ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

তৃণমূল পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে ডাক্তারদের প্রশিক্ষণের তাগিদ

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ১১ অক্টোবর ২০১৮

তৃণমূল পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে ডাক্তারদের প্রশিক্ষণের তাগিদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাপর্যায়ে নিয়োজিত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবলের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। কারণ দেশে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্কট রয়েছে। চিকিৎসা সুবিধা সঙ্কটে ভুগছে দেশের মানসিক রোগীরা। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এ রোগের চিকিৎসার অবকাঠামো নেই। বিভাগীয় পর্যায়ে চিকিৎসা সুবিধা থাকলেও তা রোগীর তুলনায় খুবই অপ্রতুল। বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মোঃ ফারুক আলমের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডাঃ আ ফ ম রুহুল হক এমপি, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ এ এইচ এম এনায়েত হোসেন, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মোঃ হেদায়েতুল ইসলাম, বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টের সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ মোঃ ওয়াজিউল আলম চৌধুরী, নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজএবিলিটি প্রটেকশন ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ মোঃ গোলাম রব্বানী প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডাঃ হেলাল উদ্দিন আহমেদ। অধ্যাপক ডাঃ আ ফ ম রুহুল হক বলেন, মানসিক রোগ যথাযথ শনাক্ত করার ওপর জোর দিতে হবে। মানসিক রোগীদের অবহেলা নয়, ভালবাসা দিয়ে কাছে টেনে নিতে হবে। সার্বিক স্বাস্থ্যের অংশ হিসেবে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার প্রতি মনোযোগ দেয়া উচিত। দেশের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান বর্তমান সরকারের লক্ষ্য। এক্ষেত্রে রোগীর পরিবার ও আত্মীয় স্বজনকেই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নিতে হবে। অধ্যাপক ডাঃ এ এইচ এম এনায়েত হোসেন বলেন, মানসিক রোগীদের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবায় বহুমুখী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে চলেছে সরকার। সম্প্রতি মানসিক স্বাস্থ্য আইন-২০১৮ প্রণয়ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, মানসিক রোগ ও চিকিৎসার বিষয়ে জনগণের ভ্রান্ত ধারণা, কুসংস্কার ও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। এই রোগ সম্পর্কে জনগণের মধ্যে স্বচ্ছ ধারণা দিতে হবে। মূল প্রবন্ধে ডাঃ হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য সেবা সহজলভ্য করার লক্ষ্যে কমিউনিটি বেইজড মেন্টাল হেলথ ইন্টারভেনশনের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। যেহেতু মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল, সেহেতু প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পর্যায়ে নিয়োজিত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সক্ষমতা বৃদ্ধি করে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার উদ্যোগ দিতে হবে। উপজেলা পর্যায়ে প্রাথমিক শনাক্তকৃত মানসিক রোগীদের চিকিৎসার সুবিধার্থে নিয়মিত বিরতিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দ্বারা উপজেলা পর্যায়েই মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ব্যবস্থা থাকা দরকার। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীন অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর আওতায় জনসচেতনতা বৃদ্ধির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। অন্য বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার শতকরা ১৬.১ ভাগ যে কোন ধরনের মানসিক রোগে আক্রান্ত। এ বিপুল জনগোষ্ঠীর জন্য প্রতি ১ লাখে ০.০৭ জন মানসিক রোগবিশেষজ্ঞ রয়েছেন যা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য। উন্নত দেশে এ অনুপাত প্রতি ১ লাখে ১০ জন, মধ্য আয়ের দেশে ২.৭ জন অনুন্নত দেশে ০.০৫। বর্তমান হারে জনবল বৃদ্ধি পেতে থাকলে আগামী ১শ’ বছরেও এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। এজন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচীতে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা অন্তর্ভুক্তি এখন সময়ের দাবি। এ লক্ষ্য অর্জনে সাধারণ চিকিৎসকদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবার ওপর প্রশিক্ষণ প্রদান, মেডিক্যাল শিক্ষাব্যবস্থায় মানসিক রোগ চিকিৎসার কারিকুলাম সম্প্রসারণ ও স্কুল পর্যায়ের পাঠ্যসূচীতে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা জরুরী। মানসিক রোগীদের প্রতি থাকতে হবে মানবিক আচরণ। একজন মানুষ নানা কারণে মানসিকভাবে অসুস্থ হতে পারেন। সমন্বিত সেবা দেয়ার মধ্য দিয়ে এ রোগে আক্রান্তদের পাশে আমরা দাঁড়াতে পারি। বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার জানান, বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস ২০১৮ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন দিনব্যাপী উন্মুক্ত মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রদর্শনী, সেমিনার ও কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘পরিবর্তনশীল বিশ্বে তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য’। বুধবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে উদ্বোধনী সেমিনারে এ কর্মসূচীর উদ্বোধন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ, ন্যাশনাল ট্রমা কাউন্সেলিং সেন্টার, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটির যৌথ উদ্যোগে এ কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, বিশেষ অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাছিমা বেগম, বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ জহির উদ্দিন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের ড. মুহাম্মদ কামরুজ্জামান মজুমদার। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, অতিরিক্ত প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে আমাদের দেশের মানুষের, বিশেষ করে তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ হচ্ছে। আমাদের এ কারণে আরও সাইক্রিয়াটিস্ট থাকা উচিত। প্রত্যেক হাসপাতালে সাইক্রিয়াটিস্ট থাকা উচিত। সুস্বাস্থ্য সুস্থ মন দেয়, আবার সুন্দর স্বাস্থ্যের জন্য সুস্থ মন দরকার। প্রধান আলোচকের বক্তব্যে কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, তরুণদের মানসিক সমস্যা এখন গুরুত্ব দিয়ে ভাবার বিষয়। বিশ^ বর্তমানে এগিয়ে যাচ্ছে, পরিবর্তন হচ্ছে। এই পরিবর্তনের জন্য তরুণ সমাজ তৈরি কিনা সেটি দেখার বিষয়।
×