ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দৃষ্টিনন্দন খেলা উপহার দিয়ে ফাইনালে তাজিকিস্তান

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ১০ অক্টোবর ২০১৮

দৃষ্টিনন্দন খেলা উপহার দিয়ে ফাইনালে তাজিকিস্তান

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আগের রাতে এবং দুপুরে খেলার আগে প্রচুর বৃষ্টি। ফলে মাঠ হয়ে যায় পিচ্ছিল। ম্যাচের সময়ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। আবহাওয়া ছিল বেশ শীতল। তারপরও এই আবহাওয়ায় গ্যালারিতে দর্শক সমাগম হয়েছিল বেশ ভালই (আট হাজার আসনবিশিষ্ট গ্যালারিতে উপস্থিত পাঁচ হাজার)। তাদের বেশিরভাগেরই মাথায় ছিল ছাতা। অথচ ম্যাচের আগে দু’দল চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল ভর দুপুরে প্রচ- গরম এবং অত্যধিক আর্দ্রতার মধ্যে খেলতে হবে বলে। অথচ বিস্ময়করভাবে এই পিচ্ছিল মাঠেই দু’দল চমৎকার, গতিশীল, পরিচ্ছন্ন এবং আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে। তবে যারা বেশি আধিপত্য বিস্তার করেছে শেষ পর্যন্ত জিতেছে তারাই। প্রথম সেমিফাইনাল ম্যাচে দৃষ্টিনন্দন ফুটবল খেলে প্রতিপক্ষ ফিলিপিন্সকে ২-০ গোলে হারিয়ে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতার ফাইনালে নাম লেখালো এই আসরে প্রথমবারের মতো খেলতে আসা মধ্য এশিয়ার দেশ তাজিকিস্তান। খেলার প্রথমার্ধে ১-০ গোলে এগিয়েছিল বিজয়ী দল। এই জয়ে প্রতিশোধটাও নেয়া হয়ে গেল তাজিকিস্তানের। কেননা দু’দলের আগের ৪ ম্যাচের লড়াইয়ে তিনবারই হেরেছিল তাজিকরা। একটি ম্যাচ হয়েছিল ড্র। ম্যাচের শুরুতে দু’দলই সমানতালে খেলে। পরে যতই সময় গড়িয়েছে ততই একটু একটু করে প্রতিপক্ষের ওপর চাপের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় তাজিকরা। খেলা শেষের পরিসংখ্যানে বল পজেশনে (৬০%-৪০%), আক্রমণে (১৩২-৯৬), বিপজ্জনক আক্রমণে (৮৪-৪৬), কর্নারে (৬-৫), শট অন টার্গেটে (৯-১)... সবকিছুতেই এগিয়ে ছিল তাজিকিস্তান। ১০ মিনিটেই গোল করে এগিয়ে যেতে পারতো তাজিকরা। প্রতিপক্ষের ডি বক্সের সামনে থাকে ডান পায়ের জোরালো উঁচু শট নেন অধিনায়ক ফাতখুলালায়েভ। ফিলিপিন্স গোলরক্ষক লুয়ি মাইকেল কোনমতে ফিস্ট করে কর্নারে রক্ষা করেন। ১৮ মিনিটে আক্রমণ করে ফিলিপিন্স। বাঁ প্রান্ত দিয়ে অধিনায়ক মিসাঘ বাহাদোরান বল নিয়ে ঢুকে বাঁ বায়ের উঁচু জোরালো শট নেন। কিন্তু পোস্টের ওপর দিয়ে বাইরে চলে যায় বল। পরের মিনিটেই পাল্টা আক্রমণ করে তাজিকরা। বাঁ প্রান্ত থেকে ডিফেন্ডার তাবরেজি বাঁ পায়ের উঁচু ক্রস ফেলেন। বক্সের ভেতরে তুরসুনভ কমরনের হেড পোস্টের ওপর দিয়ে বাইরে চলে যায়। ২১ মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে তাজিক ফরোয়ার্ড এরগাশেভ ডান পায়ের শট নেন। সেটা বক্সের ভেতরে সতীর্থ তুরসুনভের পায়ে লেগে গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে গোল লাইন অতিক্রম করছিল। বিভ্রান্ত ফিলিপিন্স গোলরক্ষক শেষ মুহূর্তে অসাধারণভাবে ডাইভ দিয়ে কোনমতে বল আটকে দলকে নিশ্চিত গোল হজমের হাত থেকে বাঁচান। ৩০ মিনিটে ডানপ্রান্ত দিয়ে তাজিক অধিনায়ক ফাতখুলালায়েভ বক্সে ঢুকে ক্রস করেন। জটলার মধ্যে বল পেয়ে নাজারোভ শট নিলে গোলরক্ষক ঝাঁপিয়ে পড়ে বল গ্রিপে নেন। ৩২ মিনিটে গোলের দেখা যায় তাজিকরা। তাবরেজি ক্রস করেন। সতীর্থ রাহিমভ হেড করলে বক্সের ভেতর বল পান তুরসুনভ। তার ডান পায়ের গড়ানো শট পোস্টে ঢোকার আগ মুহূর্তে ফিলিপিন্সের ডিফেন্ডার আমনি স্লাইডিং করে বল বাঁচনোর চেষ্টা করেন প্রাণপণে। কিন্তু তার সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। কারণ তার পায়ে লেগে বল ঢোকে জালে (১-০)। উল্লাসে মাতে ফিলিপিন্স। ৩৯ মিনিটে সতীর্থ থেকে থ্রু পাস পেয়ে বক্সে ঢুকেন তাজিক ফরোয়ার্ড এরগাশেভ। গোলরক্ষককে কাটিয়ে পোস্টে শট নিলেও তা বাইরে দিয়ে জালে জড়ায়। আক্ষেপে পোড়েন তিনি। ৪৫ মিনিটে তাজিক অধিনায়ক ডি-বক্সের বাইরে বল পেয়ে ডান পায়ের জোরালো শট নেন পোস্টের উদ্দেশ্যে। গোলরক্ষক ঝাঁপিয়ে পড়েন। তবে বলের নাগাল পাননি। বল চলে যায় পোস্ট ঘেঁষে মাঠের বাইরে। দ্বিতীয়ার্ধেও আক্রমণের ধারা বজায় রাখে তাজিকরা। তা থেকে তারা ব্যবধান দ্বিগুণ করে ম্যাচ শেষ হওয়ার কয়েক মিনিট আগে। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে (৯০+৭ মিনিট) নাজারভের প্লেসিং শট খুঁজে নেয় ফিলিপিন্সের জাল (২-০)। শেষ পর্যন্ত ওই স্কোরেই খেলা শেষ হলে প্রতিশোধ নিয়ে ও ফাইনালে ওঠার আনন্দ নিয়ে মাঠ ছাড়ে তাজিকরা।
×