ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১২ অক্টোবর ২০১৮

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ মৃত্যু তো কম দেখেনি বাংলাদেশ। বাঙালী মরতে মরতে বেঁচেছিল। মরতে মরতেই এত দূর এসেছে। এর পরও ২১ আগস্টের বিভীষিকার কথা মনে পড়লে গা শিউরে ওঠে। রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে নির্মম নিষ্ঠুর গ্রেনেড হামলা। হামলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ২৪ জন। অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন! মোট আহতের সংখ্যা প্রায় ৩০০। শরীরে স্পিøন্টার নিয়ে এখনও অনেকে বেঁচে আছেন। তাদের একটাই চাওয়া ছিলÑ বিচার। লম্বা সময় পার হলেও, শেষ পর্যন্ত বিচার পেয়েছেন তারা। মাস্টারমাইন্ডের সর্বোচ্চ সাজা হয়নি। তবে যাবজ্জীবন সাজাও আদালতেরই দেয়া। সাজা কম বা বেশি হতে পারে। তাৎপর্য একই। বিচার হয়েছে। একে অনেক বড় প্রাপ্তি বলেই মনে করছেন রাজধানীর বিবেকবান মানুষ। তারা বলছেন, আইনের শাসনের আরও একটি নজির স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে বুধবার বহুল আলোচিত গ্রেনেড হামলা মামলার রায় দেন আদালত। এতে ১৯ জনের মৃত্যুদ- দেয়া হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয় ১৯ জনকে। রায় ঘোষণার আগে থেকেই শহর ঢাকার অলিতে গলিতে এই একটি মাত্র আলোচনা। রায়ের পর আরও বেশি বিশ্লেষণমুখী রাজধানীর মানুষ। অনেকেই ২০০৪ সালে ফিরে যাচ্ছেন। চোখের সামনেই যেন ভেসে উঠছে সেই অদ্ভুত সুন্দর বিকেল। প্রকাশ্য জনসভা। হাজার হাজার মানুষের প্রাণোচ্ছল উপস্থিতি। এ অবস্থায়ই ছোড়া হলো যুদ্ধাস্ত্র। দিবালোকে সবার চোখের সামনে খইয়ের মতো ফুটল গ্রেনেড। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করাই ছিল লক্ষ্য। অন্য নেতারা মানব বর্ম তৈরি করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে সুরক্ষা দেন। কিন্তু মঞ্চের কাছাকাছি থাকা আইভি রহমানসহ সাধারণ কর্মীরা, আহারে, কী করুণ মৃত্যুর শিকার হন! হাত পা ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায় মুহূর্তেই। রক্তে ভেসে যায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউ। ২০০৪ সালের সেই হত্যাকা-ের বিচার ছিল অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। চ্যালেঞ্জে জয় লাভ করেছে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ। বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, দ-িতদের একজন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান। মা যখন দেশের প্রধানমন্ত্রী, ছেলেকে দলের বড় পোস্ট দিয়ে সামনে এনেছেন। সেই ছেলেটি দেশের সেবায় মন দেবে। গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করবে। কিন্তু তা হলো না। শুরুটাই তিনি করলেন ভয়ঙ্কর খুনী হিসেবে। আদালতের রায়ে আজ প্রমাণিত যে, বিরোধী মত পথ চিরতরে বন্ধ করে দিতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করা হয়েছিল। শেখ হাসিনাকে হত্যা করে তৎকালীন শাসকরা ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে চেয়েছিলেন। এই নেশার বলি হলো একেবারেই সাধারণ কিছু মানুষ। ভাবা যায়? সেদিন সত্যি কলঙ্কিত হয়েছিল শহর ঢাকা। বিচারের মধ্য দিয়ে সেই কলঙ্ক থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি মিলল, বলা যায়। এখন ঢাকার মানবিক মানুষের দাবি- যত দ্রুত সম্ভব ২১ আগস্ট গ্রেনেড হত্যা মামলার রায় কার্যকর করা হোক। এবার শীতের কথায় আসা যাক। না, শীত আসেনি এখনও। বেশ বাকি। তবে শীতের একটা পরশ পাওয়া যাচ্ছে। বুধবার রাত থেকেই ঢাকার প্রকৃতি ঠা-া। শীতল। রাতে ঘুমনোর সময় কাঁথা মুড়ি দিতে হয়েছে। তারও আগে বন্ধ করতে হয়েছে বৈদ্যুতিক পাখাটি। শেষরাতে এত ঠা-া অনুভূত হয়েছে যে, শীতকাল বলেই মনে হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে ¯œান বা গোসল করতে গিয়েও অভিন্ন অনুভূতি। শাওয়ারের নিচে দাঁড়াতেই ঠা-া জল। প্রথম দফায় জল গায়ে পড়তেই ঠা-ায় লোমকূপ দাঁড়িয়ে যায়। অবশ্য হঠাৎ পরিবর্তনের মূল কারণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নি¤œচাপ। আবহাওয়া অফিস বলছে, নি¤œচাপটি ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’ নামে সামনে এসেছে। এর প্রভাবেই মুখ গোমড়া করে রেখেছে ঢাকার আকাশ। টিপটিপি বৃষ্টি হচ্ছে। বাতাসও ঠা-া। সব মিলিয়ে শিশির ভেজা হেমন্তের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। হেমন্তের আগমনী বার্তাই যেন দিচ্ছে ‘তিতলি’। তারও আগে শরতকে বিদায় জানানো চাই। আজ শুক্রবার সকালে প্রিয় ঋতুকে বিদায় জানবে ছায়ানট। প্রতিষ্ঠানের মূল মিলনায়তনে সকাল সাড়ে ৮টায় আয়োজন করা হবে শরতের অনুষ্ঠান। ছায়ানটের আয়োজন বলে কথা। বাড়তি কিছু পাওয়ার থাকে। উপভোগ্য হয় সময়টা। আজও হবেÑ এ আশাই করছেন প্রকৃতিপ্রেমী মানুষেরা। এদিকে, আগামীকাল শনিবার শরত বিদায়ের অনুষ্ঠান করবে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। প্রতি বছরের মতোই চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় আয়োজন করা হবে শারদ উৎসবের।
×