ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্দান্ত খেলেও সেমিতে হার বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১১ অক্টোবর ২০১৮

দুর্দান্ত খেলেও সেমিতে হার বাংলাদেশের

রুমেল খান, কক্সবাজার থেকে ॥ ‘ছেলেদের নিয়ে আমি সত্যিই গর্বিত। তারা অসাধারণ পারফর্মেন্স করেছে। যদিও প্রথম ১০ মিনিটে স্লো ছিল। এর মধ্যে একটা গোলও হজম করে। এরপর ছেলেরা যেভাবে খেলেছে তাতে আমি খুশি। তাদের মুভমেন্ট, পাসÑ সবগুলোই ছিল ভাল। গোলের অনেকগুলো সুযোগ সৃষ্টি করেছে কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত গোল পায়নি। সার্বিকভাবে পুরো ম্যাচে ছেলেরা ভাল খেলেছে। টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয়াটা অবশ্যই হতাশার। তবে আমি মনে করি এখান থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।’ কথাগুলো জেমি ডে’র। বুধবার বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবলের সেমিতে ফিলিস্তিনের কাছে ২-০ গোলে হেরে যায় স্বাগতিক বাংলাদেশ। আগামী ১২ অক্টোবর ঢাকায় অনুষ্ঠেয় ফাইনালে তাজিকিস্তানের মোকাবেলা করবে ফিলিস্তিন। ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের এই ব্রিটিশ কোচ বলেন, ‘আমরা জানি ফিলিস্তিন র‌্যাঙ্কিংয়ে অনেক এগিয়ে। তারা দ্রুতগতিতে খেলে। তাদের সেট পিসগুলো বিপজ্জনক। একটা বড় দলের বিপক্ষে জিততে হলে সুযোগগুলো কাজে লাগাতে হবে। কিন্তু আমরা তা পারিনি। তাই বলে ফরোয়ার্ডদের দোষ দিচ্ছি না।’ জেমির মতেÑ ফিলিস্তিন ট্যাকটিক্যালি ভাল। তবে তার কাছে মনে হয়েছে কখনও কখনও বাংলাদেশ তাদের চেয়েও এগিয়ে ছিল। ‘গত ২০ সপ্তাহ আমি তাদের সঙ্গে আছি। ছেলেরা কঠোর পরিশ্রম করেছে। দলের জন্য তারা সব উজাড় করে দিয়েছে। ২৩ ফুটবলারই দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছে। তারা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছে। দুর্ভাগ্য আমাদের ফাইনালে উঠতে পারিনি।’ সাফে দুই ম্যাচ জিতেও সেমিফাইনালে উঠতে পারেনি বাংলাদেশ। এবার বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের সেমিতে উঠলেও পরপর দুই ম্যাচে হেরে বিদায় নিতে হয়েছে লাল-সবুজদের। তবে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে দেখা গেছে ভিন্ন চেহারার বাংলাদেশ দলকে। জেমি বলেন, ‘দুই টুর্নামেন্টের তুলনা করতে বললে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের পারফর্মেন্সকেই এগিয়ে রাখব। সাফে পাকিস্তানের বিপক্ষে আমরা শেষ মুহূর্তে গোল করেছি। দুই ম্যাচ জিতেও সেমিতে উঠতে পারিনি। গোল্ডকাপে লাওসের সঙ্গে জয়ের পর ফিলিপিন্স ও ফিলিস্তিন ম্যাচে হেরেছি। কিন্তু শেষ দুই ম্যাচে ছেলেরা যেভাবে খেলেছে তাতে আমি খুশি। হয়তো জিততে পারেনি। কিন্তু খেয়াল করে দেখুন প্রতিটি বিভাগেই দল উন্নতি করেছে অনেক।’ বাংলাদেশের খেলায় মুগ্ধ ফিলিস্তিন কোচ নূর উদ্দিনও, ‘দুর্ভাগ্য বাংলাদেশের তারা বিদায় নিয়েছে। তাদের ফরোয়ার্ড জীবন একাধিক সুযোগ নষ্ট করেছেন। তারা আমাদের বারবার সমস্যায় ফেলেছে। কন্ডিশন ভাল ছিল না। তবে ছেলেরা ভাল খেলেছে।’ ফিলিস্তিন কোচ আরও বলেন, ‘এটা ঠিক বাংলাদেশ ভাল খেলেছে। তবে আপনি যখন এগিয়ে থাকবেন, তখন প্রতিপক্ষরা একটু চাপ প্রয়োগ করবেই। আর বাংলাদেশের জন্য তো গোল করা সহজ ছিল না। আমাদের ডিফেন্ডাররা তাদের সেই সুযোগ দেয়নি।’ বুধবার বিপুল দর্শক সমর্থন এবং অনুকূল আবহাওয়া (বৃষ্টির কারণে মাঠ ছিল ভেজা, কর্দমাক্ত ও পিচ্ছিল)... কোনটি দিয়েই হার এড়াতে পারেনি বাংলাদেশ দল। যদিও তারা চমৎকার গতিশীল-লড়াকু ফুটবল খেলেছে কিন্তু সেটা যে যথেষ্ট ছিল না জেতার জন্য। এ নিয়ে চারবার মুখোমুখি হলো বাংলাদেশ-ফিলিস্তিন। তিনবারই হারলো বাংলাদেশ। একটি ম্যাচ ড্র হয়। সত্যি বলতে কিÑ আসলে স্কোরলাইন কখনই বোঝাতে পারবে না বুধবারের সেমির ম্যাচে কতটা অসাধারণ ভাল খেলেছিল বাংলাদেশ। আক্রমণ সামাল দিয়ে বিপজ্জনক পাল্টা আক্রমণ, প্রচুর গোলের সৃষ্টি করা, দৈহিক গড়ন-উচ্চতায় পিছিয়ে থেকেও সমানতালে গতিশীল খেলা, প্রতিপক্ষের সমীহ আদায় করা, দর্শকদের ভালোবাসা পাওয়া... এ সবই করেছে জেমি ডে’র শিষ্যরা। এক কথায় বলতে গেলে এই ম্যাচে সবকিছুই করতে পেরেছে বাংলাদেশ দল, শুধু গোলটাই আদায় করতে পারেনি। ভাল খেলেও আক্ষেপের হার... এমন ফুটবলের সঙ্গে দর্শকদের পরিচিতি নেই অনেকদিন ধরেই। শেষ পর্যন্ত রেফারি খেলা শেষের বাঁশি বাজালে গোল মিসের আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ দল। ব্যর্থ হয়ে যায় কন্ডিশনকে কাজে না লাগাতে পারা কক্সবাজারের মাটিতে অভিষিক্ত জাতীয় দলের সব প্রচেষ্টা।
×