ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সঙ্কট মোকাবেলায় ঢাকায় মেঘনা থেকে পানি আনার পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১১ অক্টোবর ২০১৮

সঙ্কট মোকাবেলায় ঢাকায় মেঘনা থেকে পানি আনার পরিকল্পনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবার ঢাকার পানি সঙ্কট মোকাবেলায় মেঘনা থেকে পানি আনার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের আর্থিক এবং কারিগরি সহায়তায় এ বিষয়ে ৫ হাজার ২৪৮ কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও সোনারগাঁও উপজেলার বিষনন্দী ও হাড়িয়া নামক দুটি পয়েন্ট থেকে পাইপের মাধ্যমে ঢাকার পানির ঘাটতি মোকাবেলা করা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন ও অংশীদারী দুটি সংস্থার মধ্যে রয়েছে ঢাকা ওয়াসা ও পরিবেশ অধিদফতর। বুধবার রাজধানীর সোনারগাঁ হোটেলে আয়োজিত ‘মেঘনা নদীর পানি সরবরাহে টেকসই ও শক্তিশালী ব্যবস্থাপনা’ বিষয়ে এক জাতীয় সেমিনারে এই তথ্য জানানো হয়েছে। সেমিনারে উল্লেখ করা হয়, ঢাকার চার নদীর পানি এত দূষিত যে তা পরিশোধন করা ওয়াসার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ছে। এছাড়া ভুগর্ভস্থ স্তরের অধিক পানি তোলায় প্রতিবছর ঢাকার পানির স্তর ২ থেকে ৩ মিটার নিচে নেমে যাচ্ছে। এভাবে ভূগর্ভস্থ স্তরের পানি নেমে গেলে ঢাকায় বসবাসে বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া চার নদীর পানি যে হারে দূষিত হয়ে পড়ছে তা পানের অযোগ্য হয়ে পড়ছে দিন দিন। এর বিপরীতে ঢাকায় প্রতিনিয়ত পানি চাহিদা বেড়ে চলছে। অতিরিক্ত এই পানি চাহিদা মেটাতেই মেঘনা থেকে পানি আনার পরিকল্পন করা হয়েছে। বিষনন্দী এবং হাড়িয়া নামক স্থানের পানি দূষিত হলেও তা পরিশোধনযোগ্য এবং পানির মান অনেক ভাল বলেও সেমিনারে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, ঢাকা ওয়াসা এই দুটি পয়েন্ট থেকে পানি উত্তোলন করে স্থানান্তর পাইপের মাধ্যমে অপরিশোধিত পানি অদূরবর্তী পানি শোধানাগারে শোধন করে ঢাকা শহরে সরবরাহ লাইনে প্রবাহের পরিকল্পনা করেছে। এতে উল্লেখ করা হয়Ñ মেঘনার দুটি পয়েন্টে পানির গুণগত মান তথা দূষণমাত্রা এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রাপ্যতার বিষয়টি পরিবেশ অধিদফতরের এখতিয়ারভুক্ত হওয়ায় সরকার ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় একটি কারিগরি সহায়তা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। পরিবেশ, বন, জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ঢাকা ওয়াসা, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, জাপান ফান্ড ফর পোভার্টি রিডাকশনের যৌথ আয়োজনে জাতীয় এই সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি বলেন, ঢাকার চারপাশের নদীর পানি দূষিত হয়ে যাচ্ছে। বুড়িগঙ্গার পানি ইতোমধ্যে দূষিত হয়ে গেছে। আর বাকি তিনটি নদীর পানি দূষণের পথে। তাই ঢাকাবাসীর জন্য এখন মেঘনা থেকে পানি আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ঢাকার চারপাশের নদীর দূষণ যেভাবেই হোক রোধ করতে হবে। এই নদীদূষণ রোধ করতে না পারলে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য মারাত্মক সমস্যা হয়ে পড়বে। ঢাকার চারপাশের নদীদূষণের জন্যই এখন মেঘনা থেকে পানি সরবরাহের উদ্যোগ নিতে হয়েছে। তিনি বলেন, ভুগর্ভস্থ পানি অধিক ব্যবহার রোধে ভূ-উপরিস্থ পানির উৎসকে বেশি ব্যবহার করতে হবে। এজন্য নদীনালা, খালবিলের পানি ব্যবহার, এগুলোর সংস্কার ও খননের তাগিদও দেন। সেমিনারে বিশেষ অতিথি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল্লাহ আল মুহসিন চৌধুরী বলেন, পরিবেশ অধিদফতরে অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। জনবল নেই। এ জন্য নদী দূষণ রোধে মনিটরিং জোরদার হচ্ছে না। পরিবেশ অধিদফতরের আরও ৫৪৫ জনবলের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে । জনবল বাড়লে কাজে গতি আসবে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, ঢাকার চার নদীর দূষণ রোধে একটি মাস্টার প্ল্যান নেয়া হয়েছে। ঢাকা ওয়াসার পক্ষে এই দূষণ রোধ করা সম্ভব নয়; নদী দূূষণ রোধে সম্মিলিত উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান বলেন, ২০০৯ সালের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় আসার পর থেকে ঢাকায় পানি ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন আনা হয়েছে। বর্তমানে ঢাকা শহরের বাসিন্দার মধ্যে শতভাগ পানি যোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে। এমনকি বস্তি এলাকায় বৈধভাবে পানি সরবরাহ হচ্ছে। কারও অবৈধভাবে পানি ব্যবহারের প্রয়োজন হচ্ছে না। কিন্তু দিন দিন পানির চাহিদা বেড়েই চলেছে। বুড়িগঙ্গার পানি অধিক দূষিত হওয়ায় তা পরিশোধনের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এর বিপরীতে মেঘনার পানি পরিশোধনের জন্য পারফ্যাক্ট। ঢাকার চারপাশে নদী দূষণ রোধ করে নদীকে পুনরুজ্জীবিত করা অসম্ভব নয়। লন্ডনে টেমস নদীর পানি দূষিত হয়েছিল। সেই নদীকে দূষণমুক্ত করা হয়েছে। চাইলে আমরাও নদীকে দূষণমুক্ত করতে পারি, সেই পানি ব্যবহারও করতে পারি। এর জন্য সম্মিলিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। তিনি বলেন, আমরা যে পথে এগোচ্ছি তাতে ’২১ সালের মধ্যে পানি ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে। তখন ঢাকাবাসীকে ট্যাপের পানি খাওয়ানো সম্ভব হবে। সেমিনারে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এসএম মঞ্জুরুল হান্নান খান, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ ও ঢাকায় জাপান দূতাবাসের চার্জ দ্য এ্যাফেয়ার্স ইয়োশুরো শিনোতো বক্তব্য রাখেন।
×