ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তাল সমুদ্রপাড়ে দর্শক জোয়ার

প্রকাশিত: ০৭:১৬, ১১ অক্টোবর ২০১৮

উত্তাল সমুদ্রপাড়ে দর্শক জোয়ার

স্পোর্টস রিপোর্টার, কক্সবাজার থেকে ॥ বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপ। ঘূর্ণিঝড় হওয়ার সম্ভাবনা। ইতোমধ্যেই দেখানো হয়ে গেছে চার নম্বর সতর্ক সঙ্কেত। সমুদ্র উত্তাল। চারদিকে বেশ ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা ভাব। সারাক্ষণই অঝোর ধারায় কাঁদছে আকাশ। এমন দিনে জরুরী কোন কাজ না থাকলে মানুষজন কি করে বলুন তো? হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন। আয়েশ করে খিচুড়ি খায়, খায়েশ মিটিয়ে কাঁথামুড়ি দিয়ে সুখনিদ্রা যায়। কিন্তু বুধবার এমনটা করেননি কক্সবাজারবাসী। তাদের অনেকেই দুপুরের আগেই ছুটে আসেন বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামে। উদ্দেশ্য একটাইÑ নিজের চোখে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের খেলা উপভোগ করা, যারা সেমিফাইনালে মোকাবেলা করবে ফিলিস্তিনের। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতার ভেন্যু তিনটিÑ সিলেট, কক্সবাজার এবং ঢাকা। সিলেটে অনুষ্ঠিত হয়েছে গ্রুপপর্বের ৬টি ম্যাচ। কক্সবাজারে হবে দুটি সেমিফাইনাল ম্যাচ। দ্বিতীয় ও শেষ সেমির লড়াইয়ে স্বাগতিক দল খেলবে এটা নিজের চোখে না দেখে কি ঘরে বসে থাকা যায়? যায় না বলেই খেলা শুরুর আড়াই ঘণ্টা আগেই পঙ্গপালের মতো পিল পিল করে স্টেডিয়াম এলাকায় হাজির হয় অগুণিত ফুটবলপ্রেমী। তাদের হাতে ভুভুজেলা, ড্রাম, পোস্টার, ব্যানার। যখন স্টেডিয়ামের গেট খুলে দেয়া হলো তখন মিনিট বিশেকের মধ্যেই আট হাজার আসন পূর্ণ হয়ে গেল। একেবারে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। জানা গেল, আট হাজার নয়, ঠেলেঠুলে আরও বাড়তি চার হাজার ফুটবলপ্রেমীকে ঢোকার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। অবশ্য তাদের এ জন্য টিকেট কাটতে হয়েছে। শুধু কক্সবাজারের স্থানীয় দর্শকই নয়, এদের মধ্যে আছে জনাবিশেক ফুটবল অনুরাগীও, যারা ঢাকা থেকে সারারাত বাসভ্রমণ করে এখানে হাজির হয়েছে। এরা হচ্ছে বাংলাদেশ ফুটবল সাপোর্টার্স ফোরামের সদস্য যাদের নেতৃত্বে আছেন এর সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন যুবায়ের। স্থানীয় দর্শকদের বুধবার খেলা দেখতে আসার অবশ্য আরেকটি কারণ ছিল জাতীয় দলের চার ফুটবলার হচ্ছেন কক্সবাজারের। তারা হলেন : তৌহিদুল আলম সবুজ, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, সুশান্ত ত্রিপুরা এবং মোহাম্মদ ইব্রাহিম। তবে খেলা শুরুর সময় কক্সবাজারের দর্শকরা একটু হতাশই হন। কেননা কোচ জেমি ডে প্রথম একাদশে কক্সবাজারের একজন ফুটবলারকেও খেলাননি। খেলা শুরুর আগেই গ্যালারিতে ছড়িয়ে পড়ে উৎসবের আমেজ। ঢোলের বাদ্য, ভুভুজেলার শব্দ... সবমিলিয়ে তৈরি হয় অসাধারণ এক আবহের। ঢাকার ফুটবলে এমন দৃশ্য দেখা যায় খুব কমই। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবল। আর ফুটবলের প্রাণ কী বলুন তো? দর্শক। একটি খেলা দেখতে গ্যালারিতে দর্শকের ঢল নামবে, টিকেট কালোবাজারি হবে, লাইন ধরে গ্যালারিতে ঢুকতে গিয়ে ধাক্কাধাক্কি হবে, হুড়োহুড়ি হবে, চেঁচামেচি হবে, পুলিশ মৃদু লাঠিচার্জ করবে... তবেই না হবে ফুটবল দেখার আসল মজা। ম্যাচ শুরু হওয়ার পরও মাঠে ঢুকতে দেখা গেছে দর্শকদের। প্রত্যাশিত ‘সোনার হরিণ’ মানে টিকেট না পেয়ে স্টেডিয়ামের বাইরেও দাঁড়িয়ে ছিল কমপক্ষে দশ হাজার দর্শক। তাদের সামলাতে মোতায়েন করা হয় ৭০০ পুলিশ। তাদের রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় দর্র্শকদের চাপ সামলাতে। শুধু গ্যালারিতেই নয় দর্শক দেখা গেছে আশপাশের অনেক বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকেও। নিরাপত্তার কারণে গেটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়াকড়ি ছিল। শুধু মোবাইল ফোন ছাড়া আর কিছু নিয়ে স্টেডিয়ামে ঢুকতে পারেননি কেউই। তবে কেউ কেউ অনেক অনুরোধ করে বড় জাতীয় পতাকা নিয়ে ঢুকেছেন মাঠে। তা খানিক পর দুলিয়ে দুলিয়েই লাল-সবুজের নিজ দলের সমর্থন দিয়ে গেছেন তারা। আয়োজকরা নিশ্চিত ছিলেন বাংলাদেশের খেলায় গ্যালারিতে দর্শক হবেই। কিন্তু জায়গা এবং টিকেটের অভাবে যেসব দর্শক স্টেডিয়ামে ঢুকতে পারেননি তাদের জন্য বিকল্প কোন ব্যবস্থাও (স্টেডিয়ামের বাইরে জায়ান্ট স্ক্রিনে খেলা দেখানো) করতে ব্যর্থ হয়েছেন। শেষমেশ হাল ছেড়ে দিয়ে তাদের হা পিত্যেশ করতে হয়েছে এই বলে, ‘হায় খোদা, এত দর্শককে ঠাঁই দেব কোথায়।’
×