ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কৃষি ঋণের অর্থ বিতরণ করছে অনেক এনজিও

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ১২ অক্টোবর ২০১৮

কৃষি ঋণের অর্থ বিতরণ করছে অনেক এনজিও

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালায় মোট কৃষি ঋণের ৭০ ভাগই বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে বিতরণের সুযোগ দেয়া হয়েছে বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কৃষি ঋণের নামে অর্থ নিয়ে ভিন্ন খাতে বিতরণ করছে অনেক এনজিও। এতে প্রতিবছর কয়েক হাজার কোটি টাকা চলে যাচ্ছে এনজিওগুলোর পকেটে। স্বল্প পরিসরে কিছু কৃষক ঋণ পেলেও ৯ শতাংশের পরিবর্তে সুদ গুণতে হচ্ছে ২৫ শতাংশ হারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এনজিওর ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ না থাকা ও নীতিমালার দূর্বলতা কারণেই কৃষি ঋণের সুফল পাচ্ছে না কৃষক। কৃষিপণ্যের উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠির খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে বরাবরই নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। এরই অংশ হিসেবে কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ দিতে প্রতিবছর নীতিমালা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। গত কয়েক বছরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রতিবছরই বেঁধে দেয়া লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে ব্যাংকগুলোর দেয়া ঋণে। তবে এর সুফল কতটুকু পাচ্ছেন চাষীরা ? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলায় কথা হয় ইসলাম নগরের কৃষক আব্দুল মোন্নাফের সঙ্গে। যিনি স্থানীয় একটি এনজিও থেকে ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে চাষ করেছেন মূলা ও মিষ্টি কুমড়া। তিনি ব্যাংকে না গিয়ে একটি এনজিওর মাধ্যমে ঋণ নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কৃষি ব্যাঙ্ক থেকে লোন আনতে বহু কাগজপত্র লাগে। চেয়ারম্যান, মেম্বার- এদের সাইন লাগে। এজন্য বাধ্য হয়ে এনজিও’র কাছে যাই।’ তার মতো এই এলাকার অনেকের কাছেই জানা গেল ঋণ পেতে তাদের অভিজ্ঞতার কথা। এক কৃষক জানান, ‘একটা ক্ষেত চাষ করলে এক-দেড় লাখ টাকা খরচ হয়। ব্যাঙ্কে গেলে বলে টাকা আর নাই। চাইলে পড়ে আজ না কাল- বলে আমাদের ভাগিয়ে দেয়।’ কৃষকদের দেয়া তথ্যে ব্যুরো বাংলাদেশ নামে এই এনজিওর অফিসে গিয়ে জানা যায়, প্রায় ২০টি ব্যাংকের সঙ্গে কৃষি ঋণ বিতরণের চুক্তি রয়েছে সংস্থাটির। অনুসন্ধানে জানা যায়, ব্যাংক থেকে নেয়া অর্থ থেকে এই শাখার মাধ্যমে ১২০০ গ্রাহককে বছরে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা মোট ঋণ দেয় এনজিওটি। এর মধ্যে কৃষি ঋণ পেয়েছেন মাত্র ৪৭ জন। বিপরীতে সুদের হার ধরা হয়েছে ২৫ শতাংশ। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাংকের পর্যাপ্ত শাখা না থাকায় এ থেকে বেরিয়ে আসা সহজ হচ্ছে না বলে দাবি বাংলাদেশ ব্যাংকের। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, নীতিমালার দূর্বলতা কারণেই সুফল পাচ্ছে না কৃষকরা। বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের মুখপাত্র মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাইভেট ব্যাঙ্কগুলোর এত শাখা কিন্তু আমাদের নাই। এজন্যই আমাদের বলা হচ্ছে, আপনাদের যে ৩০ শতাংশ টার্গেট- এটা আপনাদের নিজেদের পূরণ করতে হবে। এছাড়া অতিরিক্ত যে লোন- সেটি এনজিও’র মাধ্যমে দিতে হবে। প্রাথমিকভাবে হয়ত আমরা এভাবে বলছি। কিন্তু আস্তে আস্তে আমাদের টার্গেট বাড়ছে।’ কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আনোয়ার ফারুক বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের বর্তমান নীতিমালা পরিবর্তন করা উচিত। এনজিওর ক্ষেত্রে তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন যে যদিও সিঙ্গেল ই হওয়ার কথা, তাদের কাছে ২৬ শতাংশ গিয়ে পড়ে। বাংলাদেশের কৃষক ২৬ শতাংশ টাকায় লোন নিয়ে কখনোই লাভের মুখ দেখবে না।’ কৃষকদের মাঝে সরাসরি ঋণ বিতরণে এজেন্ট ব্যাংকিং একটি ভাল উপায় হতে পারে বলে মত বিশ্লেষকদের।
×