ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এক মন্দিরে চার যুগের ইতিহাস

৭০১ প্রতিমার বৃহত্তম দুর্গাম-প, অনন্য উপস্থাপনা

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ১৩ অক্টোবর ২০১৮

৭০১ প্রতিমার বৃহত্তম দুর্গাম-প, অনন্য উপস্থাপনা

বাবুল সরদার, বাগেরহাট ॥ ‘বিশাল মন্দির, এক মন্দিরে চার যুগের নানা কাহিনীর পৃথক উপস্থাপন অপূর্ব। অসাধারণ আয়োজন। আঙ্গিক ও বৈচিত্র্যে অনন্য। সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলিযুগে সনাতন ধর্মের বহুমূর্তির বহুমাত্রিক উপস্থাপন শারদীয় দুগোৎসবে এতটা জাঁকজমক আগে দেখা তো দূরে থাক, কল্পনাও করেনি অনেকে। এখানে না এলে বিশ্বাস করা কঠিন। ...এটা গিনেস ওয়ার্ল্ড বুকে উঠেছে কি, ডকুমেন্টেশন তৈরি করা উচিত...।’ বাগেরহাটে কর্মরত গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সতীনাথ বসাক সম্প্রতি জেলার হাকিমপুরের শিকদার বাড়িতে দুর্গা ম-পে এসে এ প্রতিবেদকে এভাবেই নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন। তিনি এখানে গত বছর থাকলেও হাকিমপুরের পূজা ম-পে যেতে পারেননি। কারণ তার বাড়ি দিনাজপুরে। বাড়িতে পারিবারিকভাবে প্রতিবছর পূজা হয়। ফলে ওই সময় থাকতে পারেন না। কিন্তু বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর এবং নানা জনের মুখে শুনে আগ্রহ হয়েছিল এ মন্দির দেখার। তাই পূজা শুরুর পক্ষকাল আগে অফিসের পর তিনি এবং ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কান্তি ঘোষ সেখানে যান। তিনি মন্দিরের প্রধান চিত্রশিল্পী কয়রার হাতিয়াডাঙ্গা গ্রামের বিজয় কৃষ্ণ বাছাড়ের সঙ্গে কথা বলেন। শিল্পী বিজয় বাছাড় জানান, মূর্তি তৈরিতে বৈশাখ মাস থেকে ১৫ শিল্পী বিরামহীন কাজ করছেন। এখন শেষ সময়ের আঁচড় চলছে। সনাতন ধর্মের সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলিযুগের নানা কাহিনীর পৃথক পৃথক অসাধারণ উপস্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি সামাজিক সুশিক্ষায় ভিন্ন ভিন্ন দৃশ্যের মূর্তি রয়েছে। অপরূপ সাজসজ্জা আর আলোর খেলায় তা আরও মনোমুগ্ধকর উপস্থাপনের চেষ্টাই করা হচ্ছে। এ বছর শারদীয়া উৎসবে ৭০১টি প্রতিমা নিয়ে হাকিমপুরেরর শিকদার বাড়িতে দুর্গাপূজার বিশাল মন্ডপ নতুন সাজে আর্বিভূত হচ্ছে। কলকাতার সীতারামের গীতা প্রেসের বই থেকে সংগৃহীত সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর আর কলিযুগের বিভিন্ন অবতারের লীলা কাহিনী নিয়ে এবার প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে সতীর দেহত্যাগ, দক্ষযোগ্য, শিবপুরাণ, প্রহ্লাদ চরিত্র, নারদ, হনুমান, নবদুর্গা, বিশ্বামিত্রের সঙ্গে শ্রীরামন্ডলন, তাড়কা-সংহার, বিশ্বমিত্রের যজ্ঞ, অহলা উদ্ধার, পুষ্পে বটিকাতে শ্রীরাম-লন, রঙ্গভূমিতে দুই রাজ কুমার, স্বয়ংবর সভায় লক্ষণের রোধ, ধনুক ভঙ্গ, চার কুমারের বিবাহ, পিতার বাক্য পালন, সীতার উপদেশ-বন গমন, শ্রীকৃষ্ণের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ, মাঝির ভাগ্য ও চিত্রকুটের শোভাসহ নানান কাহিনী রয়েছে। কৃতী দম্পতি লিটন ও পূজা শিকদার নতুনত্বের এ ভাবনা নিয়ে ২০১১ সালে শারদীয়া উৎসবে ১৫১টি প্রতিমা দিয়ে পারিবারিক মন্দিরের আয়োজন করেন। সেই শুরু। এরপর প্রতিবছরই প্রতিমার সংখ্যা বাড়ছে। আজ তা ৭০১। আঙ্গিক, বৈচিত্র্য, বিশালত্ব আর উপস্থাপনা মিলিয়ে পারিবারিক দুর্গা মন্দির এখন বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ বলে ধারণা করা হয়। গত বছর ৬০১ প্রতিমা দিয়ে দুর্গা ম-প নির্মাণ করা হয়। মহাষষ্ঠিতে মন্ডপে সার্বজনীন শারদীয়া উৎসবের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধণ শ্রিংলা। এখানে এসেছিলেন সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। তার ভাষায়, সনাতন ধর্মের চার যুগের পৌরাণিক কাহিনী ও পার্বণের ভিন্ন ভিন্ন দৃশ্যের একত্রে এক ম-পে এমন উপস্থাপন আগে কখনও দেখিনি। প্রতিটি প্রতিমা শিল্পীর সুনিপুণ আঁচড়ে যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে। পাশপাশি রয়েছে সামাজিকভাবে মানুষকে সচেতন করে তোলার অনিন্দ্য সুন্দর আয়োজন। স্থানীয় এমপি মীর শওকাত আলী বাদশা বলেন, শিকদার বাড়ির দুর্গা মন্ডপের বিশালত্বে এবং বৈচিত্র্যের কারণে শারদীয় দুর্গা উৎসবে বাগেরহাট এখন আলোচিত ও সমাদৃত। তিনি আয়োজকদের অভিনন্দন জানান। জেলা পূজা উদ্্যাপন কমিটির সভাপতি অমিত রায় বলেন, শিকদার বাড়ির অনন্য আয়োজনের পাশাপশি জেলায় এবার ৬০৮টি মন্দিরে স্বতঃস্ফূর্ত আয়োজনে পালিত হচ্ছে দুর্গোৎসব। জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস ও পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় জানান, প্রতিবছরের মতো এ বছরও আনন্দঘন পরিবেশে দুর্গোৎসব উদ্্যাপিত হচ্ছে। সার্বজনীন দুর্গোৎসবে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসন ও পুলিশ সব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
×