গাফফার খান চৌধুরী ॥ স্মরণকালের সবচেয়ে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে ভয়াবহ একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষিত হয়েছে। কারা অধিদফতরের মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালত সেই রায় ঘোষণা করে। এজন্য আদালতের চারদিকে অন্তত এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে অলিখিত ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল। রায়ের পরেও ওই এলাকা রয়েছে কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে। আগামী অন্তত এক সপ্তাহ সারাদেশে এমনই কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলবত থাকছে। সেইসঙ্গে দেশব্যাপী একযোগে চলা সাঁড়াশি অভিযানের মাত্রা আরও বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। রায়কে কেন্দ্র করে যত দিন কর্মসূচী পালিত হবে, ততদিনই থাকছে কঠোর নিরাপত্তা। সেই সঙ্গে আসামিদের পরিবারের সদস্য ও তাদের স্বজনদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানীতে প্রবেশের প্রতিটি রাস্তায় পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করছে। আদালতের চারদিকে প্রতিটি রাস্তায় চেকপোস্ট বসানো হয়েছিল। শাহবাগ থেকে শুরু করে আদালতে যাওয়ার রাস্তায় বকশিবাজার, নবকুমার ইনস্টিটিউট, নাজিমউদ্দিন রোড, উমেশ দত্ত রোডের প্রতিটি রাস্তার মোড়ে, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের সামনের রাস্তায়, পলাশীতে, পুরান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে, চকবাজারসহ আশপাশের এমন কোন রাস্তা ছিল না, যেখানে চেকপোস্ট ছিল না। চেকপোস্টে সবাইকে তল্লাশি করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ ও যানবাহনের চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। এসব এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছিল বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যাব, এপিবিএন ও আনসার।
সকাল দশটার দিকে গাজীপুর হাইসিকিউরিটি জেল থেকে কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে আসামিদের আদালতের দিকে নেয়া হয়। পুরো রাস্তা র্যাব, পুলিশ, কারা নিরাপত্তা বাহিনী ও আনসার কর্ডন করে রেখেছিল। আগে-পিছে কড়া পাহারায় তাদের আদালতে আনা হয়। আসামিদের প্রিজনভ্যান ও মাইক্রোবাসে করে আনা হয়। গাড়িবহরে ছিল অন্তত ৩০টি গাড়ি। এরমধ্যে একটি ফাঁকা প্রিজনভ্যান ছিল। যাতে কোন কারণে কোন প্রিজনভ্যান নষ্ট হলে তাৎক্ষণিকভাবে আসামিদের অন্য প্রিজনভ্যানে আদালতে হাজির করা যায়। ছিল একটি সরকারী এ্যাম্বুলেন্স। সবার সামনে ছিল র্যাবে কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী। অত্যাধুনিক অস্ত্র হাতে র্যাব সদস্যরা ছিলেন সবার সামনের সারিতে।
সকাল দশটার দিকে আসামিদের হাজির করা হয় আদালতে।
এদিকে আদালত এলাকায় ছিল কঠোর নিরাপত্তা। আদালতের চারদিকে সব ধরনের যানবাহন ও সাধারণ মানুষের চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। প্রবেশ পথে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অতিরিক্ত সদস্য। আর আদালতের চারদিকের উঁচু ভবনগুলোর ছাদে বসানো হয়েছিল ওয়াচ টাওয়ার। সেখানে শক্তিশালী বাইন্যুকোলার আর অত্যন্ত স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অবস্থান নিয়েছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সবচেয়ে সুদক্ষ শূটাররা। যাদের ছাদে দায়িত্ব পালন করতে দেয়া হয়েছিল, তারা সবাই ছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘ওয়ান বুলেট ওয়ান ম্যান’ ডেথ গ্রুপের সদস্য। অর্থাৎ তারা প্রতিটি বুলেটে একজন করে মানুষকে ফেলে দিতে সক্ষম। এমনই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সুদক্ষ গুলিবর্ষণকারী।
দুপুর পৌনে বারোটার দিকে রায় ঘোষণা করেন বিচারক। এরপর আসামিদের কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে নিয়ে যাওয়া হয় পুরান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। সেখানে তাদের রাখায় হয় প্রায় এক ঘণ্টা। এ সময় কারাগারের সামনে, চকবাজারের রাস্তাসহ আশপাশের সব রাস্তায় আরও পুলিশ, র্যাব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সদস্য মোতায়েন করা হয়। চাঁনখারপুল থেকে আশপাশের সব রাস্তা একেবারে বন্ধ করে দেয়া হয়। যেসব সাধারণ মানুষে যেই যে অবস্থানে ছিলেন, তাদের সেই অবস্থানেই রাখা হয়। কোথাও যেতে দেয়া হয়নি। আগ থেকেই কারাগারের সামনের ভবনগুলোর ছাদে পুলিশ ও র্যাবের দক্ষ শূটারদের সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছিল।
দুপুর একটার দিকে আসামিদের নিয়ে বের হয় গাড়ি বহর। গাড়ি বহরে ছিল অন্তত ৩০টি গাড়ি। এরমধ্যে দুইটি প্রিজনভ্যানে ও একটি মাইক্রোবাসে করে আসামিদের নেয়া হয়। সামনে ছিলেন স্বয়ংক্রিয় ভারি অস্ত্র হাতে র্যাবের চৌকস সদস্যরা। গাড়ি বহরটি কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে কারাগার থেকে বের হয়ে কারাগারের দেয়ালের ঘেরের ভেতরের রাস্তা দিয়ে বের হয়। গাড়ি বহরটি আবার কারা অধিদফতরের সামনে দিয়ে গাজীপুরের হাইসিকিউরিটি জেলের উদ্দেশে রওনা হয়। আগে-পিছে র্যাব ছাড়াও ছিল পুলিশ, কারা নিরাপত্তা বাহিনী ও আনসার সদস্যরা। যাওয়ার সময় আসামিদের অনেকেই মুখ লুকিয়ে ছিলেন। যাদের দেখা গেছে, তাদের মুখে ছিল বিষাদের ছায়া।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: