল মেঘের আনাগোনা। তাই চোখে পড়েনি নীল দিগন্ত। ঝরেছে বৃষ্টিধারা। তাই বলে থেমে থাকেনি শরতের বন্দনা। আকাশের নীল রংটি যুক্ত হয়েছিল উৎসবের শরীরে। চারুকলার বকুলতলায় নৃত্য-গীত আর কবিতায় প্রিয় ঋতুর প্রতি জানানো হয়েছে ভালবাসা। শুধু সকাল নয় বিকেলেও ছিল বহুমাত্রিক পরিবেশনা। সবমিলিয়ে বাদল দিনে বিদায়ী বেলায় আরেকবার অভিবাদন জানানো হলো ¯িœগ্ধ ঋতু শরতকে। শনিবার সকালে বৃষ্টিকে সঙ্গী করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় অনুষ্ঠিত হয়েছে শরত উৎসব। বিপুলসংখ্যক না হলেও একেবারে কম ছিল না উৎসব উদ্যাপনে আসা মানুষের সংখ্যা। শরীরে বৃষ্টি মেখে কিংবা মাথায় ছাতা মেলে উপভোগ করেছেন আয়োজন। মন মাতানো এই ঋতু বন্দনার আয়োজন করে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েছিল বকুলতলার নিচের মূল মঞ্চটি। তাই সেখানে শুধু পরিবেশিত হয়েছে নৃত্য। বাকি পরিবেশনাগুলো উপস্থাপিত হয়েছে মূল মঞ্চের পরিবর্তে ঘোষণা মঞ্চে। সন্তুরের মিষ্টি বাজনায় শুরু হয় সকালের আয়োজন। সুরটি ছড়িয়ে দেন শিল্পী নুুরুল হক। তার সঙ্গে ছিল তুলসী সাহার তবলার বোল। যন্ত্রসঙ্গীতের বাজনা শেষে কবিতার শিল্পিত উচ্চারণ ও গানের সুরে এগিয়ে চলে অনুষ্ঠান। এ পর্যায়ে ‘অমল ধবল পালে’ শীর্ষক রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী মহাদেব ঘোষ। অনিমা রায়ের কণ্ঠে গীত হয় ‘আমার রাত পোহালো’। নজরুলের ‘ভোরে ঝিলের জলে শালুক-পদ্ম তোলে’ গানটি গেয়ে শোনসান সুমন মজুমদার আর ‘শিউলি ফুল দোলে’ পরিবেশন করেন সঞ্জয় কবিরাজ। বিমান চন্দ্র বিশ্বাস কণ্ঠে তুলের নেন শেকড়েসন্ধানী লোকগান ‘আকাশ বল আমারে’। নজরুলের ‘বাংলাদেশ নম নম নম’ কবিতাটি কণ্ঠে তুলে নেন বাচিকশিল্পী নায়লা তারান্নুম চৌধুরী কাকলী। ‘মেঘের কোলে রোদ হেসেছে’ গানের সুরে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যাক্ষের নৃত্যশিল্পীরা । ‘শিশিরে শিশিরে সারদ আকাশে’ গানের সুরে স্পন্দন এবং ‘তুমি কি কেবলি ছবি’ ও ‘আমার পরাণ যাহা চায়’ গানের নাজ করে নৃত্যজনের শিল্পীরা। সুরবিহারের শিল্পীরা সম্মেলক কণ্ঠে পরিবেশন করেছে ‘মেঘের কোলে রোদ হেসেছে’। সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী শুনিয়েছে ‘আজি শারদ প্রাতে শিউলি বিছানো পথে’। ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা গেয়েছে ‘আজও আছে একতারা আর নকশিকাঁথার মাঠ’ এবং বহ্নিশিখা’র শিল্পীরা পরিবেশন করেন ‘বিশ্ব সাথে জেগে যেথায়, বিহারো’। এছাড়াও সম্মেলক কণ্ঠে সঙ্গীত পরিবেশন করে সুরতীর্থর শিল্পীরা। নাচ-গান আর কবিতার মাঝে ছিল শরত কথন। আবহমান বাংলা ¯িœগ্ধ ঋতুটির তাৎপর্য তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান। আয়োজক সংগঠনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক নিগার চৌধুরীর সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট। আখতারুজ্জামান বলেন, বর্ষা শেষে অপেক্ষা, কখন আসবে শান্ত-¯িœগ্ধ একটি সুন্দর সময়! এখন সেই সময়; এখন আকাশে ভেসে বেড়ায় সাদা-কালো মেঘ, কখনও আবার আবছায়া আলো-আঁধারি। প্রকৃতির এমন খেলায় শরতের আনন্দোৎসব এসে জানিয়ে গেল, আমাদের সামনের দিনগুলো আলোকময়। সকালের অনুষ্ঠান শেষে মাঝে কয়েক ঘণ্টার বিরতি দিয়ে বিকেলে শুরু হয় উৎসবের দ্বিতীয় পর্ব। এ পর্বে দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে স্ব-ভূমি লেখক শিল্পী কেন্দ্র, গীতশতদল, সমস্বর ও পঞ্চভাস্কর। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে কণ্ঠশীলন ও ঢাকা স্বরকল্পন। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন রেজীনা ওয়ালী লীনা, ফয়জুল আলম পাপ্্পু, মাসুদুজ্জামান, আহসান উল্লাহ তমাল ও আজিজুল বাশার মাসুম। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে আঙ্গীকাম, নটরাজ, স্বপ্নবিকাশ কলা কেন্দ্র ও ঘাসফুল নদী শিল্পীগোষ্ঠী। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী মীরা ম-ল, ফেরদৌসী কাকলী, রতœা সরকার, নবনীতা জাইদ চৌধুরী অনন্যা, আবিদা রহমান সেতু, শিমুল সাহা, সৌরভ, সঞ্জয় কবিরাজ, মাহজাবিন রহমান শাওলী, এস.এম মেজবাহ, আঁখি বৈদ্য ও আরিফ রহমান। গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব ॥ নাটকের সঙ্গে বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় এখন জমজমাট শিল্পকলা একাডেমির আঙ্গিনা। এখানে চলছে এগারো দিনব্যাপী গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব। গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব পর্ষদ আয়োজিত উৎসবটির নবম দিন শনিবার। এদিন বিকেলে নাট্যশালার মুক্ত মঞ্চে শিশু সংগঠন পরিবেশনায় অংশ নেয় কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর। পথনাটক পরিবেশন করে নাট্যকুঞ্জ। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে মুক্তধারা আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র ও ¯্রােত আবৃত্তি সংসদ। দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে ক্রন্তি শিল্পীগোষ্ঠী ও উজান। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে আঙ্গিকাম। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন গোলাম সারোয়ার, বেলায়েত হোসেন ও তামান্না সারোয়ার নীপা। সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালার তিনটি হলেই পরিবেশিত হয়েছে নাটক। মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয়েছে শিল্পকলা একাডেমির প্রযোজনা ‘হ্যামলেট’। উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের কাহিনী অবলম্বনে নাটকটির অনুবাদ করেছেন সৈয়দ শামসুল হক। নির্দেশনা দিয়েছেন আতাউর রহমান। এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হয়েছে সিরাজগঞ্জের তরুণ সম্প্রদায়ের প্রযোজনা ‘অসমাপ্ত’। মাহফুজা হেলালী রচিত নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন আমিনুর রহমান মুকুল। স্টুডিও থিয়েটার হলে পরিবেশিত হয় অবয়ব নাট্যদলের নাটক ‘ফেরিওয়ালা’। আসাদুজ্জামান দুলালের রচনায় নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন শহিদুল হক শ্যানন। আজ রবিবার মুক্তমঞ্চের অনুষ্ঠান শুরু হবে বিকেল সাড়ে ৪টায়। অনুষ্ঠানে থাকবে নাচ, গান, আবৃত্তি, পথনাটক ও শিশু কিশোর পরিবেশনা। সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মহাকাল নাট্য সম্প্রদায় পরিবেশন করবে ‘শ্রাবণ ট্র্যাজেডি’ নামের নাটক। এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় মঞ্চস্থ করবে ‘গ্যালিলিও’ এবং স্টুডিও থিয়েটার হলে পরিবেশিত হবে নাট্যদলের নাটক ‘ইতিবৃত্ত’।
×