ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

প্রাণিবৈচিত্র্য রক্ষায় নতুন গবেষণা

প্রকাশিত: ০৭:৫৪, ১২ অক্টোবর ২০১৮

প্রাণিবৈচিত্র্য রক্ষায় নতুন গবেষণা

বিজ্ঞানীদের কেউ কেউ বলেন, প্রকৃতি জগতের বেশির ভাগ প্রজাতিকে সংরক্ষণ করতে হলে আমাদের এই পৃথিবী পৃষ্ঠের অনেককে রক্ষা করা প্রয়োজন। তবে সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে আমরা কি রক্ষা করতে যাচ্ছি তার পরিমাণগত দিকটা নয় বরং গুণগত দিকটাই বড় কথা। যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নতুন সমীক্ষায় সেখানকার প্রতিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক অধ্যাপক স্টুয়ার্ট এল, পিম বলেন, ‘প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষা করার জন্য ন্যূনতম অর্ধেক পৃথিবীকে রক্ষা করা নিয়ে প্রচুর আলোচনা হয়েছে। চ্যালেঞ্জটা হচ্ছে কোন অর্ধেকটা আমরা রক্ষা করব? জাতীয় সরকারগুলোর একটা প্রবণতা হলো সেই এলাকাগুলো রক্ষা করা সেগুলো তাদের ভাষায় ‘বনাঞ্চল’। আসলে সেগুলো হল প্রত্যন্ত, শীতল ও উষ্ণর এলাকা। দুর্ভাগ্যবশত অনেক সময় এসব এলাকায় অপেক্ষাকৃত কম সংখ্যক প্রজাতির প্রাণী থাকে। আমাদের বিশ্লেষণে দেখা যায় যে বিশ্বের বড় বড় বনাঞ্চলের অর্ধাংশকে রক্ষা করলেও বর্তমানে যত প্রজাতির প্রাণী আছে তার চেয়ে বেশি প্রজাতির প্রাণীকে রক্ষা করা যাচ্ছে না।’ ঝুঁকিতে থাকা যত বেশি সংখ্যক প্রজাতিকে সম্ভব রক্ষা করতে হলে বিশেষ করে ছোট ছোট পাল্লার মধ্যে যেসব প্রাণীর বাস সেগুলোকে রক্ষা করতে হলে সরকারগুলোর উচিত তাদের সংরক্ষণ সংক্রান্ত দৃষ্টিকে প্রসারিত করা এবং বর্তমান বনাঞ্চল, পার্ক ও সংরক্ষিত এলাকার বাইরে গুরুত্বপূর্ব আবাসস্থলগুলো রক্ষার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেয়া। একথা শুধু যে পিম বলেছেন তা নয়, চীন ও ব্রাজিলের সহযোগী গবেষকরাও বলেছেন। চীনের গবেষক বিন লী বলেন, বেশির ভাগ প্রজাতিকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে চাইলে আমাদের অপরিহার্যরূপে স্রেফ অধিকতর এলাকাকে রক্ষা করতে নয় বরং সঠিক স্থানকে, বিশেষ বিশেষ স্থানকে রক্ষা করতে হবে। গবেষক দলটির বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে বিশ্বের সংরক্ষিত এলাকার বর্তমান ব্যবস্থাগুলো প্রায় ২০ হাজার প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি ও উভচর প্রাণীদের অর্থাৎ বিজ্ঞানীদের সবচেয়ে ভাল জানা প্রজাতিগুলোর বিচরণের ব্যাপ্তি বা পরিসরকে কতটা কভার করে দেখার জন্য জিওস্প্যাসিয়াল এনালিসিসকে কাজে লাগিয়েছিলেন। ব্রাজিলের গবেষক ক্লিনটন জিনকিংস বলেন, ‘আমরা দেখেছি যে বিশ্বব্যাপী প্রাণী সংরক্ষণের উদ্যোগের ফলে অনেক প্রজাতির সংরক্ষণ বৃদ্ধি পেয়েছে। দৃষ্টান্তস্বরূপ, সবচেয়ে ছোট ভৌগোলিক পরিসরের মধ্যে বিচরণ করা প্রায় অর্ধেক প্রজাতির পাখির বিচরণ পরিসারের অন্তত একাংশ খানিকটা সংরক্ষিত হয়েছে। তবে বড় ধরনের ঘাটতি বা শূন্যতা এখনও রয়েছে।’ এমন ধরনের ঘাটতি এ্যা-িজের উত্তরাঞ্চল, ব্রাজিলের উপকূলীয় বনাঞ্চল ও উত্তর-পশ্চিম চীনের মতো প্রাণবৈচিত্র্যের উল্লেখযোগ্য এলাকাসহ বিশ্বব্যাপী সর্বত্রই রয়েছে। সরকারগুলো যদি বিশ্বের বাকি বনাঞ্চলের অর্ধেক পর্যন্ত রক্ষা করতে পারে তারপরও এসব ঘাটতি চলতে থাকবে। পিম বলেন, বিশাল বনাঞ্চলগুলোকে রক্ষা করার যুক্তিসঙ্গত কারণ নিঃসন্দেহে আছে। এর একটা সুস্পষ্ট দৃষ্টান্ত হচ্ছে আমাজন অঞ্চল। সেখানে বনভূমি উজাড় হলে জলবায়ুর সুবিশাল পরিবর্তন ঘটতে পারে। তবে জীববৈচিত্র্যতে যতটা সম্ভব রক্ষা করতে হলে আমাদের সেইসব প্রজাতিকে চিহ্নিত করতে হবে সেগুলোর সংরক্ষণের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। অসংরক্ষিত আবাসস্থলের অনেকগুলোই এমন সব এলাকার ছোট ছোট ভূখ- সেখানে মানুষের উপস্থিতির প্রভাব ইতোমধ্যেই অনুভূত হয়েছে। ফলে সেগুলো সংরক্ষণের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সূত্র : সায়েন্স ডেইলি
×