ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ড. কামাল এখন তারেকের গডফাদার -স্বদেশ রায়

প্রকাশিত: ০৬:১০, ১১ অক্টোবর ২০১৮

ড. কামাল এখন তারেকের গডফাদার -স্বদেশ রায়

২১ আগস্ট ২০০৪ তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগের জনসভায় যে গ্রেনেড হামলা হয় তার তীব্র নিন্দা জানায় তখনকার সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতি। ২২.০৮.২০০৪ তারিখে তারা এক জরুরী সভায় অনেকগুলো প্রস্তাব পাস করে। তার ছয় নম্বর প্রস্তাব ছিল, ‘এই সভা বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট বার এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিকে আহ্বায়ক করে পাঁচ জন শীর্ষস্থানীয় আইনজীবীকে সদস্য করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার জন্য সভাপতিকে দায়িত্ব অর্পণ করেছে এবং উক্ত কমিটিকে কার্যকর তদন্ত সম্পন্ন করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জাতির সম্মুখে পেশ করার জন্য সিদ্ধান্ত পেশ করেছে।’ কমিটিতে ছিলেন জনাব রোকনউদ্দিন মাহমুদ (আহ্বায়ক) বাকি পাঁচ জন সদস্য যথাক্রমে ড. কামাল হোসেন, জনাব আবদুল মালেক, জনাব মোহাম্মদ আমীর-উল ইসলাম, ড. এমএ জহির, জনাব মোহাম্মদ আয়েন উদ্দীন। পরবর্তীকালে এই কমিটি প্রবীণ সদস্য হিসেবে বিবেচনা করে ড. কামাল হোসেনকে তদন্ত কমিটির সভাপতি নির্বাচন করে। এই তদন্ত কমিটি ২৭.০২.২০০৫-এ তাদের তদন্ত রিপোর্ট দেয়। ড. কামালের নেতৃত্বাধীন এই রিপোর্ট ২৮.০২.২০০৪ বাংলাদেশের অনেকগুলো দৈনিকে প্রকাশ পায়। দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত এই ‘তদন্ত রিপোর্ট’-এর হেডিং ছিল, ‘শেখ হাসিনাকে হত্যাই ছিল উদ্দেশ্য- আক্রমণকারী ছিল অনেক, প্রশিক্ষিত। ড. কামালের নেতৃত্বাধীন সেদিনের এ রিপোর্টের সারাংশ থেকে দৈনিক সংবাদ উপরোল্লিখিত যে শিরোনাম করেছিল, ওই শিরোনামই এই হামলা কেন করা হয় ও কীভাবে করে তা প্রকাশ করার জন্য যথেষ্ট। শিরোনামে বলা হয়, শেখ হাসিনাকে হত্যাই ছিল উদ্দেশ্য। আজ ১৪ বছর পরে এসে কারও কোন সন্দেহ নেই যে, হামলার উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনাকে হত্যা করা। এটা আজ বিচারের ভেতর দিয়ে প্রমাণিত সত্য। অন্যদিকে হামলাকারীরা যে অনেক ছিল, তাও বিচারের ভেতর দিয়ে প্রমাণিত সত্য। তারা যে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে প্রশিক্ষিত, সেটাও বিচারের ভেতর দিয়ে এখন প্রমাণিত। পাশাপাশি এটাও প্রমাণিত হয়েছে, সেদিনের গোটা সরকার জড়িত ছিল এই হত্যাকা- চালানোর জন্য যে হামলা হয় সে কাজে। আজ যেটা বিচার বিভাগের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো, সেদিন ড. কামালের সভাপতিত্বে পরিচালিত ওই তদন্ত কমিটিও তা বলে দিয়েছিল। তাদের রিপোর্টেও ইঙ্গিত ছিল যে, এর সঙ্গে তৎকালীন সরকার জড়িত। দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত ওই রিপোর্টে বলা হয়, ‘এক মাস সময়ের মধ্যে রিপোর্ট প্রকাশে ব্যর্থ হলে এটা ধরে নেয়া হবে এ ঘটনার সঙ্গে সরকারের যোগসূত্র রয়েছে।’ অর্থাৎ আইনজীবী সমিতি সরকারকে এক মাস সময় বেঁধে দেয় এবং তারা বলে এক মাসের মধ্যে সরকার যদি এই ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশে ব্যর্থ হয়, তা হলে বিষয়টি স্পষ্ট যে, সরকারই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। সেদিন খালেদার সরকার তদন্ত রিপোর্ট তো প্রকাশ করেইনি, বরং জজ মিয়া নাটকসহ এই মামলা নিয়ে যা করেছিল তা এখন সবার জানা। তাই সে বিষয় উল্লেখ করার আর কোন প্রয়োজন নেই। তাছাড়া এখন বাংলাদেশে কিছু অন্ধ বিএনপি কর্মী ছাড়া আর সকলে বিশ্বাস করেন কীভাবে তারেক রহমান সেদিন শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। বিএনপির বাস্তববাদী নেতা ও সমর্থকরা ব্যক্তিগত আলোচনায় বলেন, তারেকের এই সব কাজের জন্যই আজ বিএনপির এ দুর্গতি। তারাও এই জঘন্য কাজকে পছন্দ করেন না। কারণ, সত্যি অর্থে ১৯৭৫ এর পনেরো আগস্টের পরে ২১ আগস্ট ২০০৪ বাংলাদেশে রাজনীতিক হত্যার জন্য সব থেকে বড় হামলা। আর ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের থেকে এটার একটি দিক আরও বেশি জঘন্য ও ভয়াবহ যে, গোটা সরকারই এই হত্যাকা-ের জন্য হামলা প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিল। সেদিন ড. কামালের নেতৃত্বে পরিচালিত আইনজীবী সমিতির তদন্ত প্রতিবেদনেও পরোক্ষভাবে সেটা বলা হয়। দেশের দুর্ভাগ্য না সৌভাগ্য তা এখনও ঠিক বলা যাচ্ছে না। তবে বাস্তবতা হলো আজ যখন বিচারিক আদালতে শেখ হাসিনা হত্যাচেষ্টা ও ২১ আগস্ট হত্যাকা-ের মূল হোতা তারেক রহমানসহ অন্যান্যের বিচার হলো। এ সময়ে তারেক রহমান ও খালেদা জিয়াকে রক্ষার জন্য রাজপথে নেমেছেন ড. কামাল হোসেন। কেন ড. কামাল এ অবস্থান নিলেন? কেন তিনি এঞ্জেল থেকে ডেভিল-এর ভূমিকা নিলেন ২০০৪ থেকে ২০১৮-এর মধ্যে? এখানে একটি সত্য প্রকাশ করা প্রয়োজন, যা সেদিন সাংবাদিক হিসেবে খুব কাছে থেকে দেখেছি। মূলত সেদিন শেখ হাসিনা হত্যাচেষ্টার পরে ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম ও রোকনউদ্দিন মাহমুদের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। তারা সেদিন আইনজীবীদের নেতা হিসেবে যে ভূমিকা রেখেছিলেন সেটার সবকিছুই কাছে থেকে দেখা। তাই বলব, এই দু’জন সেদিন অভাবনীয় বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ড. কামালকে সভাপতি রেখে এই তদন্ত কাজ সম্পন্ন করেন। তাই কামাল হোসেন যেমন রহস্যজনকভাবে নয় মাস পাকিস্তানে থেকেও মুক্তিযোদ্ধা, তেমনি এখানেও তিনি সভাপতি। আমার আরও অনেক লেখায় লিখেছি, বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনি সত্যি একজন সৌভাগ্যের বরপুত্র। কারণ, প্রগতিশীলতার পক্ষে কখনও কোন দায়িত্ব না নিয়ে তিনি প্রগতিশীল থেকে গেলেন। তবে ওই যে বলে ইতিহাস খুবই নির্মম। ইতিহাস ঠিকই একটি সময়ে এসে যার যে প্রকৃত অবস্থান সেখানে নিয়ে যায়। ড. কামাল হোসেনের মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস পাকিস্তানে রহস্যজনক অবস্থানের গূঢ় রহস্য সেদিন সাংবাদিক এমআর আকতার মুকুলসহ মুজিবনগর সরকার ভালভাবেই বুঝেছিল। তাই এমআর আকতার মুকুল তাঁর চরমপত্রে কামাল হোসেনকে নিয়ে লিখেছেন। শুধু তাই নয়, সারা জীবন এম আর আকতার মুকুল বলে গেছেন, কামাল হোসেনের রুট হচ্ছে ঢাকা-ইসলামাবাদ-ওয়াশিংটন। আসলে পাকিস্তানপন্থীদের মুখোশ উন্মোচনের চূড়ান্ত সময় এখন বাংলাদেশে। এ দেশে এখন পরিষ্কার, শেষ বিচারে পাকিস্তানপন্থীদের আশ্রয়স্থল বিএনপি। জিয়াউর রহমানই পাকিস্তানপন্থীদের প্রকৃত বাপ-মা এদেশে। ইতিহাসের নির্মম বিচারে বিএনপি আজ ধ্বংসের মুখে। এই ধ্বংসপ্রাপ্ত বিএনপিকে রক্ষা করতে আজ অতীতের সব মুখোশ ফেলে দিয়ে ড. কামাল হোসেন রাজপথে খালেদা ও তারেক জিয়ার ছবিসহ পোস্টার হাতে নেমে গেছেন। অথচ তারই সভাপতিত্বে তদন্ত কমিটি খালেদার সরকারকে বলেছিল, এক মাসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট না দিলে ধরে নেয়া হবে ২১ আগস্ট ঘটনায় সরকার দায়ী। অর্থাৎ খালেদা-তারেক দায়ী। সেই কামাল আজ খালেদার মুক্তি ও পক্ষান্তরে তারেক রহমানকে রক্ষায় রাস্তায় নেমেছেন। আর কোন্্ সময় নেমেছেন? যখন ২১ আগস্ট মামলার রায় পেল দেশবাসী, সে সময়ে। কামাল হোসেন মুখে সব সময় আইনের শাসনের কথা বললেও আজ তিনি আইনত যারা সাজা পেয়েছে, তাদের মুক্তি চাচ্ছেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা হয় তারেকের নেতৃত্বে। তবে সব কিছু জানানো হয় খালেদা জিয়াকে। হামলাকারীদের সহায়তা ও রক্ষা সেদিন খালেদা জিয়াই করেন মূলত। তাছাড়া দেখা যাচ্ছে এই হামলায় যাদের ব্যবহার করা হয় তারা সকলে জঙ্গী। মুফতি হান্নান, তাইজুদ্দিনসহ অনেকে পাকিস্তানে ট্রেনিং নেয়া। অন্যদিকে পাকিস্তানী নাগরিক মজিদ ভাট বাংলাদেশে অবস্থান করে ওই হামলায় অংশগ্রহণকারীদের ট্রেনিং দিয়েছে। ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে যে তদন্ত কমিশন হয় ওই কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়, হামলাকারীরা প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। অর্থাৎ পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই নিয়োজিত প্রশিক্ষকরা খালেদার ওই আমলে বাংলাদেশে বসে শুধু ট্রেনিংই দেয়নি, গ্রেনেড হামলায়ও অংশগ্রহণ করে। অর্থাৎ তারেক রহমান পুরো জঙ্গী বাহিনীকে শেখ হাসিনা হত্যাচেষ্টা ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের হত্যায় ব্যবহার করে। আর এই জঙ্গীদের যে পুরো প্রটেকশন সেদিন খালেদা জিয়া দিয়েছিলেন তা এখন আদালতে প্রমাণিত সত্য। তাই আজ সেই জঙ্গীদের প্রশ্রয়দাতা ও ব্যবহারকারী খালেদার মুক্তি চেয়ে পোস্টার হাতে যখন কামাল হোসেন রাজপথে নামেন তখন আর কোন দ্বিধা থাকে না যে, জঙ্গীদের নেতা তারেক ও খালেদাকে রক্ষায় দাঁড়িয়েছেন ড. কামাল। অর্থাৎ তিনিই এখন জঙ্গী পালকদের গডফাদার হিসেবে পাকিস্তানপন্থী এই জঙ্গীদের রক্ষায় নেমেছেন। কামাল হোসেন যে জঙ্গীদের পক্ষের তার আরও প্রমাণ হলো, জামায়াত ও বিএনপি মিলে যখন রাজপথে পুলিশ, মিলিটারি, বিডিআর সদস্যসহ সাধারণ মানুষ হত্যা করছিল, তখন একদিনও কামাল হোসেন তাদের বিপক্ষে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। অথচ আজ জঙ্গীদের গডমাদার খালেদার যখন শাস্তি হয়েছে, আরেক গডফাদার তারেক রহমানের যখন একের পর এক অপরাধে শাস্তি হচ্ছে, সে সময়ে তিনি খালেদার মুক্তির পোস্টার নিয়ে রাজপথে নেমে গেছেন। বাস্তবে ইতিহাস বড়ই নির্মম, ১৯৭১ থেকে ২০১৮ অর্থাৎ ৪৮ বছর পরে এসে মুখোশ খুলে গেল ড. কামালের। দেখা গেল তার ভেতরের প্রকৃত রূপটি। এতদিন আইনের শাসনের নামাবলী পরা মানুষটির খোলস থেকে বেরিয়ে এলো তারেকের গডফাদার, বাংলাদেশে পাকিস্তানপন্থীদের রক্ষাকারী মূল নেতা। [email protected]
×