ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রেনেড হামলার রায়

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ১১ অক্টোবর ২০১৮

গ্রেনেড হামলার রায়

না, বিচারের বাণী কাঁদেনি নীরবে নিভৃতে। ভয়াবহ নৃশংসতার সঙ্গে জড়িতদের সাজাদান ঘোষিত হওয়ার মধ্য দিয়ে আইন তার নিজস্ব গতিতেই এগিয়েছে। অপরাধীদের দণ্ডাদেশ থেকে পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ আর নেই। সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে সন্দেহের উর্ধে থেকে অভিযুক্ত আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছে রাষ্ট্রপক্ষ। তাই চৌদ্দ বছর পর হলেও রায় হয়েছে। অপরাধীদের দ-াদেশ হয়েছে বিভিন্ন মেয়াদে। ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড, ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদ- এবং ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দিয়েছে আদালত। অবশ্য প্রত্যাশা অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি সবক্ষেত্রে মিলেছে এমনটা নয়। ক্ষমতার ছত্রছায়ায় ষড়যন্ত্রের সূতিকাগার হাওয়া ভবনে বসে হত্যাযজ্ঞের পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা কার্যকর করার সব ঘটনাই উদ্ঘাটিত হয়েছে। এমন প্রতিহিংসাপরায়ণ, নৃশংস, নির্মম, নারকীয়, বর্বরোচিত, ভয়াবহ, বীভৎস এবং মানবতাবিরোধী হত্যাযজ্ঞের ঘটনা বিশ্বের কোথাও ইতোপূর্বে ঘটেনি। পাষ-রা ক্ষমতায় থেকে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে বিরোধীদলীয় নেত্রীকে হত্যার যে প্রচেষ্টা চালিয়েছিল, তা কেউ ভাবতেও পারেনি। কিন্তু এই হত্যাকারীরা পেরেছিল নারকীয় হত্যাযজ্ঞ ঘটাতে। ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল জনসমাবেশে। গ্রেনেড বিস্ফোরণের শব্দে প্রকম্পিত হয়ে উঠেছিল সেদিন জনসমাবেশ স্থল থেকে রাজধানীসহ সারাদেশ। বিস্ময়ে, ক্ষোভে, ঘৃণায় ফেটে পড়েছিল দেশের মানুষ। কিন্তু তাদের দমাতে নির্যাতনের-নিপীড়নের-দলনের মাত্রা বাড়ানো হয়েছিল। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পথ ধরে ঘাতকের উত্তরসূরিরা তাঁর যোগ্য কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য চালিয়েছিল ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা। এসব গ্রেনেড এসেছিল পাকিস্তান থেকে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমবেশে শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে নিক্ষেপিত গ্রেনেড হামলায় মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ নেতাকর্মী নিহত হন। আহত হন কয়েক শ’ নেতাকর্মী। অনেকে এখনও শরীরে ক্ষতচিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেলেও তাঁর শ্রবণেন্দ্রীয় গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘটনার পর আলামত নষ্ট করা, এফবিআই’র তদন্ত দলকে সহযোগিতা না করার মতো অন্যায় কাজ করেছিল শাসক বিএনপি-জামায়াত গোষ্ঠী। প্রকৃত ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে অবতারণা করা হয়েছিল জজমিয়া নাটকের। এমনকি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এমনটাও বলেছিলেন যে, শেখ হাসিনা ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে এসেছিলেন। নৃশংসতার যে দৃশ্যপট সেদিন রচনা করা হয়েছিল ক্ষমতাসীন ঘাতককুলের বর্বরোচিত হামলায় তা ধামাচাপা দেয়ার শত অপচেষ্টা ব্যর্থ করে আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ যে প্রমাণাদি পেশ করে, তাতে নিশ্চিত হওয়া গেছে প্রতিপক্ষ রাজনীতিবিদদের নিশ্চিহ্ন করার জন্যই দীর্ঘ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই গ্রেনেড হামলা ও হত্যাযজ্ঞ। নিরস্ত্র মানুষের ওপর আর্জেস গ্রেনেডের মতো সমরাস্ত্র ব্যবহার এ উপমহাদেশে আর ঘটেনি। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঘটনার তদন্ত করে ২০০৮ সালে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি পৃথক মামলা করে। মামলা দুটিতে বিএনপির তারেক রহমানসহ ৪৯ জনকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে ৩১ জন কারাগারে রয়েছে। আর ১৮ জন পলাতক। অন্য মামলায় ফাঁসির কারণে তিনজনকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। মামলায় ২২৫ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। আদালতের রায়ে দেশের মানুষ সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও তাদের প্রত্যাশা ছিল হত্যাযজ্ঞের প্রধান পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতাকে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করা হবে। দেশবাসীর প্রত্যাশা, সরকার পক্ষ ফাঁসির দাবি জানাবে আপীলকালে। ইতিহাসের এক নারকীয় অধ্যায় ২১ আগস্ট কলঙ্কিত ও বর্বরতার দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। এই রায়ের দ্রুত কার্যকারিতা আমাদেরও কাম্য।
×