ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে প্রাপ্তবয়স্কদের শতকরা ১৬ জনই মানসিক রোগী

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ১০ অক্টোবর ২০১৮

দেশে প্রাপ্তবয়স্কদের শতকরা ১৬ জনই মানসিক রোগী

নিখিল মানখিন ॥ মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচী বাস্তবায়নে মানসিক রোগ ও চিকিৎসা সম্পর্কে জনগণের ভ্রান্ত ধারণা, কুসংস্কার ও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সবচেয়ে বড় বাধা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি রয়েছে মানসিক রোগীদের সেবা দেয়ার মতো দক্ষ জনবলের তীব্র সঙ্কট। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে মানসিক রোগের ডাক্তার রয়েছেন ১৯৫ জন, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট রয়েছেন ৫০ জনের মতো। অকুপেশনাল থেরাপিস্ট রয়েছেন ১শ’ জনের বেশি। চিকিৎসা সুবিধা সঙ্কটে ভুগছে দেশের মানসিক রোগীরা। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এ রোগের চিকিৎসার অবকাঠামো নেই। বিভাগীয় পর্যায়ে চিকিৎসা সুবিধা থাকলেও তা রোগীর তুলনায় খুবই অপ্রতুল। যারা মানসিক রোগে আক্রান্ত তাদের শ্রদ্ধা ও সম্মানের চোখে দেখতে এবং অবহেলার দৃষ্টিতে না দেখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে আজ বুধবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার শতকরা ১৬.১ ভাগ যে কোন ধরনের মানসিক রোগে আক্রান্ত। এ বিপুল জনগোষ্ঠীর প্রতি ১ লাখের জন্য ০.০৭ জন মানসিক রোগবিশেষজ্ঞ রয়েছেন যা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য। উন্নত দেশে এ অনুপাত ১ লাখ মানুষের জন্য ১০ জন, মধ্য আয়ের দেশে ২.৭ জন, অনুন্নত দেশে ০.০৫। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, বর্তমান হারে জনবল বৃদ্ধি পেতে থাকলে আগামী ১শ’ বছরেও এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। এ জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচীতে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা অন্তর্ভুক্তকরণ এখন সময়ের দাবি। এ লক্ষ্য অর্জনে সাধারণ চিকিৎসকদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবার ওপর প্রশিক্ষণ প্রদান, মেডিক্যাল শিক্ষাব্যবস্থায় মানসিক রোগ চিকিৎসার কারিকুলাম সম্প্রসারণ ও স্কুল পর্যাযের পাঠ্যসূচীতে বিষয়টির অন্তর্ভুক্তকরণ জরুরী। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে উপজেলা, জেলা পর্যায় থেকে শুরু করে সর্বস্তরে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচীতে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা দরকার বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়। এদিকে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দাবি করে আসছে যে, শিশু ও নারীরাই এর শিকার বেশি হয়। এ লক্ষ্যে বর্তমান সরকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০, সন্ত্রাসবিরোধী আইন-২০০৯ এবং পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০ ও মানসিক স্বাস্থ্য আইন-২০১৮ প্রণয়ন করেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ খন্দকার মোঃ সিফায়েত উল্লাহ বলেন, সার্বিক স্বাস্থ্যের অংশ হিসেবে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার প্রতি মনোযোগ দেয়া উচিত। দেশের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান বর্তমান সরকারের লক্ষ্য। এ লক্ষ্য অর্জনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যায় কর্মরত জনবলের মানসিকবিষয়ক প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। মানসিক স্বাস্থ্য আইন ॥ মানসিক স্বাস্থ্য আইন-২০১৮ অনুযায়ী মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিকে অপরাধের কাজে ব্যবহার করলে প্ররোচনাকারী পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা দুই বছরের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। পাশাপাশি সরকারী অনুমোদন ছাড়া মানসিক হাসপাতাল চালালে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা তিন বছরের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেয়া হবে।
×