ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের পর নাশকতার চেষ্টা

বগুড়ায় বাসে পেট্রোলবোমা হামলায় আহত ৩, যুবদল নেতা গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১১ অক্টোবর ২০১৮

বগুড়ায় বাসে পেট্রোলবোমা হামলায় আহত ৩, যুবদল নেতা গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার রায় হওয়ার পর বুধবার বগুড়ার শাজাহানপুর এলাকায় ঢাকাগামী বাসে পেট্রোল বোমা হামলা হয়েছে। এ ঘটনায় আঞ্জুমনারা বেগম (৫০), মনিরা বেগম (৪০) ও শামিমা (২৭) নামে তিন যাত্রী আহত হন। পুলিশ ঘটনার পরপরই ধাওয়া করে হামলার সঙ্গে জড়িত নূর মাহমুদ (৩০) নামে এক যুবদল নেতাকে গ্রেফতার করে। জাতীয়তাবাদী যুবদল বগুড়া জেলা শাখার সহ-কৃষি বিষয়ক সম্পাদক। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলনের নামে নাশকতার সময় অন্যতম ত্রাসের পয়েন্ট ছিল শাজাহানপুর উপজেলার ওই এলাকা। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, দুপুর ১টার দিকে নাবিল পরিবহনের একটি বাস (ঢাকা মেট্রো-ব-১৫-৬৪৪) নিলফামারী থেকে ঢাকা যাচ্ছিল। পথে বগুড়া-ঢাকা মহাসড়কের ফটকি ব্রিজ সংলগ্ন রাধার ঘাট এলাকায় ৮/১০ জন সেখানে এসে বাসে হামলা চালায়। হামলার শিকার বাসটির সামনে আরও দুটি বাস ছিল। হামলাকারীরা প্রথমে একটি বাস লক্ষ্য করে পেট্রোল বোম নিক্ষেপ করলে বাসটি দ্রুত চলে যায়। এরপরই নাবিল পরিবহনের বাসের সামনের দিক থেকে পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারে হামলাকারীরা। এতে গাড়ির সিটে আগুন ধরে যায় এবং ধোঁয়ার সৃষ্টি হলে যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে আর্তচিৎকার শুরু করেন। এ সময় হামলাকারীরা লাঠি দিয়ে গাড়িতে হামলা চালিয়ে গ্লাস ভাংচুর করে। নাবিল পরিবহনের বাসচালক আসলাম জানান, তার গাড়িতে হামলার আগে হামলাকারীরা লাঠিসোটা নিয়ে আরও একটি ট্রাক ও বাসে হামলা চালায়। এরপরই তার গাড়িতে হামলা হয়। পেট্রোল বোমায় গাড়ির সিটে আগুন ধরে গেলে তিনি দ্রুত যাত্রীসহ বাসটি পাশের ফিলিং স্টেশনে নিয়ে যান এবং পানি দিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলেন। ওই বাসের যাত্রী নীলফামারীর উত্তরবালা পাড়ার আমিনা খাতুন জানান, আকস্মিক হামলায় বাসের সকল যাত্রী আতঙ্কিত হয়ে চিৎকার শুরু করেন। আগুন আর লাঠিসোটা নিয়ে বাসে হামলায় তারা প্রাণ শঙ্কায় পড়েন। বাসটি থামার সঙ্গে সঙ্গে কোলে থাকা শিশু সন্তান নিয়ে তিনি আতঙ্কে বাসের জানালা দিয়ে নিচে নামেন। নাবিল পরিবহনের হেলপার শরিফ জানান, তিনি দুটি পেট্রোল বোমা বিস্ফোরিত হওয়ার শব্দ শুনেন। ঘটনার পরপরই টহল পুলিশের একটি টিম সেখানে যায় এবং হামলাকারীদের ধাওয়া করে। এ সময় পুলিশের টহল দলটি কিছু দূর পর্যন্ত ধাওয়া করে হামলায় অংশ নেয়া যুবদল নেতা নুর মাহমুদকে গ্রেফতার করে বলে পুলিশ জানায়। তার বাড়ি শাজাহানপুর উপজেলায়। বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুইয়া জানান, পেট্রোল বোমা হামলায় তিন জন আহত হয়েছে। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ এক পেট্রোলবোমা হামলাকারীকে গ্রেফতার করে। তিনি আরও জানান, মোট কতজন হামলাকারী ছিল তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। প্রসঙ্গত বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বগুড়ায় বিএনপি-জামায়াত জোট সড়ক মহাসড়কজুড়ে পেট্রোল বোমার ত্রাস সৃষ্টি করেছিল। তাদের লাগাতার পেট্রোল বোমা হামলার কারলে ওই সময় বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। এবার ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের পর যাত্রীবাহী বাসে আবার পেট্রোল বোমা হামলা ও ৩ মহিলা যাত্রী আহত হওয়ার ঘটনা ঘটল। রায় ঘোষণার পর না’গঞ্জে ককটেল বিস্ফোরণ, ৭টি উদ্ধার ॥ স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষণার পর নারায়ণগঞ্জ নগরীর গলাচিপা, ফতুল্লার ভুইঘর এবং সোনারগাঁয়ের কয়েকটি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় সোনারগাঁ থেকে সাতটি তাজা ককটেলসহ বিএনপির তিন নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোরশেদ আলম জানান, সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুর, মোগড়াপাড়া চৌরাস্তাসহ চারটি পয়েন্টে ৮ থেকে ১০টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় দুর্বৃত্তরা। কাঁচপুর বাসস্ট্যান্ডের সামনে তিনটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সময় কাঁচপুর বাসস্ট্যান্ডের সামনে থেকে উপজেলা তাঁতী দলের সভাপতি ইসমাইল সিকদারকে ককটেলসহ গ্রেফতার করা হয। মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা আয়ুব প্লাজা মার্কেটের সামনে তিনটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। এ সময় মার্কেটে আগত ক্রেতা ও রাস্তায় চলাচলকারী পথচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ওসি আরও জানান, সাতটি তাজা ককটেলসহ উপজেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক এনামুল হক রবিন, পিরোজপুর ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক নুর নবী মাস্টার ও উপজেলা তাঁতী দলের সভাপতি ইসমাইল সিকদারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদরে বিরুদ্ধে নাশকতা চেষ্টা ও বিস্ফোরক আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এদিকে নগরীর গলাচিপা এলাকার তিন থেকে চারটি স্পটে চার-পাঁচটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। গলাচিপা ডিএইচএল গলির ভেতরে একটি এবং আশপাশের এলাকায় এই ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি ) কামরুল ইসলাম জানান, দুপুর সাড়ে ১২টায় নগরীর গলাচিপার এলাকায় চার-পাঁচটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে কয়েকটি বিস্ফোরিত ককটেলের আলামত জব্দ করে। এতে ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। একই সময়ে ফতুল্লার ভ্ইুঘর এলাকায় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা একটি ঝটিকা মিছিল বের করে কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সময় পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ধাওয়া দিলে মিছিলকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যায়। ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মঞ্জুর কাদের জানান, ভুইঘরে একটি মিছিল থেকে কয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। পুলিশ যাওয়ার আগেই মিছিলকারীরা পালিয়ে যায়। এ সময় তিন চারটি গাড়ি ভাংচুর করা হয়। এ বিষয়ে নাারয়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মনিরুল ইসলাম জানান, রায় ঘোষণার পর নারায়ণগঞ্জ সদর, ফতুল্লার ভ্ইুঘর ও সোনারগাঁয়ের মোগড়াপাড়া ও কাঁচপুর বাসস্যান্ডসহ কয়েকটি স্থানে বিস্ফোরণ হয়েছে। সোনারগাঁয়ে ককটেলসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য জায়গাগুলোতে কারা কি কারণে এই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে তাদের শনাক্ত করা চেষ্টা চলছে। সংশ্লিষ্ট থানায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×