ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মার্কিন কোম্পানি মনসানাটোর বিরুদ্ধে মামলার রায়

ক্যান্সারের জন্য ক্ষতিপূরণ

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ১০ অক্টোবর ২০১৮

ক্যান্সারের জন্য ক্ষতিপূরণ

যুক্তরাষ্ট্রের একজন জুরি চলতি বছর আগস্টে এক ব্যক্তির দূরারোগ্য ক্যান্সার হওয়ার নেপথ্যে একটি কেম্পানি দায়ী বলে রুলিং দিয়েছিলেন। মনসানাটো নামে ওই এ্যাগ্রোকেমিক্যাল কোম্পানিকে এজন্য ২৮৯ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। হাজার হাজার ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তি বা পরিবারের সুবিচার পাওয়ায় আশা তৈরি করে ওই রায়। গার্ডিয়ান। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরের ঘটনা। ডিন ব্রুকস নামে এক ব্যক্তি এক শপিংমলে বাজার করছিলেন। হঠাৎ তার শ্বাসকষ্ট এবং দাঁড়িয়ে থাকতে সমস্যা হয়। তাকে দ্রুত ইমার্জেন্সিতে নেয়া হলে সেখানে কর্তব্যরত একজন নার্স ব্রুকসের স্ত্রী ডেবোরাহকে বলেন, তার স্বামী দূরারোগ্য রক্তের ক্যান্সার নন হজকিন লিম্ফোমায় (এনএইচএল) আক্রান্ত হয়েছেন। এটি দূরারোগ্য ক্যান্সার। ছয় মাস পর ব্রুকস মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর শোক কাটিয়ে উঠে ডেবোরাহ এরপর অন্য এক সংগ্রামে নেমে পড়েন। তিনি ক্যান্সারের কারণ আগাছানাশক প্রস্তুতকারী কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা লড়ে শেষ পর্যন্ত জিতে যান। ডেবোরাহ জানান তার স্বামী মনসানাটো কোম্পানির তৈরি বিখ্যাত আগাছানাশক নিজেদের বাড়ির আঙ্গিনায় ব্যবহার করেন। এর পরিণতিতে শেষ পর্যন্ত তার ক্যান্সার হয। এরপর আরও এক ব্যক্তির ক্ষেত্রে আদালতের রায়ে মনসানাটোকে দায়ী করা হয়। তার নাম ডেওয়েনি লি জনসন। তিনি একটি স্কুলের মাঠ রক্ষণাবেক্ষণকারী ছিলেন। তার দাবি, মনসানাটো অন্যায় আচরণ করেছে। আগাছানাশকে বিষাক্ত কেমিক্যাল থাকার কথা কাস্টমারদের আগে সতর্ক করা হয়নি। মনসানাটো এ রায়ের বিরুদ্ধে আপীন করেছে। বুধবার সানফ্রান্সিসকোর একটি আদালতে এর শুনানি হবে। প্রসিদ্ধ জার্মান ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বেয়ার চলতি বছর জানুয়ারিতে মনসানাটোকে অধিগ্রহণ করেছে। মনসানাটোর বিরুদ্ধে মামলা তাই মূল প্রতিষ্ঠান বেয়ারকেও প্রভাবিত করতে পারে। মনসানাটোর আগাছানাশক রাউন্ডআপে গ্লিফোসেট নামে এক ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়েছে, যা ক্যান্সারের মূল কারণ বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে কোম্পানিটির দাবি এক্ষেত্রে আদালতকে ভুল তথ্য দিয়ে প্রভাবিত করা হয়েছে। ১৯৭৪ সাল থেকে মনসানাটো এই পণ্যের ব্যবসা করে এসেছে। রাউন্ডআপ ও রেঞ্জার প্রো নামে তাদের দুটি ব্র্যান্ড রয়েছে। ১৩০টি দেশে এই পণ্য বিক্রি হয়ে থাকে। জনসন বনাম মনসানাটো মামলাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বিবেচনা করা হচ্ছে। কারণ এই মামলায় বিচারক বাদীর আইনজীবীকে গ্লিফোসেটের বিষয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য উপাত্ত উপস্থাপনের সুযোগ দিয়েছেন। যেসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে সেগুলো বিশ্বাসযোগ্য বলে বিচারকের কাছে মনে হয়েছে। জনসন আশা করছেন তিনি দু’বছরের বেশি বাঁচতে পারেন। তিনি দাবি করেছেন, স্কুলের মাঠ পরিচর্যা করতে গিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে গ্লিফোসেটের সংস্পর্শে এসেছেন। অন্তত দু’বার এই কেমিক্যাল ভুলবশত তার ত্বকের ওপর অনেকটা পড়ে গিয়েছিল। মনসানাটো অবশ্য দাবি করেছে তাদের পণ্য নিরাপদ এবং এতে ক্যান্সারের ঝুঁকি নেই। তবে জনসন বলেছেন, তিনি কোম্পানির এ দাবি সম্পর্কে অনেক পরে জানতে পেরেছেন। তিনি যে ২৮৯ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন তার মধ্যে ২৫০ মিলিয়নই হচ্ছে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিস্বরূপ যেন ভবিষ্যতে কোন কোম্পানি এ রকম না করে। ৪৬ বছর বয়সী জনসনের স্ত্রী ও তিনটি সন্তান রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন জনসনের মামলা একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এর ফলে যারা এ নিয়ে এতদিন মামলা করার কথা ভাবেনি তারাও মামলা করতে উৎসাহিত হবেন।
×