ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিসিবি সভাপতি পাপনের দাবি

এশিয়া কাপে খেলার ঝুঁকি নেন সাকিবই

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ১০ অক্টোবর ২০১৮

এশিয়া কাপে খেলার ঝুঁকি নেন সাকিবই

মিথুন আশরাফ ॥ সাকিব ইস্যুতে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এশিয়া কাপের আগে বলেছিলেন, ‘আমরা তাকে (সাকিবকে) ছাড়া খেলার (এশিয়া কাপে) কথা চিন্তা করতে পারি না। কোচ চাচ্ছেন সাকিবের অপারেশনটা এশিয়া কাপের পরে হোক। আমার মনে হয় এশিয়া কাপের পর তাকে অস্ত্রোপচারের জন্য পাঠালেই আমাদের জন্য সবচেয়ে ভাল হবে। এশিয়া কাপ আমাদের জন্য কঠিন একটা টুর্নামেন্ট হবে।’ বিসিবি সভাপতি ও কোচের চাওয়া যদি থাকে খেলা তাহলে কী সাকিব সেই চাওয়াটাকে দূরে ঠেলে দিতে পারেন? পারেন না। তবে সিদ্ধান্ত সাকিবেরই আসলে নিতে হয়েছে। আর তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন খেলার। তাতে করে এখন আঙ্গুল নিয়ে পড়েছেন মহাবিপাকে। সাকিবকে বিসিবি সভাপতি নাকি ঝুঁকি নিতে না বলেছিলেনও। সাকিবই ঝুঁকি নিয়েছেন। মঙ্গলবার বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এ নিয়ে জানান, ‘মক্কা ও মদিনা, দুই জায়গাতেই আমার সঙ্গে ও দেখা করল। মক্কায় জিজ্ঞেস করল যে কি করবে। আমি বললাম, ‘এটা তোমাদের সিদ্ধান্ত।’ মদিনায় এসে শেষ আমি ওকে বললাম, ‘দেখো, তুমি এরকম ঝুঁকি নিও না, ডাক্তার-ফিজিও’র সঙ্গে কথা বল। সেরা কোন ডাক্তারকে দেখিয়ে তারপর সিদ্ধান্ত নাও।’ ও আমাকে বলল, ‘ফিজিও বলে দিয়েছে কোন সমস্যা নেই।’ সঙ্গে বিসিবি সভাপতি আরও জানান, ‘আমি আবার ওকে বললাম, ‘খেললে কি এটা খারাপ হতে পারে নাকি?’ ও বলল, ‘না।’ এরপরও আমি ওকে বলিনি খেলতে। আমি ওকে বলেছি, ‘একজন ভাল ডাক্তার দেখাও। তার পরামর্শ অনুযায়ী কাজ কর।’ এটাই ছিল ওর সঙ্গে আমার শেষ কথা।’ সাকিব যে এশিয়া কাপ খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাও বিসিবি সভাপতি নাকি অনেক পরে জানাতে পারেন। বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘হজ করে ঢাকায় ফেরার চারদিন পর আমি কোচের একটা মেইল পেলাম যে সাকিব দলের সঙ্গে যাচ্ছে না। আমেরিকা থেকে সরাসরি এশিয়া কাপ খেলতে যাবে। ওই প্রথম আমি জানলাম যে সাকিব এশিয়া কাপ খেলছে। তার আগ পর্যন্ত জানিই না যে ও খেলবে।’ এশিয়া কাপ খেলে আঙ্গুলের আরও বারোটা বাজিয়েছেন সাকিব। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচেও হয়তো খেলে ফেলতেন। বিসিবি সভাপতিই নাকি সাকিবকে খেলতে দেননি। বিসিবি সভাপতি বলেছেন, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচের আগে আমি দেশে আসি। একদিন পর আবার ফিরে যাই। হোটেলে গিয়ে দেখি সাকিব কয়েকজনের সঙ্গে বসে আছে। ওখানে ওর হাত দেখে আমি অবাক হয়ে যাই। অনেক ফোলা। আগেও ওর হাত দেখেছি। এরকম অবস্থা ছিল না। ও কথায় কথায় তখন বলল, ‘আমি তো খেলতে পারব না।’ কয়েকজন পাশ থেকে বলছিল যে, ‘না খেলতে হবে, এটা সেমিফাইনাল।’ আমি তখন স্পষ্ট বলেছি, ‘সাকিব, তুমি এখনই চলে যাবে। এখান থেকে কোথায় যেতে চাও বল।’ ও বলল, ‘আমেরিকায় যাব।’ আমি বলেছি, ‘এখনই যাও। কোন খেলাধুলার দরকার নেই।’ দুবাই থেকে যুক্তরাষ্ট্রে না গিয়ে সাকিব ফিরেছেন দেশে। হাসপাতালেও ভর্তি হয়েছেন। পুঁজ বের করা হয়েছে। পরে তিনি গেছেন অস্ট্রেলিয়ায়। এ ঘটনাগুলোও সঠিক সময়ে জানতে পারেননি বিসিবি সভাপতি। তিনি বলেন, ‘পরদিন আমি শুনলাম ও এ্যাপোলো হাসপাতালে। তার আগে আমি জানতাম ও আমেরিকায়, কারণ আমাকে বলেছিল আমেরিকা যাবে। হয়তো কোন কারণে যায়নি। আমি শুনে ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বললাম। সব ঠিকঠাক করলাম। ও (সাকিব) বলেছিল যে আগে লন্ডন যেতে চায়। হাসপাতালে এটাই ঠিক করা হয়েছিল। লন্ডনে দেখার পর ঠিক হবে কোথায় করা হবে অপারেশন। এরপর আমি ইস্তাম্বুল গেলাম। সেখানে গিয়ে শুনলাম সে গিয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়।’ সাকিবের আঙ্গুলের এত কঠিন পরিণতি। অথচ তা ধরতে পারেননি ফিজিও। কেন? সেই ব্যাখ্যা সবার মতো এখনও খুঁজছে বিসিবিও। বিসিবি প্রধান যেমন বলেছেন, ‘কালকে (সোমবার) ওর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমি ওর কাছে জানতে চাইলাম যে ডাক্তাররা কি বলছে, এরকম হলো কেন। কারণ ওতো খেলতে গিয়ে ব্যথা পায়নি। আমাদের কাছে এটা বিরাট প্রশ্ন যে হঠাৎ করে ইনফেকশন হয়ে এত পুঁজ, এসব হলো কি করে? এটা জানার চেষ্টা করছি। আমি দেবাশীষের (বিসিবির প্রধান চিকিৎসক) ও অন্যদের কাছে জানতে চেয়েছি এ রকম হলো কেন। একদিনের মধ্যে এত পুঁজ, এরকম ইনফেকশন হলো কিভাবে? সবার কাছেই এটা আশ্চর্যের বিষয়। কেউ বুঝতে পারছে না কিভাবে হলো, কারণ ভেতরের ব্যাপার। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যে ইনজেকশন দিয়েছে সেটা থেকেও হতে পারে। হাতে আগে থেকেই হাল্কা ইনফেকশন থাকলে ইনজেকশনে আরও বাড়তে পারে। তবে সবই ধারণা, আসল কারণ কেউই বুঝতে পারছে না। সাকিব নিজেও আগে অভিযোগ করেনি। সবমিলিয়ে ইনফেকশনের মূল কারণ আমরা এখনও জানি না। আপনারা যেমন জানতে চান, আমরাও জানার চেষ্টা করছি।’ বিসিবি সভাপতির ইচ্ছে ছিল যেন সাকিব এশিয়া কাপ খেলেন। সাকিব তার ইচ্ছে কিভাবে দূরে সরিয়ে দেন। সবার মুখে এখন প্রশ্ন সেটাই। বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘আমি বলেছিলাম, যদি খেলতে পারে, যদি কিছু না হয়, তাহলে এশিয়া কাপের পর হতে পারে সার্জারি। অনেকে ভাবছে যে কেন বললাম আমি। এখন মুশফিক ইনজুরি নিয়ে খেলছে। মাশরাফি প্রচ ঝুঁকি নিয়ে খেলছে। এমনকি মিরাজও বড় ক্র্যাম্প নিয়ে ফাইনাল খেলেছে। তামিমকে কি আমরা বলেছিলাম মাঠে নামতে? আমি এটাই বলেছিলাম যদি পার তাহলে খেলতে। কোন চাপ নেই।’ এশিয়া কাপের আগে নিদাহাস ট্রফিতে পুরোপুরি সেরে না ওঠা সাকিব খেলেছেন শেষ দুটি ম্যাচে। এ নিয়ে তখনই প্রশ্ন ওঠে। জানা গিয়েছিল, বিসিবি সভাপতি ফোন করে ডেকে তাকে শ্রীলঙ্কায় নিয়ে গিয়েছিলেন। বিসিবি সভাপতি এ নিয়ে জানান, ‘নিদাহাস ট্রফির আগে ব্যাংককে, অস্ট্রেলিয়ায় ডাক্তার দেখিয়ে এসেছে। ওর পছন্দ মতোই করেছে। এরপর যখন আইপিএল খেলার জন্য পাসপোর্ট জমা দিয়ে এসেছে তখন আমি ওকে ফোন করলাম যে তাহলে নিদাহাস খেলতে পারবে নাকি। কারণ ডাক্তাররা বলে দিয়েছে সে আইপিএল খেলতে পারবে, সে নিজেও বলছে পারবে। তাহলে দুইদিন আগে আমাদের হয়ে খেললে সমস্যা কী? এবারও এটাই হয়েছে। বলেছিলাম যদি পরে করানো যায় অপারেশন তাহলে করাতে। কিন্তু যদি ব্যথা থাকে তাহলে তো জোর করে খেলানোর প্রশ্নই আসে না।’ সাকিবের সর্বশেষ ভাল অবস্থার কথাও জানিয়ে দিয়েছেন বিসিবি সভাপতি। বলেছেন, ‘ও ভাল হয়ে যাবে। এখনও পর্যন্ত খুব ভালভাবে রিকভারি হচ্ছে। কালকেই (সোমবার) কথা হয়েছে। ও আমাকে যেটা বলেছে যে, ডাক্তাররা বলেছে তিন মাস পর খেলতে পারবে। অপারেশনের কথা জিজ্ঞেস করেছি। বলল যে অপারেশন করে কোন লাভ নেই। আপাতত অপারেশন লাগবে না। এখন ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করেছে।’
×