ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রায়ের কপি পাওয়ার পর আপীলের সিদ্ধান্ত ॥ আইনমন্ত্রী

তারেকের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি বিভিন্ন মহলের

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১১ অক্টোবর ২০১৮

তারেকের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি বিভিন্ন মহলের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে তারেক রহমানের ফাঁসির দাবি জানিয়েছে রাজনৈতিক দল, সংগঠনসহ বিভিন্ন সেক্টরের প্রতিনিধিরা। তারা বলছেন, রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হলেও মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে তারেক রহমানের সাজা মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে আপীলের মধ্য দিয়ে তার সর্বোচ্চ দ- নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে। তাছাড়া বিএনপি এই হত্যাকা-ের দায় কোনভাবেই এড়াতে পারে না। খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় এই হামলার ঘটনা হয়েছে। তাই তিনিও এই মামলার বিচারের বাইরে থাকতে পারেন না। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকার সময় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। হামলার ঘটনায় আইভি রহমানসহ ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। দীর্ঘদিন পর এই মামলার রায় হয়েছে। রায়ের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতারা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হলোÑজাসদ ॥ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি ও হাসানুল হক ইনু এমপি এবং সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচারের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা হত্যা ছিল ইতিহাসের ঘৃণ্য সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক হত্যাকা-। একটি রাজনৈতিক দলকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে এ হামলা হত্যাকা- পরিচালিত হয়েছিল। এটা ছিল একটি রাজনৈতিক দলকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য টেক্সটবুক পলিটিক্যাল ক্লিনিং। তারা বলেন, এই ঘৃণ্য হত্যাকা-ের বিচারের মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হলো। অপ্রত্যাশিত রায় ॥ বর্বরোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মূল হোতা বা মাস্টারমাইন্ড তারেক রহমানের অপরাধের প্রাপ্য শাস্তি ফাঁসির দ- না হওয়ায় অপ্রত্যাশিত রায় প্রত্যাখ্যান করে আপীলের মাধ্যমে ফাঁসির দ- নিশ্চিত করার দাবি জানান বাংলাদেশ অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ)। বুধবার সংগঠনের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রাকিবের স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়। সংগঠনের সভাপতি কবীর চৌধুরী তন্ময় বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা হচ্ছে তারেক রহমানের রাজনৈতিক সন্ত্রাস। শেখ হাসিনাকে হত্যার মাধ্যমে উপমহাদেশের রাজনৈতিক নেতা, অসাম্প্রদায়িক নেতৃত্ব ও রাজনীতির ঐতিহ্যকে চিরতরে ধ্বংস করার পরিকল্পনা ছিল খালেদাপুত্র তারেক রহমানের। আওয়ামী লীগের ২৪ নেতাকর্মীর হত্যাকা-ের মূল হোতা তারেক রহমানের যাবজ্জীবন কারাদ-; এটি অপ্রত্যাশিত, অগ্রহণযোগ্য, আমরা এই রায়কে প্রত্যাখ্যান করছি। তিনি বলেন, ব্যক্তি অপরাধের চেয়ে রাজনৈতিক অপরাধ দেশ ও জাতির জন্য হুমকি যা সমাজ ও রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অপসংস্কৃতি ও অপরাজনীতি করতে সহায়তা করে। আইনের শাসন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং অনাগত অপরাধীদের মাঝে দৃষ্টান্ত স্থাপনে আপীলের মাধ্যমে তারেক রহমানের মতন রাজনৈতিক সন্ত্রাসীদের ফাঁসির দ- নিশ্চিত করতে হবে। বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেন সংগঠনের সহসভাপতি নাজমা আক্তার রোজী, মিজানুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এনায়েত হোসেন প্রিন্স, ইমরান খান শ্রাবন, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীকুল আলম টিটু, মাজহারুল ইসলাম জুয়েল, দপ্তর সম্পাদক নাঈমুর রহমান ইমন, সদস্য শাহনাজ পারভীন রলি, ইমরান আলী, আবদুল ওয়াদুদ ইপন। ওয়ার্কার্স পার্টি ॥ বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর এক বিবৃতিতে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ দলের মূল নেতৃত্বকে নিশ্চিহ্ন করার বর্বর হত্যাকা-ের মামলার রায় আদালতে ঘোষণা করায় সন্তোষ প্রকাশ করে বলা হয়, এ রায়ের মধ্য দিয়ে যে কোন রাজনৈতিক হত্যাকা-ের বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার আর একটি দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো। বিবৃতিতে বলা হয়, দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এই রায়ের মধ্য দিয়ে আরেকবার প্রমাণ হলো, কোন ক্ষমতাধরই আইনের উর্ধে নয়। এবং এই রায়ের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পৃষ্ঠপোষক ছিল তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের নেতৃত্ব ও হাওয়া ভবনের দ-মু-ের কর্তা বিএনপির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট তারেক জিয়া। বিএনপি নেতা তারেক জিয়া জঙ্গীবাদী বিভিন্ন সংগঠনকে নিয়ে এদেশে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি ও অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করার যে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করেছিল তা এখন দিবালোকের মতো সত্য। এবং বিএনপি কোনক্রমেই এই রাজনৈতিক হত্যাকা- ও তার জঙ্গী সংশ্লিষ্টতার দায় এড়িয়ে যেতে পারে না। তারেক রহমানের মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত ছিলÑ আইনমন্ত্রী ॥ মামলার রায়ে তারেক রহমানের মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, হামলার মূলহোতা খালেদা জিয়ার বড় পুত্র তারেক রহমান। তাকে রায়ে যাবজ্জীবন দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের ধারণা, তার মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত ছিল। রায়ের পরে সচিবালয়ে নিজ দফতরে তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও আইনমন্ত্রী বলেন, রায়ের কপি পাওয়ার পরে আমরা চিন্তা-ভাবনা করব, এই রায়ে তারেক রহমান এবং আরও দু’জন- কায়কোবাদ ও হারিছ চৌধুরীকে যে যাবজ্জীবন দেয়া হয়েছে, সেটার জন্য আমরা উচ্চতর আদালতে গিয়ে তাদের ফাঁসির জন্য (এনহ্যান্সমেন্ট) আপীল করব কি-না। খালেদাকে বিচারের আওতায় আনার দাবি ॥ ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় খালেদা জিয়াকেও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, বিচারের রায়ে যদি বেগম জিয়াকে শাস্তির আওতায় আনা না হয়, তাহলে রাষ্ট্রপক্ষকে অনুরোধ জানাব আপীল করা হোক। বেগম জিয়া এই হত্যার দায় এড়াতে পারেন না। বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি এবং বিএনপি-জামায়াত ও তাদের দোসরদের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে আয়োজিত সমাবেশ ও মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাছান মাহমুদ এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ এ কর্মসূচীর আয়োজন করে। হাছান মাহমুদ বলেন, বেগম খালেদা জিয়া তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ফলে তার দায়-দায়িত্ব ছিল। সেনাবাহিনী যুদ্ধে যে গ্রেনেড ব্যবহার করে, সরকারের অস্ত্রাগারে যেই গ্রেনেড থাকে, সেই গ্রেনেড সেখানে ফাটানো হয়েছিল। জেলখানার মধ্যে গ্রেনেড পাওয়া গিয়েছিল। সুতরাং বেগম জিয়ার জ্ঞাতসারেই এই হামলা হয়েছে। তাই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় বিচারের আওতায় খালেদা জিয়াকেও আনার দাবি আমরা প্রথম থেকেই করে আসছিলাম। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি এ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান দুর্জয়ের সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা বলরাম পোদ্দারসহ অনেকে। বিচারের এখনও অনেক ধাপ বাকি আছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট ডাঃ এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, আইনী প্রক্রিয়া মাত্র শুরু হয়েছে। এরপর অনেক ধাপ বাকি আছে।
×