ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সিআইপি-২ এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে দেয়া মতিয়া চৌধুরীর বক্তব্য

ক্ষমতার ধারাবাহিকতা থাকলে কখনও দুর্ভিক্ষ হবে না

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১১ অক্টোবর ২০১৮

ক্ষমতার ধারাবাহিকতা থাকলে কখনও দুর্ভিক্ষ হবে না

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, ২০০১ সালে ক্ষমতার ধারাবাহিকতায় ছেদ না ঘটলে দেশ আজ উন্নত দেশে পরিণত হতো। শুধু কৃষিতে নয়, সকল ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটত। তিনি বলেন, ক্ষমতার ধারাবাহিকতা থাকলে এবং এভাবে চলতে থাকলে দেশে আর কখনও দুর্ভিক্ষ হবে না। খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন, দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বর্তমানে খাদ্য মজুদ ১৬ লাখ মেট্রিক টনের বেশি। এখন দেশের মানুষকে পুষ্টিকর খাদ্য প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করছি। সিআইপি-২ (কান্ট্রি ইনভেস্টমেন্ট প্লান) বাস্তবায়ন হলে দেশ উন্নত বিশ্বের সঙ্গে সমানতালে চলতে পারবে। বুধবার রাজধানীর সিরডাপ কনফারেন্স হলে সিআইপি-২ এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে যথাক্রমে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথির ব্যক্তব্যে মন্ত্রীদ্বয় একথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহাবুদ্দিন আহমদ। দেশে ভুট্টা চাষের অগ্রগতি নিয়ে বলতে গিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের ক্ষমতার ছেদ ঘটেছে। তা না হলে দেশ শুধু কৃষিখাতে নয়, সকল দিকে এগিয়ে যেত। বাংলাদেশ আজ উন্নত দেশে পরিণত হতো। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সবুজ বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন। ক্রমবর্ধমান কৃষিজমি হ্রাস, জলবায়ু পরিবর্তন, জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে চাহিদা দিন দিন বেড়ে যাওয়াসহ নানা প্রতিকূলতার মধ্যে প্রতিনিয়ত ফসল বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এটি রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগসহ সরকার-কৃষক সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টার ফল। বর্তমানে ৩ কোটি মেট্রিক টনের ওপরে চাল উৎপাদন হচ্ছে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, দেশে খাদ্যের অভাব না থাকায় মানুষ এখন পুষ্টির দিকেও নজর দিতে পারছে। রাতকানা, গলগ-ের মতো রোগ এখন আর নেই। যক্ষ্মা, উদরাময় (ডায়রিয়া-কলেরা) রোগীর সংখ্যা কমেছে। প্রধানমন্ত্রী যেভাবে পরিকল্পনা দিচ্ছে, সেভাবেই কাজ হচ্ছে। এতে অনেক সুফল পাওয়া যাচ্ছে। আগামীতে এই সকল রোগের নামও নতুন প্রজন্ম জানবে না। তিনি বলেন, দানাদার খাদ্যের চাহিদা বেড়েছে। এখন মাছ-পশুপাখিকেও দানাদার খাদ্য দেয়া হয়। কৃষিকে বাদ দিয়ে এখন মাছ-মাংস হচ্ছে না। গবেষণা কাজে নিয়োজিত বিজ্ঞানীদের প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। তারাও নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করছেন। এতে ফলন বাড়ছে। ক্ষমতার ধারাবাহিকতা থাকলে আর এভাবে চলতে থাকলে দেশে আর কখনও দুর্ভিক্ষ হবে না। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ২০১১ সালে সিআইপি-১ কার্যক্রম শুরু হয়। যথাসময়ে সফলভাবে এটি সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ক্ষুধামুক্ত দেশ গঠনের লক্ষ্যে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে দেশের সেই অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিয়েছিল। সকল আশা তখন মুখ থুবড়ে পড়ে। দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ দায়িত্ব গ্রহণকালে দেশে ৪০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি ছিল। সেই খাদ্য ঘাটতি মিটিয়ে উদ্বৃত্ত রেখে যায়। কিন্তু জোট সরকার ক্ষমতায় আসায় আবার খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে আবারও ঘাটতি মিটিয়ে চাহিদার অতিরিক্ত খাদ্য উৎপাদন করে। বিগত সরকারগুলো দেশের খাদ্য ঘাটতি মেটাতে চায়নি। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান বলেছিলেন, দেশে খাদ্য ঘাটতি, আর্থিক দীনতা থাকলে বিদেশী সাহায্য পাওয়া যায়। তারা দেশ ও জাতিকে ভিক্ষুক বানিয়ে রেখে বিদেশ থেকে সাহায্য এনে নিজেদের পকেটস্থ করত। এই ছিল তাদের রাজনীতি। তিনি বলেন, দেশের জমিতে আগে একটি ফসল ফলত। এখন একই জমিতে বছরে ২/৩টি করে ফসল ফলে। দেশে কোথাও মঙ্গা নেই। মঙ্গা আমরা চিরতরে দূর করেছি। দেশে হতদরিদ্র এখন ১২ শতাংশেরও নিচে। কামলারা আগে সারাদিন কাজ করে উপার্জিত অর্থ দিয়ে তিন থেকে সাড়ে তিন কেজি চালের বেশি কিনতে পারত না। এখন তারা চাইলে একদিনের উপার্জন দিয়ে ১০/১২ কেজি চাল কিনতে পারে। আগে সরকারী গুদামের ধারণ ক্ষমতা ছিল মাত্র ১৬ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমানে এই ক্ষমতা ২১ লাখে উন্নীত করা হয়েছে। অল্পদিনের মধ্যেই ধারণ ক্ষমতা ২৭ লাখে উন্নীত হবে। আগামী ২০৩০ সালে ধারণ ক্ষমতা দাঁড়াবে ৩০ লাখ মেট্রিক টনে। অথচ বিগত সরকারের আমলে অনেক খাদ্যগুদাম সরকারের বেদখল হয়ে যায়। মানুষ এখন আর ক্ষুধার জ্বালায় কষ্ট পায় না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ায় এখন আমরা নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিতে কাজ করছি। এ লক্ষ্যে ইতোপূর্বে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়েছে। তারা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এই আইনটি তৈরি করতে ভারত, শ্রীলঙ্কাসহ অন্যান্য দেশের ৭/৮ বছর সময় লেগেছে। আমরা তার অর্ধেকেরও কম সময়ে তা করেছি। আমরা সামাজিক নিরাপত্তা বলয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। ফেয়ার প্রাইস কার্ড, ভিজিএফ কার্ড ইত্যাদির মাধ্যমে একটির পর একটি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। হতদরিদ্রদের ১০ টাকা কেজি দরে চাল খাওয়াচ্ছি। এখন আমরা দেশে পুষ্টি চালের কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। কয়েকটি স্থানে এই চাল বিতরণ হচ্ছে। আগামীতে সারাদেশে এই কার্যক্রম চালানো হবে। এই লক্ষ্যে বেসরকারী পর্যায়ে পুষ্টি চাল তৈরির মিল তৈরি করা হচ্ছে। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, সিআইপি-২ বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে। শুধু খাদ্যে নয় আমরা আর্থিকভাবেও ধনী হব।
×