ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের অর্থমন্ত্রী মুহিত ;###;রোহিঙ্গাদের জন্য যে অর্থ খরচ হবে তার পুরোটাই ব্যবস্থা করে দেবে

উন্নয়নে পাশে থাকবে বিশ্বব্যাংক

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৪ অক্টোবর ২০১৮

উন্নয়নে পাশে থাকবে বিশ্বব্যাংক

এম শাহজাহান, ইন্দোনেশিয়ার বালি থেকে ॥ আর্থ-সামাজিকসহ সব ধরনের উন্নয়নে বাংলাদেশের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে দীর্ঘদিন যে টানাপোড়েন ছিল তা এখন অতীত বরং বিদ্যুত, জ্বালানি, মানবসম্পদ ও শিক্ষাসহ সব ধরনের অবকাঠামো উন্নয়নে সহায়তা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই দাতা সংস্থা। রোহিঙ্গাদের জন্য যে অর্থ খরচ হবে তার পুরোটাই ব্যবস্থা করে দেবে বিশ্বব্যাংক। অর্থায়নের জন্য সুইডেন, জার্মানি, কুয়েত ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের আলোচনা হয়েছে। কানাডা ইতোমধ্যে কিছু অর্থ দিয়েছে। শনিবার ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপের নুসা দুয়া ওয়েস্টিন হোটেলে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিমের সঙ্গে বৈঠকের পর বিকেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় কালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এসব কথা জানান। অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন চলমান প্রকল্প বাস্তবায়নে আগামী এক বছরের জন্য ৩৮ হাজার কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। ব্যয়ের সক্ষমতা অনুযায়ী পুরো টাকা দিতে রাজি হয়েছে বিশ্বব্যাংক। রোহিঙ্গাদের ভরণপোষণের জন্য আগামী দুই বছরের জন্য ১ বিলিয়ন ডলারের অনুদান প্রাপ্তিতে সহায়তা করবে এই দাতা সংস্থা। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের নেয়া বড় বড় প্রকল্পগুলোতে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন করতে আগ্রহী। বিশ্বব্যাংক বলছে, দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ এখন সারাবিশ্বের রোল মডেল। তিনি বলেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ নিরসন হওয়া প্রয়োজন। এই যুদ্ধের ফলে সারা বিশ্বের বাণিজ্যিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বিশ্ব পর্যায়ের নেতৃত্ব এখন বাংলাদেশের প্রাপ্য। কারণ এর ফলে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শুধু তাই নয় ১৯৯২ সালে বাপার নেতৃত্বে তিনিই বিশ্বে প্রথম পরিবেশ আন্দোলন শুরু করেছিলেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, পরিবেশ রক্ষায় দেশে কার্বন ট্যাক্স আরোপ করা যায় কি না সেটা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। আরেক প্রশ্নের জবাবে মুহিত বলেন, বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের চমৎকার সম্পর্ক বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে সব ধরনের ভুল বুঝাবুঝির অবসান হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী বর্তমান সরকারের নেয়া সব ধরনের প্রকল্পে অর্থায়ন করার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশের রাজনীতি ও আগামী নির্বাচন নিয়ে বিশ্বব্যাংকের কোন আগ্রহ নেই। বরং সরকারের ধারাবাহিকতা থাকলে চলমান প্রকল্পগুলো আরও ভালভাবে করা যাবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী বছরের জন্য আমরা সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার চেয়েছি তারা ইতোমধ্যে দুই বিলিয়ন ডলার দিতে রাজি হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে ব্যয় করতে পারলে সংস্থাটির কাছ থেকে চাহিদা মতো অর্থ সংগ্রহ করা যাবে। বিশ্বব্যাংক আফ্রিকার দেশগুলোর জন্য যে অর্থ বরাদ্দ দিয়েছিল তারা সেই অর্থ ব্যয় করতে পারেনি। নিয়ম অনুযায়ী ব্যয় করতে না পারলে সেই অর্থ যারা ব্যয় করতে সক্ষম তাদের কাছে যাবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, সেই কারণে চাহিদামতো বাংলাদেশ পুরো অর্থ পাবে। প্রসঙ্গত, বিশ্ব ব্যাংক তিন বছরে (২০১৭-১৮ থেকে ২০১৯-২০) বাংলাদেশকে ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সেই অর্থের পুরোটা দুই বছরেই ব্যয় করা হয়েছে। এ কারণে চলমান প্রকল্প চালিয়ে নিতে তাদের কাছ থেকে বাকি এক বছরের জন্য আরও ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার চায় বাংলাদেশ। এর আগে সকালে বাংলাদেশের উন্নয়নে সহায়তা অব্যাহত রাখায় বিশ্ব ব্যাংককে ধন্যবাদ জানান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। মিয়ানমার থেকে আসা ১১ লাখ রোহিঙ্গা পুনর্বাসনে সংস্থাটি দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তিনি। মুহিত বলেন, বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্টের সঙ্গে রোহিঙ্গা নিয়েই সব আলোচনা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট বলেছেন, অসহায় এই মানুষগুলোর সহায়তার জন্য যে খরচ হবে, তার ব্যবস্থা বিশ্বব্যাংক করবে। আমাদের সরকারের কোন অর্থ খরচের প্রয়োজন পড়বে না। মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার হয়ে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে রয়েছে। তাদের ফেরানোর উদ্যোগ নেয়া হলেও তাতে অগ্রগতি নেই। এই শরণার্থীরা জনবহুল বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বড় চাপ সৃষ্টি করেছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বারবারই বলা হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী জানান, আগামী দুই বছরে রোহিঙ্গাদের জন্য দুই বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে। কোন ঋণ নয়, পুরোটাই অনুদানের ব্যবস্থা করবে বিশ্বব্যাংক। এক বিলিয়ন ডলার করে দুই বছরে দুই বিলিয়ন ডলারের এই অর্থের বেশির ভাগ দেবে বিশ্বব্যাংক। বাকি অর্থ অন্যান্য দাতা দেশ এবং সংস্থার কাছ থেকে জোগাড় করে দেবে। রোহিঙ্গাদের জন্য ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ৫০ কোটি ডলারের একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আরও ২০ কোটি ডলারের চুক্তি হবে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবির সঙ্গে প্রথম পর্যায়ে ১০ কোটি ডলারের চুক্তি হয়েছে। আরও ১০ কোটি ডলারের চুক্তি হবে শীঘ্রই। অন্যান্য দাতা দেশ ও সংস্থার সঙ্গেও এ বিষয়ে দ্রুত চুক্তি হবে। এর আগে সকালে বিশ্বব্যাংক প্রধানের সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সম্মেলনে অংশ নেয়া বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের প্রধান মুহিতের দিনের কার্যক্রম। ওই সময় বৈঠকের শুরুতেই মুহিত বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিমকে স্বাগত জানান। এরপর তিনি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের উন্নয়নে ঋণ-সহায়তা দিয়ে অবদান রাখার জন্য বিশ্বব্যাংক প্রধানকে ধন্যবাদ জানান। এ সময় মুহিত রোহিঙ্গাদের সহায়তায় শুরু থেকেই এগিয়ে আসার জন্য জিম ইয়ং কিমকে ধন্যবাদ জানিয়ে দীর্ঘমেয়াদে এই অসহায় মানুষগুলোর পুনর্বাসনে সহায়তা অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানান। বৈঠকে বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব কাজী শফিকুল আযম অংশগ্রহণ করেন।
×