ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

তুরস্কের দাবি ॥ তদন্তের ঘোষণা ট্রাম্পের

সৌদি সাংবাদিক হত্যার প্রমাণ মিলেছে

প্রকাশিত: ০৪:২১, ১৩ অক্টোবর ২০১৮

সৌদি সাংবাদিক হত্যার  প্রমাণ মিলেছে

সাংবাদিক জামাল খাশাগজিকে ইস্তানবুলে সৌদি আরবের কনস্যুলেট ভবনের ভেতর হত্যার প্রমাণ তাদের হাতে আছে বলে দাবি করেছে তুরস্ক। তুরস্ক সরকার যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের বলেছেন, তাদের হাতে এমন কয়েকটি অডিও ও ভিডিও রেকর্ড আছে যা থেকে খাশাগজিকে সৌদি কনস্যুলেটের ভেতর হত্যার প্রমাণ করা সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইস্তানবুলে সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশের পর ভিন্নমতাবলম্বী সাংবাদিক জামাল খাশাগজির নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় তদন্তের ঘোষণা দিয়েছেন। -খবর ওয়াশিংটন পোস্ট ও গার্ডিয়ানের বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটন পোস্ট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে যে, তুরস্ক সরকার যুক্তরাষ্ট্রকে বলেছে যে তাদের কাছে অডিও ও ভিডিও রেকর্ডিং রয়েছে যাতে প্রমাণ হয় খাশাগজিকে কনস্যুলেটের ভেতরে হত্যা করা হয়েছে। রেকর্ডিং সম্পর্কে অবহিত এমন এক ব্যক্তি জানান, আপনারা তার কণ্ঠ শুনতে পাবেন। আরবিতে কথা বলা অনেকের কথা শুনতে পাবেন। আপনারা শুনতে পাবেন কিভাবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ, নির্যাতন ও তারপর হত্যা করা হয়েছে। অপর এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, লোকগুলো সাংবাদিককে পেটাচ্ছেন তা শোনা যাচ্ছে। দ্য মিডেল ইস্ট আই ওয়েবসাইট তুর্কী কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে জানিয়েছে যে, খাশাগজি যখন কনস্যুলেটে প্রবেশ করে তখনই তাকে কনস্যুলেটের জেনারেল অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপরই দ্রুত তাকে দু’ব্যক্তি বেঁধে ফেলেন। আমরা জানি কখন জামাল খাশাগজিকে হত্যা করা হয়েছে, কোন ঘরে তাকে হত্যা করা হয়েছে এবং কোথায় তার মৃতদেহ টুকরা টুকরা করা হয়েছে। যদি ফরেনসিক দলকে সেখানে প্রবেশ করতে দেয়া হয় তাহলে তারা জানতে পারবেন প্রকৃত ঘটনা কি ঘটেছে। এদিকে মঙ্গলবার ওয়াশিংটন পোস্ট দাবি করেছে, সাংবাদিক জামাল খাশাগজিকে আটক করার সৌদি পরিকল্পনা মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা আগে থেকেই জানত। সৌদি কর্মকর্তাদের যোগাযোগে আড়ি পেতে বিষয়টি সম্পর্কে তারা অবহিত হন। ১৫ সদস্যের যে ঘাতক দল ইস্তানবুলে সৌদি কনস্যুলেটে অবস্থান করছিল তাদের মধ্যে একজন ছিলেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ। তিনি হাড় কাটার করাত দিয়ে সাংবাদিক খাশাগজির দেহকে টুকরো টুকরো করেছেন। হত্যা শেষে মাত্র দুই ঘণ্টার ব্যবধানে তার দেহকে তুরস্ক থেকে ভিন্ন কোন দেশে সরিয়ে ফেলা হয়। কূটনীতিকের ছদ্মবেশে থাকা ওই ঘাতকদের প্রত্যেকের নাম ও ছবি প্রকাশ করেছে তুর্কী ডেইলি সাবা পত্রিকা। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, মার্কিন তদন্তকারীরা খাশাগজির নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি কিভাবে হয়েছে তা দেখছেন। তবে তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে ফল যাইহোক না কেন যুক্তরাষ্ট্র রিয়াদের সঙ্গে লাভজনক অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করবে না। ট্রাম্পের ঘোষণার মধ্যদিয়ে সৌদি আরবের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন। কেননা তার পরিকল্পনাতেই ভিন্নমতাবলম্বী সাংবাদিকের ভাগ্যে কি ঘটেছে তার প্রমাণ লোপাট করা হয়েছে। যা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। সৌদি মালিকানাধীন আল আরাবিয়া টিভি নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, সন্দেহভাজন ১৫ ব্যক্তি ইস্তানবুলে একটি বাণিজ্যিক বিমানে করে যান। তারা আসলে পর্যটক। কংগ্রেসে সিনিয়র রিপাবলিকানরা মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাকে পরামর্শ দিয়েছেন যে, যদি সাংবাদিক খাশাগজিকে সৌদি সরকার হত্যা করে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে যেন যুক্তরাষ্ট্র শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়। ফক্স নিউজকে ট্রাম্প বলেছেন, আমরা এখন খুব কঠিন সময়ের মধ্যদিয়ে যাচ্ছি। এজন্য আমরা সেখানে তদন্তকারী পাঠাচ্ছি। আমরা তুরস্কের সঙ্গে কাজ করছি। পাশাপাশি সৌদি আরবের সঙ্গেও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কি ঘটেছে তা আমরা জানতে চাই। মার্কিন কর্মকর্তারা তুরস্কে যুক্তরাষ্ট্রের তদন্তকারীদের সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেন নি। যারা মার্কিন সহায়তায় তদন্ত পরিচালনা করছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হিথার নুয়ের্ত বলেন, মার্কিন সরকার তুর্কী সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছে তুরস্কের সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহায়তা করার। কখন মার্কিন তদন্তকারীরা সেখানে গিয়েছেন সে বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করেননি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আগের এক প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছিল বিষয়টি এফবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নুয়ার্ত জানিয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত শাহজাদা খালিদ বিন সালমান বৃহস্পতিবার রিয়াদে ফিরে গেছেন।
×