ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সৌদি সাংবাদিক রহস্যজনক নিখোঁজ ॥ দ্রুত জবাব চেয়েছে ব্রিটেন

সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ১১ অক্টোবর ২০১৮

সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব

তুরস্কের কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, ইস্তানবুলে সৌদি কনস্যুলেট থেকে নিরাপত্তা ক্যামেরা ফুটেজ সরিয়ে ফেলা হয়েছে এবং তুর্কী কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে যে, যেদিন ভিন্ন মতাবলম্বী সাংবাদিক জামাল খাশাগজি কনস্যুলেট ভবনে প্রবেশ করার পর নিখোঁজ হন সেদিন তুর্কী স্টাফদের আকস্মিকভাবে ছুটি নিতে বলা হয়। খবর গার্ডিয়ানের। তুরস্কের সবচেয়ে বড় শহর থেকে খাশাগজি রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হওয়ার পর এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। তার অন্তর্ধানের বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা এখনও অব্যাহত রয়েছে। তদন্ত একটি নির্দিষ্ট দিকে ধাবিত হচ্ছে। তদন্তকারীরা বিশ্বাস করেন যে, সৌদি কনস্যুলেট থেকে খাশাগজির নিখোঁজের জন্য একটি বিশেষ দলের স্কোয়াড দায়ী। যারা ছয়টি গাড়ি করে বিমান বন্দরে যাওয়ার আগে কাছের কনসাল জেনারেলের ভবনে কয়েক ঘণ্টা কাটিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের মধ্যে একজন নিখোঁজ সাংবাদিককে অথবা তার মৃতদেহ বহন করেছেন। নিখোঁজ হওয়ার আগে মঙ্গলবার প্রকাশিত এক স্থিরচিত্রে দেখা যায়, খাশাগজি কূটনৈতিক মিশনটিতে প্রবেশ করছেন। মিশনটির সামনে একটি কালো রংয়ের বড় গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে। অভিযোগ করা হচ্ছে, দূতাবাসের সামনে যে গাড়িটি দাঁড় করানো ছিল পরে ওই গাড়িটি তাকে সরিয়ে নেয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। রিয়াদ থেকে ইস্তানবুল পর্যন্ত যাওয়ার জন্য যে বিমান ব্যবহার করা হয়েছে তার বিস্তারিত বিবরণে জানা গেছে, তাতে ১৫জন সৌদি কর্মকর্তা ছিলেন। দুটি কর্পোরেট জেট বিমান এ জন্য ভাড়া করা হয়েছে। যাতে করে ওই কর্মকর্তারা অনায়াসে যাতায়াত করতে পারেন। দুই অক্টোবর সৌদি কর্মকর্তাদের বহনকারী বিমান দুটি ইস্তানবুলে যায় ও পরে একইদিন বিকেলে আলাদাভাবে বিমানবন্দর ছেড়ে যায়। একটি জেট বিমানের পেছনের দিকে রেজিস্ট্রেশন নম্বর ছিল এইচজেড-এসকে ওয়ান। যা পরে কায়রোতে যায়। দ্বিতীয় বিমানটির রেজিস্ট্রেশন নম্বর ছিল এইচজেড-এসকে টু। সেটি দুবাইতে অবতরণ করে। ফ্লাইট ট্র্যাকিং রেকর্ডে দেখা গেছে যে, উভয় বিমানই পরে রিয়াদ পৌঁছেছে। তুর্কী তদন্তকারীরা বিশ্বাস করেন যে, কনস্যুলেটের ভেতরের সিসিটিভি ফুটেজ সরিয়ে ফেলা হয়েছে। মঙ্গলবার সৌদি কর্মকর্তাদের প্রবেশের পর তুর্কী পুলিশের একটি দল কনস্যুলেট ভবনে প্রবেশ করেন। শনিবার সাংবাদিকদের ভবনটিতে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়। তুরস্কের কর্মকর্তারা এখনও অনড় রয়েছেন যে, সাংবাদিক খাশাগজিকে কনস্যুলেট ভবনের ভেতরে হত্যা করা হয়েছে। যে দাবি তারা মার্কিন কর্তৃপক্ষের কাছেও জানিয়েছেন। তারা এখন খাশাগজির অন্তর্ধানের বিষয়ে কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করবেন। ব্যক্তিগতভাবে উর্ধতন কর্মকর্তারা মার্কিন ও ইউরোপিয়ান কর্মকর্তাদের জানান, তারা এখনও বিশ্বাস করেন খাশাগজিকে হত্যা করা হয়েছে। তদন্তে রাজনৈতিক ছায়া পড়ায় সাধারণের কাছে এই দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পেয়েছে যে, খাশাগজির ভাগ্যে কী ঘটেছে তার প্রমাণ কখনই উপস্থাপন করা হবে না। নিখোঁজ সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশাগজির বিষয়ে সৌদি আরবের কাছে দ্রুত জবাব চেয়েছে ব্রিটেন। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবেইরের কাছে ফোন করে খাশাগজির অন্তর্ধানের বিষয়ে ‘ব্রিটেন জরুরী ভিত্তিতে উত্তর প্রত্যাশা করছে’ বলে জানিয়েছেন। ‘যৌথ মূল্যবোধের ওপর বন্ধুত্ব নির্ভর করে’ এমনটি স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি সৌদি আরবকে সতর্কও করেছেন। ওই কনস্যুলেটের ভেতরে তাকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে তুরস্ক। সৌদি আরব তুরস্কের আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়েছে। এ ঘটনার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের চেয়েও কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো যদি সত্যি হয় তাহলে যুক্তরাজ্য এটিকে ‘খুব গুরুত্বের’ সঙ্গে গ্রহণ করবে।
×