ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সমুদ্রের তলদেশে সাবমেরিন ড্রোন

প্রকাশিত: ০৭:৫৪, ১২ অক্টোবর ২০১৮

সমুদ্রের তলদেশে সাবমেরিন ড্রোন

নানা রকম প্রতিকূলতার কারণে সমুদ্রের নিচের জগতের নাগাল পাওয়া আজও সহজ নয়। ইউরোপের বিজ্ঞানীরা এবার এমন সাবমেরিন ড্রোন তৈরি করেছেন, যারা দলবদ্ধভাবে অনেক দুরূহ কাজ সেরে ফেলতে পারবে। এক ইউরোপীয় গবেষণা প্রকল্পের আওতায় ইঞ্জিনিয়াররা এমন ড্রোন সাবমেরিন তৈরি করেছেন, যেগুলো শব্দসঙ্কেতের মাধ্যমে পরস্পরের মধ্যে সংলাপ চালাতে পারে। রোম বিশ্ববিদ্যালয়ের কিয়ারা পেট্রিওলি এ বিষয়ে বলেন, ‘এই রোবটরা পানির নিচে পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগ ও সহযোগিতা করতে সক্ষম। একে ‘ইন্টারনেট অফ আন্ডারওয়াটার থিংস’ বলা চলে। এ এক অভিনব আইডিয়া, যার আওতায় সেন্সর ও রোবটের মতো বিভিন্ন ডিভাইস তথ্যের আদান-প্রদান করতে পারে। এর ফলে মহাসাগর, হ্রদ ও নদীগুলেরা ওপর নজর রাখার নতুন পথ খুলে যাচ্ছে।’ নির্দিষ্ট কিছু সেন্সর নিয়ে একদল রোবট সমুদ্রের তলদেশ ঘুরে হারিয়ে যাওয়া কোন বস্তু বা রাসায়নিক পদার্থের লিক শনাক্ত করবে। একসঙ্গে কাজ করে কম সময়ের মধ্যে তারা অনেক তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। পোর্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের রিকার্ডো মার্টিন্স বলেন, ‘তাদের সংলাপও অনেকটা মানুষের মতো। পানির নিচে যন্ত্ররা বিশাল পরিসরে ফ্রিকুয়েন্সি ব্যবহার করে। মানুষের কণ্ঠ ছাড়াও কানে শোনা যায় নাÑ স্পেকট্রামের এমন ফ্রিকুয়েন্সিও কাজে লাগায় তারা।’ সাবমেরিনগুলো সব তথ্য মাটির ওপর এক নিয়ন্ত্রণকেন্দ্রে পাঠায়। তাদের নির্দিষ্ট অবস্থান এবং তাপমাত্রা ও সমুদ্রের পানির রাসায়নিক মিশ্রণের মতো পরিবেশগত তথ্য পর্দায় ফুটে ওঠে। রোম বিশ্ববিদ্যালয়ের রোব্যার্তো পেত্রোকিয়া বলেন, ‘একই সময়ে একাধিক যান একটি এলাকা চষে বেড়ায় এবং সেন্টার থেকে আমরা সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করি। তাদের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাবার নির্দেশ দেই। প্রায় সব সময়ে তাদের উপর নজর রাখি। পানির নিচে থাকলে এক এ্যাকুস্টিক চ্যানেল, উপরে এলে রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে আমরা যোগাযোগ রাখি।’ বিশেষ পানি-নিরোধক আবরণের কল্যাণে সাবমেরিন সমুদ্রের কয়েকশ’ মিটার গভীরে নামতে পারে। অভিযান অনুযায়ী, তাদের বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংগ্রহ, রেকর্ড ও প্রেরণ করার দায়িত্ব দেয়া হয়। পোর্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের রিকার্ডো মার্টিন্স বলেন, ‘এ্যাকুস্টিক মোডেম পানির নিচে যোগাযোগ সম্ভব করে। সেইসঙ্গে রয়েছে পরিবেশ সেন্সর এবং পানির নিচে চলাফেরা সম্ভব করতে এক কম্পিউটার সিস্টেম। প্রায় ৮ ঘণ্টা চলাফেরা করার জন্য উপযুক্ত ব্যাটারিও রয়েছে। রেডিও ও স্যাটেলাইট যোগাযোগের মডিউল তো আছেই।’ সাবমেরিনের মধ্যে এক সোনার ডিভাইসও রয়েছে, যার শব্দতরঙ্গের সাহায্যে ডুবে যাওয়া বস্তু শনাক্ত করা যায়। পোর্টো শহরের বন্দর এলাকায় হারানো একটি কন্টেনার শনাক্ত করেছে এই ব্যবস্থা। পোর্টো বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি লিনো আন্টুনেস বলেন, ‘তিন রকমের প্রয়োগের জন্য এমন ডিভাইস উপযুক্ত। প্রথমত নিরাপত্তা, দ্বিতীয়ত পরিবেশ পর্যবেক্ষণ, যা আমাদের জন্য জরুরী এবং তৃতীয়ত বন্দরের জাহাজগুলোর নিরীক্ষণ।’ সমুদ্র থেকে নদীÑ যেখানেই ডুবুরির জন্য ঝুঁকি ও ব্যয়ের মাত্রা বেশি, সেখানেই এই মিনি সাবমেরিন কাজে লাগানো যেতে পারে। নতুন এই প্রযুক্তি পানির নিচের নীরব জগত বুঝতে আমাদের আরও সাহায্য করবে বলে আশা করা হচ্ছে। রোম বিশ্ববিদ্যালয়ের কিয়ারা পেট্রিওলি বলেন, ‘পানির নিচে আগ্নেয়গিরি ও প্রতœতাত্ত্বিক স্থান আবিষ্কার থেকে শুরু করে আমাদের উপকূল, অবকাঠামো ও বন্দরের সুরক্ষার ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি আমাদের জগত সম্পর্কে আরও গভীর জ্ঞান অর্জনে সাহায্য করবে। মানবজাতির ভবিষ্যতের জন্য এটা অত্যন্ত জরুরী।’ সূত্র : বিবিসি
×