ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রেনেড হামলা মামলা ॥ রায়ের দ্রুত বাস্তবায়ন চায় জনগণ

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১২ অক্টোবর ২০১৮

গ্রেনেড হামলা মামলা ॥ রায়ের দ্রুত বাস্তবায়ন চায় জনগণ

মোয়াজ্জেমুল হক ॥ ‘বড় অপরাধ আর বড় পাপ বিনাদ-ে যে যায় না’Ñ কথাটি আবারও প্রমাণিত হলো একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায়ে দ-িতদের নিয়ে। দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোচিত এবং উৎসুক জনতার বহুল প্রতীক্ষিত একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার রায় নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। ইতিহাস গড়ল এ রায়। রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট অর্থাৎ ১৪ বছর আগে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়ানক আর্জেস গ্রেনেড হামলার প্রধান টার্গেটে ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী (তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী) শেখ হাসিনা। মুহূর্ত সময় ব্যবধানের কারণে এই বর্বরোচিত হামলা থেকে বঙ্গবন্ধু তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনা বেঁচে গেলেও ঝরে গেছে ২৪টি তাজা প্রাণ। দুঃসহ ক্ষত নিয়ে দুর্বিসহ জীবনে রয়েছেন অনেকে। এই হামলায় যারা হারিয়ে গেলেন তারা যেমন আর কখনও ফিরে আসবেন না, ঠিক তেমনি শরীরে স্পিøন্টার ও নানামুখী জখম নিয়ে আহতদের বাকি জীবন কাটাতে হবে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও ক্ষতিগ্রস্ত কান নিয়েই জীবন অতিবাহিত করতে হচ্ছে। রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায় এমন ঘটনার পর মামলা হলেও এর গতিপথ ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা বানচাল হয়েছে। আইন চলেছে নিজস্ব গতিতে। অবশেষে গত বুধবার এই সংক্রান্ত মামলার রায় দিয়েছেন ঢাকার দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নুর উদ্দিন। জনাকীর্ণ আদালতে ঘোষিত এ রায়ে তিনি যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন তাও বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। দেশের বিচারিক আদালতের এই রায় একদিকে যেমন ইতিহাস গড়েছে, অন্যদিকে রায়দাতা বিচারকও ইতিহাসে স্থান পেয়ে গেলেন। এই মামলায় ১৯ জনের ফাঁসি, ১৯ জনের যাবজ্জীবন ও ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- সাধারণ মহলে প্রশান্তির পরশ এনে দিয়েছে। যারা দ-িত হয়েছেন তারা সবাই রাষ্ট্রযন্ত্রের নীলনক্সার একেক ক্রীড়নক। তবে মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত আসামির সর্বোচ্চ সাজা না হওয়ায় জনমনে হতাশার কমতিও নেই। জঙ্গী সংগঠন হরকাতুল জিহাদের নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রাণ হরণের চেষ্টার যে ঘটনা ঘটিয়েছে তা আদালতের রায়ে একেবারে পরিষ্কার হয়েছে। কী ভয়াবহ ষড়যন্ত্র! আদালত পর্যবেক্ষণেও চুলচেড়া বিশ্লেষণ দিয়েছেন। যা বলেছেন তা শিহরণমূলক। আদালত দেশের রাজনীতির পরিবেশের কথাও রায়ে উল্লেখ করে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কথাটি বলেছেন সেটি হচ্ছে- সাধারণ জনগণ এ ধরনের রাজনীতি চায় না। পাশাপাশি প্রশ্ন রেখেছেন, রাজনীতি মানেই কি বিরোধীদের ওপর পৈশাচিক আক্রমণ। আদালত পর্যবেক্ষণে সিলেটের হযরত শাহজালালের (রাঃ) দরগাহ শরীফের ঘটনা, সাবেক অর্থমন্ত্রী এসএম কিবরিয়ার ওপর নৃশংস হামলা এবং তার মৃত্যু, রমনা বটমূলে সংঘটিত বোমা হামলার বিষয়গুলোও উল্লেখ করেছেন। আদালতের পর্যবেক্ষণ দীর্ঘ। রায় ও পর্যবেক্ষণ মিলে যা বেরিয়ে এসেছে তাতে অভিযুক্তদের যে সাজা হয়েছে তা সাধারণ মানুষ সাদরে গ্রহণ করেছে। তবে অভিযুক্ত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের দ- নিয়ে নাখোশ বিশাল জনগোষ্ঠী। সরকার পক্ষ এ নিয়ে উচ্চ আদালতে আপীলের ঘোষণা দিয়েছে। পাশাপাশি দ-িতদের পক্ষেও উচ্চ আদালতে আপীলের কথা বলেছে। সূত্র সমূহে বলা হচ্ছে, এ রায় নিয়ে যে পক্ষই উচ্চ আদালতে যাক না কেন এতে তেমন কোন হেরফের হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। সঙ্গত কারণে যত দ্রুত এর নিষ্পত্তি ঘটবে ততই জনমনে স্বস্তির নিঃশ্বাস যে আসবে এতে কোন সন্দেহ নেই। এখন চলছে এ রায় উচ্চ আদালত গড়িয়ে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির ক্ষণ গণনা। দেশে উচ্চ আদালত প্রদত্ত বিভিন্ন রায় মাইলফলক হিসেবে দৃষ্টান্ত যে স্থাপন করেছে ইতোমধ্যে একুশ আগস্টের গ্রেনেড হামলার রায় অন্যতম স্থান করে নিয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায়, স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় এদেশের আদালতের রায়ে যে ইতিহাস গড়েছে একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায়ও অনুরূপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সব মহলে আলোচনার ঝড় উঠেছে।
×