ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ভেজা মাঠই ভরসা জোগাচ্ছে স্বাগতিক বাংলাদেশকে

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ১০ অক্টোবর ২০১৮

ভেজা মাঠই ভরসা জোগাচ্ছে স্বাগতিক বাংলাদেশকে

রুমেল খান, কক্সবাজার থেকে ॥ আবহাওয়া এমন এক ব্যাপার যেটা ক্ষণে ক্ষণে রূপ বদলায়। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবলের গ্রুপপর্বের ৬টি খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল সিলেটে। প্রতিটি ম্যাচই হয় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়, ফ্লাইলাইটে এবং তীব্র গরমের মধ্যে। সেমিফাইনালের দুটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হচ্ছে কক্সবাজারে। অথচ এখানে পরিস্থিতি ঠিক যেন তার বিপরীত। এখানে খেলা হচ্ছে দুপুরে, দিনের আলোয় এবং বৃষ্টিভেজা মেঘলা আবহাওয়ায়। অথচ দু’দিন আগেও এখানকার আবহাওয়া ছিল সিলেটের মতোই। এ জন্য বাংলাদেশ বাদে সেমিফাইনালিস্ট বাকি তিন অতিথি দলই ভীষণ চিন্তিত ছিল। যদিও ফিলিস্তিন উষ্ণ অঞ্চলের দেশ, তারপরও তারা ভয় পাচ্ছিল এখানকার অতিরিক্ত আর্দ্রতা নিয়ে। প্রথম সেমির ম্যাচের আগে থেকেই ভোজবাজির মতো বদলে যায় দৃশ্যপট। আর্দ্রতা যায় কমে। আকাশে জমে নিকষ কালো মেঘ। শুরু হয় অবিরাম বর্ষণ। ফলে তাপমাত্রা অনেক কমে যায়। সবই বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে। এটা স্থানীয় জনগণ বা পর্যটকদের জন্য স্বস্তির হলেও অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় অতিথি দলগুলোর জন্য। বিশেষ করে ফিলিস্তিনের জন্য। যারা আজ এখানকার বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামে দুুপুর আড়াইটায় দ্বিতীয় সেমিতে মোকাবেলা করবে স্বাগতিক বাংলাদেশের। বৃষ্টির ধারা অব্যাহত থাকলে বা রোদ না উঠলে আজ সেটা পোয়াবারো হতে পারে স্বাগতিক বাংলাদেশ দলের জন্য। বৃষ্টিভেজা ও কাদাময় মাঠের কন্ডিশনকে কাজে লাগিয়ে তারা যদি অঘটন ঘটিয়ে ফেলে তাহলে আশ্চর্য হবার কিছু নেই। কেননা শক্তির বিচারে ফিলিস্তিন বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে। যেখানে ফিলিস্তিনের র‌্যাঙ্কিং ১০০, সেখানে বাংলাদেশ তাদের চেয়ে ৯৩ ধাপ পিছিয়ে। হেড টু হেডেও পিছিয়ে লাল-সবুজরা। এ পযন্ত দু’দল পরস্পরের মোকাবেলা করেছে তিনবার। ১টিতে জিতেছে ফিলিস্তিন, ১টি হেরেছে বাংলাদেশ। বাকি ম্যাচটি ড্র হয়। এ জন্য অনেকেই বলছেন এই ম্যাচটি হচ্ছে ‘অসম শক্তির লড়াই। কিন্তু অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়ার তাতে যথেষ্ট আপত্তি, ‘যদি আবহাওয়াটা আজকের মতো হয় তাহলে ফিলিস্তিনের জন্য সুবিধা হবে। আর কাল যদি আবহাওয়া গরম থাকে তাহলে লাভবান হব আমরা।’ কিন্তু আবহাওয়া অফিসের সূত্র থেকে জানা গেছে কালও বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে এবং তাপমাত্রা কম থাকবে। অবশ্য অনেক ফুটবলবোদ্ধার মতেÑ আবহাওয়া যাই হোক না কেন ফিলিস্তিনের সঙ্গে জেতা বাংলাদেশের জন্য অনেক কঠিন। যদিও ফুটবলে র‌্যাঙ্কিং বা পরিসংখ্যানই শেষ কথা নয়। এটা স্বীকার করে জামাল বলেন, ‘আমরা আন্ডারডগ। ফিলিস্তিনই ফেবারিট। তবে এটা আমাদের হোম গ্রাউন্ড, তাই আমরাও সেরাটা মেলে ধরার চেষ্টা করব। সবাই জানে এই পরিস্থিতিতে আমরা আন্ডারডগ। যে কারণে চাপটা আমাদের ওপর কম। আমরা জানি ফিলিস্তিন অনেক আক্রমণাত্মক খেলে। তাই আমাদের লক্ষ্য থাকবে কাউন্টার এ্যাটাকে গোল করা।’ তবে বাংলাদেশী ফরোয়ার্ডদের গোলস্কোরিংয়ের সমস্যাটা রয়েই যাচ্ছে। গ্রুপপর্বে লাওসের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে গোল করেন মিডফিল্ডার বিপলু। গত ১০-১৫ বছর ধরে স্ট্রাইকার সমস্যায় বাংলাদেশ। গোল্ডকাপে এই সমস্যাটা আরও প্রকট হয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে এক ফরোয়ার্ড নিয়ে খেলার কৌশল বদলে এই আসরে দুই স্ট্রাইকার নিয়ে নেমেও কোন ফল আসেনি। আর এই ফ্যাক্টরই আজকের সেমিফাইনালে বাংলাদেশের জন্য বড় সমস্যা। গতকাল বিজিবি গ্রাউন্ডে অনুশীলনেও এটা নিয়েই বেশি কাজ করেছেন জেমি। তার ভাষ্যমতে, ‘ম্যাচের জন্য ছেলেরা প্রস্তুত। জিততে হলে আমাদের গোল করতেই হবে। আশাকরি সেমিতে সেটা করতে পারবে দল।’ ফিলিস্তিনের সঙ্গে সর্বশেষ ২০১৩ সালের ২ মার্চ এএফসি এশিয়ান কাপের ম্যাচে ১-০ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ। দুই বছর আগে প্রীতি ফুটবল ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছিল ২-০ গোলে। ১-১ গোলে ড্র হয়েছিল ২০০৬ সালে এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপে। ফিলিস্তিন দল এবার এএফসি এশিয়ান কাপের মূলপর্বে উঠেছে। এই টুর্নামেন্টকে তারা ওই আসরের প্রস্তুতি হিসেবে নিয়েছে। আর বাংলাদেশ পড়ে আছে সেই সাফের ‘ক্ষুদ্র’ গ-িতেই। ‘আমরা জানি ম্যাচটি কঠিন হবে। তবে আমরাও আশাবাদী। আগের দুই ম্যাচে ভাল খেলেছিলাম। ফিলিপিন্স ম্যাচে সুযোগ পেয়েও গোল করতে পারিনি। আশাকরি ফিলিস্তিনের বিপক্ষেও ভাল করব এবং গোল করতে পারব। আমাদের চাওয়া জয়’ আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠ জেমির। জানা গেছে- আজও ৪-৪-২ ফরমেশনে খেলবে বাংলাদেশ। স্বাগতিকদের জন্য বড় দুশ্চিন্তা সেট পিস। আর এই জায়গাতে বেশ শক্তিশালী ফিলিস্তিন। আছেন হেডে বিপজ্জনক অধিনায়ক আব্দাল লতিফ। এটা নিয়েও অনেক কাজ করেছেন জেমি। বাংলাদেশের কৌশল কি হবে এসব নিয়ে ভাবছেন না ফিলিস্তিন কোচ নূরউদ্দিন, ‘বাংলাদেশ যদি ডিফেন্সিভ খেলে তাহলে আমরা ৩ গোল দিব।’ প্রকৃত সত্য হচ্ছে- ফিলিস্তিন বাংলাদেশকে নিয়ে চিন্তিত না। চিন্তিত বৃষ্টিভেজা পিচ্ছিল মাঠকে। আর এই কন্ডিশনই অঘটন ঘটিয়ে জেজতার জন্য ভরসা জোগাচ্ছে বাংলাদেশকে। পারবে কী তারা আজ?
×