ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নিষ্ক্রিয় প্রশাসন

বঙ্গবন্ধুর দেয়া শহীদ পরিবারের জমি দখল করল সন্ত্রাসীরা

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৪ অক্টোবর ২০১৮

বঙ্গবন্ধুর দেয়া শহীদ পরিবারের জমি দখল করল সন্ত্রাসীরা

ফিরোজ মান্না ॥ রাজধানীর পুরান ঢাকায় চলছে সরকার মালিকানাধীন অর্পিত সম্পত্তি দখলের মহোৎসব। এবার বেদখল হলো স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত শহীদ একেএম শামসুল হাসান খানের পরিবারকে লিজ দেয়া চার কাঠা জমি (ভবনসহ)। জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দফতরকে ম্যানেজ করে দখল বাণিজ্য চালাচ্ছে। সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে দিনের পর দিন এ কাজ করে যাচ্ছে। থানা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও কোন লাভ হচ্ছে না। সর্বশেষ শহীদ পরিবারের সদস্য শামসুল হাসান খান ১৯৭৫ সালে লিজ পাওয়া জমি দখলকারী বিএনপি নেতা জাবেদ উদ্দিনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেও কোন ফল পাননি। ডিসি বরাবর আবেদন করেন। কিন্ত ডিসিও কোন প্রতিকার করেনি। এমন এক অবস্থায় শহীদ পরিবারের সদস্যরা সন্ত্রাসী আবেদের ভয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। শহীদ পরিবারের সদস্য শামসুল হাসান খান বলেন, ১৯৭৫ সালে আমার বাবা আজাহারুল হক খানকে বঙ্গবন্ধু শহীদ পরিবারের সদস্য হিসেবে নবাবপুর রোডের ২২১ নম্বর প্লট (চার কাঠা) লিজ প্রদান করেন। আমরা প্রতিবছর লিজের টাকা পরিশোধ করে ভোগ করে আসছি। ২০১৭ সালেও লিজ মানি এক লাখ চব্বিশ হাজার ছয় শ’ পঁচাত্তর টাকা পরিশোধ করেছি। এই জমির মূল মালিক ছিলেন গোপীনাথ বসাক। তিনি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি আর দেশে ফিরে আসেননি। সরকার জমিটি অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করে। পুরান ঢাকায় এ রকম কয়েক শ’ বাড়ি অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে বিভিন্নজনকে লিজ দেয়া হয়। আবার কিছু জায়গা দখলদাররা ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে দখল করে নেয়। আমাদের জমিটি দখল নেয়ার আগে ২২২ নম্বর বাড়িটি (৮ কাঠা) জাবেদ ও তার ভাই আবেদ দখল করে নিয়ে বিশাল টাওয়ার নির্মাণ করেছে। এখন আমাদের জমিটি দখলে নিয়ে বিশাল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে। জাবেদ এলাকায় একজন সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত। তিনি এ রকম বেশ কয়েকটি বাড়ি দখল করে ভবন নির্মাণ করে ফ্ল্যাট বিক্রি করে দিয়েছেন। তার সঙ্গে থানা পুলিশ এমনকি ডিসি অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার সুসম্পর্ক রয়েছে। তাদের সহযোগিতায় একের পর এক বাড়ি দখল করে নিলেও প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থায় নেয় না। শামসুল হাসান খান অভিযোগ করেন, মেয়র পদে মির্জা আব্বাস যখন নির্বাচন করেছিলেন তখন মির্জা আব্বাসের ছবি দিয়ে ৩৪ নং ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে হাজী শেখ মোঃ আবেদ উদ্দিন ঘুড়ি মার্কায় নির্বাচন করেন। সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গেও তার পোস্টার রয়েছে। সর্বশেষ মির্জা আব্বাসের স্ত্রী মেয়র পদে নির্বাচন করার সময়ও তার ছবি দিয়ে পোস্টার দিয়েছিলেন। বিএনপির এমন একজন সমর্থক নেতা এই সময়ে কি করে এত ক্ষমতা দেখায়? থানায় তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এর পরও পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোন কিছু বলে না। বরং থানার অনেক কর্মকর্তার সঙ্গে রয়েছে ভাই-বন্ধু সম্পর্ক। বিষয়টি নিয়ে বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাহিদুর রহমান বলেন, থানায় শামসুল হাসান খান বাদী হয়ে যে মামলা করেছিল ওই মামলায় জাবেদ উদ্দিনসহ ২৫-৩০ জনকে আসামি করা হয়। বর্তমানে জাবেদ উদ্দিন জামিনে। অভিযোগকারী তার দোকান দখল করে নেয়ার মামলা করেছিল। তাছাড়া জায়গাটি অর্পিত সম্পত্তি হলে তো ডিসি দেখবেন। আমি তো এ বিষয়ে কিছু করতে পারব না। দোকান দখল করে নেয়ার বিষয়টি তিনি জানলেও জমি দখলের বিষয়টি জানেন না বলে ওসি জানান। ঢাকার ডিসি বরাবর একটি আবেদন করে শামসুল হাসান খান। ওই আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, ভূমিদস্যু মোঃ জাবেদ উদ্দিন শেখসহ তার সঙ্গীয় ৩০/৩৫ সন্ত্রাসী কর্তৃক অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যাবর্তন তালিকার ‘ক’ তফসিলভুক্ত ৬৫৩/৬০ ভিপি কেস মূলে অর্পিত সম্পত্তি ২২১, নবাবপুর রোডে হোল্ডিংটির লিজি মোঃ আজাহারুল হক খানের নিকট থেকে অবৈধভাবে সন্ত্রাসী কায়দায় বেদখল করা এবং উক্ত বেদখলকৃত ভূমি আজাহারুল হক খান গংকে ফেরত দেয়ার কথা বলা হয়। এই আবেদনটি গত এক সেপ্টেম্বর ডিসি বরাবর করা হলেও ডিসি ওই আবেদেনে কোন্ পক্ষে কোন্ পদক্ষেপ নেন বলে শামসুল হাসান খান জানান। ওই আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ওই সম্পত্তি কুমিল্লা জেলার সাবেক জেলা প্রশাসক শহীদ বুদ্ধিজীবী সামসুল হক খানের বরাতে তার মাতা মাসুদা খানমের নামে ১৯৭৫ সাল থেকে অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে লিজপ্রাপ্ত হন। পরবর্তীতে এই জমিতে মাসুদা কর্পোরেশন ও এসএইচকে কর্পোরেশন নামে দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। দীর্ঘকাল ধরে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠান দুটি চলে আসছে। হঠাৎ বেআইনীভাবে ভবনসহ চার কাঠা জমি দখল করে নেয় শেখ জাবেদ উদ্দিন। বিষয়টি নিয়ে জাবেদ উদ্দিনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমি কোন জমি দখল করিনি। যে জমির কথা বলা হয়েছে ওই জমির মালিক দেশেই থাকেন। তার নাম তপন কুমার বসাক। সরকার যখন অর্পিত সম্পত্তি জমির মালিককে ফেরত দেয় তখন এই জমির মালিক তপন কুমার বসাক মালিক হয়ে যান। পরে তপন কুমার বসাক জমিটির পাওয়ার অব এ্যাটর্নি করে দেন মিরাজের কাছে। পাওয়ার অব এ্যাটর্নি বলে জমিতে ভবন তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে। বিষয়টি জানতে গেলে জাবেদ উদ্দিন এই প্রতিবেদককে হুমকির সুরে কথা বলেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি কোন রাজনীতি করি না। আমি একজন ব্যবসায়ী সেই হিসেবে আমার একটি দল আছে। দলটি হচ্ছে নবাবপুর ইলেক্ট্রিক এ্যাসোসিয়েশন সোসাইটি অব বাংলাদেশ। আমি ওই দলের নেতা। বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের সঙ্গে পোস্টারে তার ছবি দিয়ে কাউন্সিলর নির্বাচন করার বিষয়টি প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, দেশের সব মানুষই কোন না কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত। আমিও এক সময় ছিলাম। আমার সঙ্গে মির্জা আব্বাসের স্ত্রীর সঙ্গে পোস্টারে ছবি আছে। এর আগে সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে ছবি রয়েছে। এখন আমি শেখ হাসিনার বাবার মৃত্যুবার্ষিকী পালন করি। সেই ছবি দেখতে চান। আমরা ব্যবসায়ী আমাদের সব দলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হয়। তাই এখন ১৫ আগস্টসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করছি। অন্য আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি কোন জমি দখল করিনি। আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হচ্ছে।
×