ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দুপুরের মধ্যে আঘাত হানতে পারে ‘তিতলি’

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১১ অক্টোবর ২০১৮

দুপুরের মধ্যে আঘাত হানতে পারে ‘তিতলি’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঘূর্ণিঝড় তিতলি আরও জোরদার হয়ে ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে’ রূপ নিয়েছে। এটি এখন ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার বেগে উপকূলের দিকে ধাবিত হচ্ছে। তবে এর গতিপথ এখনও উড়িষ্যা এবং অন্ধ্র উপকূলের দিকেই রয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে। এটি ভারতের উড়িষায় আঘাত হানলে এর প্রভাব দেশের সুন্দরবন, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট এবং খুলনা এলাকায়ও পড়তে পারে। এর প্রভাবে এখন পর্যন্ত আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু নেই বলে জানান আবহাওয়াবিদরা। এদিকে বুধবার তিতলি আরও জোরদার হওয়ায় আবহাওয়া অফিসের পক্ষ থেকে দেশের সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’র প্রভাবে মঙ্গলবার দুপুর থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। এর প্রভাবে আজ বৃষ্টিপাত আরও বাড়বে। বুধবার সকাল থেকেই রাজধানীসহ দেশের আকাশ ছিল মেঘলা। থেমে থেমে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়াবিদ নিঝুম রোকেয়া বলেন, দেশে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব না পড়লেও প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে। এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’র প্রভাবে আবহাওয়া বিরূপ থাকায় সারাদেশে অভ্যন্তরীণ রুটে নৌচলাচল বন্ধ রাখতে বলেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। বুধবার দুপুরের পর বিআইডব্লিউটিএর অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল বন্ধের নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয় ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ৪ নম্বর বিপদ সঙ্কেত চলতে থাকায় পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে। নৌ-নিরাপত্তা এবং নৌ-ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্ত বিভিন্ন নৌ-টার্মিনালকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এদিকে আবহাওয়া অধিদফতরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়’ তিতলি সামান্য উত্তরে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি বুধবার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৯১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ৮৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৭৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৭৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর, উত্তর-পশ্চিমে অগ্রসর হতে পারে। এতে আরও উল্লেখ করা হয় প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার যা দমকা ও ঝড়ো হাওয়া আকারে ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকট সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে। ফলে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর সমূহকে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত যে কোন সময়ে স্থলভাগে আঘাত করতে পারে। এখন পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়টির গতিপথ উড়িষা এবং অন্ধ্র উপকূলের দিকে থাকলেও দেশের খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট এবং সুন্দরবন এলাকায় প্রভাব পড়তে পারে। নদীবন্দর সমূহের সতর্কতায় বলা হয়েছে ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে পূর্ব/দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০-৮০ কি.মি. বেগে বৃষ্টি, বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দর সমূহকে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর বহির্নোঙ্গরে পণ্য লাইটারিং বন্ধ ॥ এদিকে চট্টগ্রাম অফিস জানায়, ঘূর্ণিঝড় তিতলির প্রভাবে বুধবারও সারাদিন চট্টগ্রামে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। স্বাভাবিক জনজীবন ব্যাহত হয়। সতর্কতা সঙ্কেত থাকায় চট্টগ্রাম বন্দর বহির্নোঙ্গরে কোন ধরনের পণ্য লাইটারিং হয়নি। কন্টেনার হ্যান্ডলিং স্বাভাবিক থাকলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে পণ্য ডেলিভারি ছিল সীমিত। ধসের আশঙ্কায় পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ ঘরগুলোতে বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে তৎপর হয়েছে জেলা প্রশাসন। সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সাগর উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর বহির্নোঙ্গরে বুধবার পণ্য খালাস সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। অভ্যন্তরীণ জলপথে পণপরিবহনও বন্ধ থাকে। বাতাস এবং উত্তাল ঢেউয়ের কারণে বহির্নোঙ্গরে ছোট লাইটার জাহাজগুলোর গমন বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। মাছ ধরার নৌকাসহ সকল ধরনের জলযান কর্ণফুলী ঘাটগুলোতে এনে রাখা হয়েছে। তবে ইলিশ প্রজননের এই মৌসুমে সাগরে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় আগে থেকেই ফিশিং ট্রলারগুলো উপকূলের কাছাকাছি ভেড়ানোই ছিল।
×