ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অভিযানে আরও ৫০ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার

ধরা পড়ল রাজধানীর শীর্ষ এক ইয়াবা গডফাদার

প্রকাশিত: ০৫:১০, ১৩ অক্টোবর ২০১৮

 ধরা পড়ল রাজধানীর শীর্ষ এক ইয়াবা গডফাদার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীতে ইয়াবা গডফাদার আবুল কালাম ধরা পড়েছে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে তাকে বাসাবো থেকে আটক করা হয়। এছাড়া মহানগর পুলিশের অভিযানে ধরা পড়েছে আরও ৫০ মাদক ব্যবসায়ী। এ সময় তার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা, গাঁজা ও হেরোইন জব্দ করা হয়। কুখ্যাত এই গডফাদারকে আটক করার জন্য র‌্যাব, পুলিশ ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর দীর্ঘদিন ধরেই অভিযান চালিয়ে আসছিল। আজ আদালতে তার রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হবে। তার অপর সহযোগীরা হচ্ছে- রাকিব, বাবু, শাহীন, আলমগীর, মিন্টু ও দেলোয়ার। জানা যায়, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক খোরশিদ আলম, গুলশান জোনের পরিদর্শক এস এস সামসুল কবীর ও কামরুল ইসলামের নেতৃত্বে এ অভিযান চলে টানা চব্বিশ ঘণ্টা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ‘চেইন’ ধরে অভিযান চালানো হয়। আবুল কালামকে ‘গড ফাদার’ বলছেন অধিদফতরের কর্মকর্তারা। তার বাসার আলমারি থেকেই উদ্বার করা হয় ৯ হাজার পিস ইয়াবা ও একটি দামী মোটরসাইকেল। খোরশিদ আলম জানান, প্রথমে শান্তিনগর থেকে ধরা হয় ১২৫ পিস ইয়াবা সহ বাবু ও শাহীনকে। তাদের দেয়া তথ্যমতে, চৌধুরীপাড়া থেকে ধরা হয় রাকিবকে ৫০ পিস ইয়াবাসহ। সে জানায়, আলমগীর ও দেলোয়ারের কাছ থেকে সংগ্রহ করে ইয়াবা। পরে তাদের দেয়া তথ্যে বাসাবো মদীনারবাগ থেকে ধরা হয় আবুল কালামকে। তার বাসা থেকে জব্দ করা হয় ৯ হাজার পিস ইয়াবা। ধৃত আবুল কালাম আজাদ খুবই ধূর্ত প্রকৃতির। সে জানিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক কর্তার কাছ থেকে নিয়মিত ইয়াবা সংগ্রহ করত। এদিকে পরিদর্শক কামরুল ইসলাম রামপুরার আল কাদিরিয়া হোটেলে অভিযান চালিয়ে সেনাবাহিনীর এক অবসরপ্রাপ্ত কর্পোরাল মান্নানকে (৫০) আটক করে। তার কাছ থেকে উদ্বার করা হয় ১ হাজার পিস ইয়াবা। জিজ্ঞাসাবাদে মান্নান জানিয়েছে, তার বাড়ি চকরিয়া। বছর তিনেক আগে সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেয়ার পর থেকেই চাচাত ভাই পারভেজের মাধ্যমে সে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়েছে। কামরুল ইসলাম জানান, মান্নান হার্ডকোর মাদক ব্যবসায়ী ও অপরাধী। তার রমনা থানায় ৩টি মাদক মামলা ও চকোরিয়ায় একটি হত্যাসহ বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। রাতে এ রিপোর্ট লেখার সময় অপর এক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীকে ধরার জন্য তাকে নিয়ে পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডে অভিযান চলছিল। শুক্রবার মোহাম্মদপুর এলাকার পরিদর্শক অভিযান চালিয়ে ২২৩ ক্যান বিয়ারসহ এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে। তাদের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আজ রিমান্ডে আনা হবে বলে জানিয়েছেন পরিদর্শক এসএম সামসুল কবীর। একই সময়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের অভিযানের সময় পালিয়ে যাওয়া এক মাদক বিক্রেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ব্যবসায়ীকে বৃহস্পতিবার রাতে কদমতলী থানার শনির আখড়া থেকে গ্রেফতার করা হয়। উল্লেখ্য গত ১ মে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট সদস্যরা যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইয়াবাসহ মনির হোসেন (৩৮) এবং নবীন হোসেন (২৪) নামে দুইজনকে গ্রেফতার করে। তখন মোঃ শাহেদ (৩৫) নামে অন্যজন দৌড়ে পালিয়ে যায়। পিবিআইর ঢাকা মেট্রোর বিশেষ সুপার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ওই ঘটনার পর যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা হয়। মামলায় শাহেদকে পলাতক দেখানো হয়। অভিযোগপত্র দাখিলের পর আদালতের নির্দেশে তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই। তদন্তকালেই গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শাহেদকে পিবিআই গ্রেফতার করা হয়। মনির ও নবীন একটি বাসের চালক ও হেলপার। শাহেদ ইয়াবা বিক্রেতা। এদিকে রাজধানীতে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে মাদক সেবন ও বিক্রির অভিযোগে ৫০ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। ডিএমপি’র বিভিন্ন থানা ও গোয়েন্দা পুলিশ বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টা থেকে শুক্রবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়। গ্রেফতারের সময় তাদের হেফাজত থেকে ৪৬৯৩ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ২১০ গ্রাম হেরোইন, ১১০ গ্রাম গাঁজা, ২ বোতল ফেনসিডিল ও ৭ ক্যান বিয়ার উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ৩৫টি মামলা করা হয়েছে।
×