ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তরখানে গ্যাসের চুলার আগুনে নিহত ১, দগ্ধ ৭

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১৪ অক্টোবর ২০১৮

উত্তরখানে গ্যাসের চুলার আগুনে নিহত ১, দগ্ধ ৭

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর উত্তরখানে একটি ফ্ল্যাটে গ্যাসের চুলা থেকে আগুন লেগে একজন নিহত হয়েছেন। এ সময় সাতজন দগ্ধ হয়েছে। নিহতের নাম মোঃ আজিজুল (২৭)। তার শরীরের শতকরা ৯৯ ভাগ পুড়ে গিয়েছিল। আহতদের মধ্যে, সাগর (২২) ৬৬ শতাংশ, ডাবলুর (৩৩) ৬৫ শতাংশ, সুফিয়ার (৫০) ৯৯ শতাংশ, মুসলিমার (৪০) ৯৮ শতাংশ, পূর্ণিমার (৩৫) ৮০ শতাংশ, আবদুল্লাহর (৫) ১২ শতাংশ ও আঞ্জুর (২৫) ৬ শতাংশ পুড়ে গেছে। ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আবাসিক চিকিৎসক পার্থ শঙ্কর পাল জানান, আহতদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। দগ্ধ সকলের শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। এদিকে ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, চুলা বন্ধ না রাখার কারণে নাকি পাইপ লিকেজ থেকে আগুন লেগেছে তা নিশ্চিত নয়। তদন্ত করা হচ্ছে। তবে পুলিশ মনে করছে, রাতে গ্যাস চলে যাওয়ায় অনবধানবশত চুলা বন্ধ করেননি ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা। শনিবার ভোরের দিকে গ্যাস চলে আসায় কক্ষগুলো গ্যাসে ভর্তি হয়ে থাকে। এরপর আগুন জ্বালানো মাত্র চারপাশে ভয়াবহভাবে তা ছড়িয়ে যায়। পরে ওই ফ্ল্যাটে থাকা একই পরিবারের ৮জন দগ্ধ হন। তাদের মধ্যে চারজন নারী, তিনজন পুরুষ ও একটি শিশু। পরে হাসপাতালে একজনের মৃত্যু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, নিহত ও আহতদের গ্রামের বাড়ি পাবনা জেলার ভাঙ্গুরা উপজেলার গোবিন্দপুর এলাকায়। উত্তরখানের হেলাল মার্কেটের পাশে ১১০/এ নম্বর তৃতীয় তলার বাড়ির নিচতলায় পোশাক কারখানায় কাজ করা তিনটি পরিবার সেখানে সাবলেট থাকেন। হতাহতরা তিনটি পরিবার একে অপরের আত্মীয়। উত্তরখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন জানান, অনবধানতার কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি জানান, শুক্রবার রাতের বেলায় বাড়িটির চুলায় গ্যাস ছিল না। অসতর্ক অবস্থায় চুলার সুইচ বন্ধ না করেই তারা ঘুমিয়ে পড়েন। পরদিন শনিবার ভোরের দিকে চুলায় গ্যাস আসার পর রুমে দরজা জানালা বন্ধ ছিল। এতে গ্যাস বের হতে না পারায় রুমে গ্যাস জমাট বাঁধে। ওসি জানান, প্রতিদিনের মতো ভোরের দিকে ঘুম থেকে উঠে ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা রান্না করতে আগুন জ্বালানো মাত্রই আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ফ্ল্যাটে তিন পরিবারের ৮ সদস্য দগ্ধ হন। পরে তাদের বাঁচাও বাঁচাও আর্তচিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ওই ফ্ল্যাটের মালিক মেহেদি হাসান জানান, দেড় বছর আগে ওই তিন পরিবার ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেয়। তারা সবাই গার্মেন্টসে কাজ করেন। তিনি জানান, চুলা খোলা রাখার কারণে গ্যাস রুমে জমাট বাঁধা ছিল। সকালে রান্না করতে আগুন ধরার সঙ্গে সঙ্গে তা ছড়িয়ে পড়ে ওই পরিবারের সকলে দগ্ধ হয়েছেন। আগুনে বাড়ির কাঠামোগত ক্ষতি কম হয়েছে। উত্তরা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা মোঃ সফিকুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে তিন পরিবারের আটজনকে দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি জানান, তিনতলা ভবনের নিচতলার একটি ফ্ল্যাটে আগুন লাগে। ফ্ল্যাটে তিনটি ছোট ছোট কক্ষ ও একটি রান্নাঘর। রান্নাঘরের চুলা থেকেই আগুন লাগে। জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা মোঃ সফিকুল ইসলাম জানান, গ্যাসের চুলা বন্ধ না রাখায়, নাকি গ্যাসের পাইপ লাইনে লিকেজ থাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তদন্ত করে জানানো হবে। ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) বাচ্চু মিয়া জানান, উত্তরখানে একটি ফ্ল্যাটে গ্যাসের চুলা থেকে আগুন লেগে সকালে মারাত্মক দগ্ধ অবস্থায় একই পরিবারের ৮ জনকে দগ্ধ অবস্থায় বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে সকাল ১০টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোঃ আজিজুল (২৭) নামে একজনের মৃত্যু হয়। পরে বিকেলে ঢামেক মর্গে তার লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
×