ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর অগ্রযাত্রার দশক

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১০ অক্টোবর ২০১৮

প্রধানমন্ত্রীর অগ্রযাত্রার দশক

‘উন্নয়নের অভিযাত্রায় অদম্য বাংলাদেশ’ এই সারগর্ভ বার্তাকে সামনে রেখে ৪ অক্টোবর থেকে সারাদেশে শুরু হয়েছে উন্নয়ন মেলা-২০১৮। তিনদিনব্যাপী এই বর্ণাঢ্য আয়োজন শেষ হয় শনিবার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই মহৎ ও বৃহৎ উদ্যোগের উদ্বোধন করেন। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় ছড়িয়ে পড়া এই কর্মপরিকল্পনাকে অভিনন্দন জানিয়ে সম্ভাবনাময় ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশ শুধু ডিজিটাল যুগের স্বর্ণ অধ্যায়ই রচনা করবে না, সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ জনগোষ্ঠীর নিত্য কর্মপ্রবাহকেও উন্নয়নের অন্যতম নিয়ামক হিসেবে চিহ্নিত করেন তিনি। এই মেলার লক্ষ্য এবং গন্তব্য সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট পথরেখা দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়তার সঙ্গে ব্যক্ত করলেনÑ নতুন নতুন কর্মযোগে বাংলাদেশকে আরও অগ্রগামিতায় শরিক হতে হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের দশ বছরের অব্যাহত সাফল্যে বাংলাদেশ আজ এক অনন্য উচ্চতায়, যা প্রতিনিয়ত শুধু দৃশ্যমানই হচ্ছে না, বিশ্ব জরিপেও বাংলাদেশ নিজের অবস্থানকে সুদৃঢ় করেছে। ‘উন্নয়ন মেলা-২০১৮’ সেই ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধির এক অনন্য সংযোজন। এই লক্ষ্যে অনলাইন ডিজিটাল পাঠ সহায়ক নতুন উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের সামনে হাজির করেন। আন্তর্জাতিকমানের দশটি ভাষার ওপরও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে এ্যাপস। নতুন প্রজন্মের কাছে এই এক অভাবনীয় উপহার, যাতে তারা ঘরে বসেই বিশ্বমানের অনেক কিছুই আয়ত্তে আনতে পারে। উন্নত বাংলাদেশ গড়তে এ সময়ের প্রজন্মকে সবচেয়ে বেশি অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। তাদের যথার্থ, উপযুক্ত নাগরিকই শুধু নয়, বিশ্বসভায় স্থান দিতেও তাঁর সুচিন্তিত কর্মোদ্যোগ এক অবিস্মরণীয় যুগপরিকল্পনা। শুধুই কি ভাবী প্রজন্ম? পুরো দেশের সাধারণ মানুষের প্রতিদিনের ঘটনাপ্রবাহের উল্লেখযোগ্য দিকনির্দেশ করে সেখানেও তাঁর সময়োপযোগী প্রকল্প জাতিকে সুশৃঙ্খল ধারায় এগিয়ে নিচ্ছে। এই উন্নয়ন মেলাও সেই প্রবাহমান গতির এক অনবচ্ছেদ মহাকর্মযোগ। ঢাকার আগারগাঁওয়ের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা চত্বরে অনুষ্ঠিত বিপুল সমারোহে দেশীয় পণ্যসামগ্রীর উপস্থাপনই শুধু নয়, প্রয়োজনীয় অনেক সেবামূলক কর্মপ্রক্রিয়াকেও সংযুক্ত করা হয়। যেমন পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে পাসপোর্ট নবায়ন থেকে শুরু করে বাড়ি রেজিস্ট্রেশন, ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়নসহ তাৎক্ষণিক কিছু ডিজিটাল সেবা দর্শনকারীদের জন্য ব্যবস্থা করা হয়। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পৃক্ত কাজ, বিভাগীয় শহরের জেলা-উপজেলা পর্যায়ের ঐতিহ্যিক পণ্যের নয়নাভিরাম প্রদর্শনÑ সব মিলিয়ে উন্নয়ন মেলার যে সম্প্রসারিত অনুষ্ঠান প্রকল্প তাতে এক নজরে পুরো বাংলাদেশ সামনে চলে আসে। উন্নয়নের অব্যাহত ধারা যাতে কোনভাবেই থেমে যেতে না পারে সেই সম্ভাবনাকে সামনে রেখেই এই যুগান্তকারী মহাপরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়। বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আসা পণ্যসামগ্রীর স্টলগুলো সংশ্লিষ্ট উর্ধতম কর্মকর্তারাই শুধু নিয়ন্ত্রণ করেন না, রাজধানীতে অনেক দফতর, অধিদফতর ও মন্ত্রণালয় এই মেলায় তাদের অংশীদারিত্ব প্রদর্শন করে। তরুণ প্রজন্মকে ডিজিটাল ব্যবস্থায় নিজেদের সম্পৃক্তকরণ বাড়াতে হবে। বিশেষ করে শিক্ষা এবং প্রযুক্তিতে তাদের অংশগ্রহণ যতই বাড়বে, ততই তাদের ভবিষ্যত উজ্জ্বল হবে, সঙ্গে দেশও নতুন অভিযাত্রায় সমৃদ্ধির দ্বারে পৌঁছতে দেরি করবে না। জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস এবং মাদকাসক্তের মতো বিপর্যয় যেন তরুণ প্রজন্মকে আক্রান্ত করতে না পারে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সাবধান এবং সতর্ক হতে হবে। সরকারও তার সাধ্যমতো নিরাপদ বেষ্টনীর মধ্যে যাতে শিশু-কিশোররা সুন্দর ও সুস্থ জীবন গড়তে পারে সেই লক্ষ্যে যাবতীয় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে। দেশের প্রতিটি সাধারণ মানুষ, সঙ্গে পিছিয়ে পড়া অসহায় তৃণমূল গোষ্ঠীকে এই অব্যাহত উন্নয়নের ধারায় নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে। গত উন্নয়ন দশকের অগ্রযাত্রায় শেখ হাসিনা সেই লক্ষ্যেই বীরদর্পে শুধু সামনে এগিয়ে গেছেন। কোন ধরনের রাজনৈতিক অপকৌশল, বেসামাল পরিস্থিতি তাঁকে দমাতে পারেনি। অনাকাক্সিক্ষত অরাজক পরিস্থিতিকে ঠা-া মাথায় সামাল দিয়ে যেভাবে প্রবৃদ্ধিকে জনগণের দ্বারে হাজির করেছেন সেই অনুপম কর্মযজ্ঞের সমস্ত প্রাপ্তি যেমন প্রধানমন্ত্রীর, তেমনি জনগোষ্ঠীরও। দেশের সাধারণ জনগণ তাঁর উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সাড়া দিয়ে নিজেদের কর্তব্য ও দায়িত্ব সম্পাদনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। যার সুফল আজ সারাদেশ উপভোগ করছে। একটি সুস্থ, বাসযোগ্য বাংলাদেশ গড়ে তুলতে যা যা প্রয়োজন সবই করতে হয়েছে তাঁকে অবিচলিত চিত্তে, দেশপ্রেমের আদর্শিক বোধে, কঠোর, কঠিন প্রত্যয়ে। স্মরণ করা যেতে পারে, বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে অনেক বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সরকারীকরণ করা হয়েছে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনেরও উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। শিক্ষা জাতির মেরুদ- এই অমোঘ বাণীকে গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রমের সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক গতি সমুন্নত রাখা প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম কর্মপ্রক্রিয়া। উল্লেখ করতে হয়, প্রশ্ন ফাঁসের মতো অনৈতিক কার্যকলাপকে বিভিন্ন কৌশলেও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় রোধ করা হয়েছে। এসব সাফল্য বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রীর শাসনামল এমন এক বিশ্ব মর্যাদায় দেশকে তুলে ধরে, যা বিভিন্ন প্রতিবেদনে ইতোমধ্যে প্রকাশ পেয়েছে। বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানের স্টল ছাড়াও যুগ যুগ ধরে চলে আসা আবহমান বাংলার ঐতিহ্যিক পণ্যসম্ভারের স্টলও উন্নয়ন মেলার শোভাবর্ধন করেছে। শুধু ঢাকায় নয়, সারাদেশের বিভাগীয় শহর এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এই উন্নয়ন মেলার আয়োজন করা হয়েছে। পাটশিল্প চিরায়িত বাংলার এক অভাবিত ঐতিহ্য। মাঝখানে বিএনপি জোট সরকারের আমলে সেই ঐতিহাসিক ধারার ভাঙ্গন শুরু হয়। সে ক্ষয়িষ্ণু শিল্পকে আবারও নবোদ্যমে জাগিয়ে তুলে বর্তমান সরকার। শুধু জাগিয়ে তোলা নয়, তাকে সমৃদ্ধির দ্বারেও পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। এই উন্নয়ন মেলায় পাটশিল্পের বাহারি পণ্যের আকর্ষণীয় প্রদর্শন মেলাকে তার ঐতিহ্যক জায়গায় নিয়ে যায়। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এসব পাটজাত পণ্য দর্শনার্থীর সামনে হাজির করে। এই পাটজাত শিল্পের এক অনবদ্য উপহার পাটের চা, যা দর্শনার্থীদের বিশেষভাবে নজর কাড়ে। তাঁতশিল্প এই দেশের একটি অন্যতম সমৃদ্ধ ঐতিহ্য। সেখানেও রয়েছে হরেক রকম পণ্যের নান্দনিক উপস্থাপন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব উদ্যোগে মেলায় যে সব পণ্য হাজির করা হয়েছে সেখানে জেলা-উপজেলার ছাপ ছাড়াও সংশ্লিষ্ট বিভাগসহ মন্ত্রণালয়কেও সংযুক্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দেশকে দুরন্ত গতিতে শুধু এগিয়েই নিয়ে যাননি, উন্নয়নের সমস্ত সূচকে পুরো জনগোষ্ঠীকে এক সুতোয় গাঁথতে পেরেছেন। এই এক অনন্য সফলতা যা বিশ্ব জরিপের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদনে উপস্থাপিত হয়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্জন মানেই দেশের প্রান্তিক চাষীদের কৃষি অর্থনীতির উন্নয়নের সঙ্গে সফলভাবে যুক্ত করা। বিভিন্ন দানাদার খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ অনন্য উচ্চতায়। ধান উৎপাদনে চতুর্থ, সবজি উৎপাদনে তৃতীয় এবং মাছ চাষেও তৃতীয়। আর বিরল প্রজাতির প্রাকৃতিক সম্ভারের মাছ চাষে বাংলাদেশ একেবারে প্রথম। এসব কৃষিজাত পণ্য বিদেশে রফতানি করে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও সফল হচ্ছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শেখ হাসিনার যে উন্নয়ন কর্মযাত্রা সেখানে সরকারপ্রধান হিসেবে দায়বদ্ধতাও তাঁর। রোহিঙ্গা সমস্যাকবলিত বাংলাদেশকে তিনি যেভাবে সামাল দিচ্ছেন তা শুধু দেশই নয় তাবত বিশ্বও মুগ্ধ, বিস্মিত। মিয়ানমার সরকার আজ পর্যন্ত এসব বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাকে বৈধভাবে নাগরিক হিসেবে ফিরিয়ে নেয়ার কোন ব্যবস্থাই নেয়নি। কক্সবাজার, টেকনাফের মতো পর্যটন শিল্পাঞ্চল আজ অভিবাসী রোহিঙ্গাদের অনধিকার প্রবেশ, অনাহূত চাপে বিপর্যস্ত, দিশেহারা। বাংলাদেশের এমন সঙ্কটাপন্ন অবস্থাকে প্রধানমন্ত্রী তাঁর মানবিকবোধ, অদম্য সাহস এবং রাজনৈতিক শিষ্টাচারে মোকাবেলা করে যাচ্ছেন। নারীর ক্ষমতায়নেও শেখ হাসিনার যুগান্তকারী পরিকল্পনায় বাংলাদেশ এখন লিঙ্গ বৈষম্যের সহনীয় অবস্থানে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় নারী-পুরুষের সংখ্যায় তেমন কোন ফারাক নেই। তথ্যপ্রযুক্তিতে নারীদের জোরালো অংশগ্রহণ এ খাতকে অনেকখানি এগিয়ে দিয়েছে। কারণ জনগোষ্ঠীর অর্ধাংশ নারী। ক্রমবর্ধমান উন্নয়নকে জোরালোভাবে ধরতে না পারলে প্রবৃদ্ধি দৃশ্যমান হবে না। কর্মজীবনেও নারীদের সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। নতুন শিল্পোদ্যোক্তা তৈরিতে নারীরাও পিছিয়ে নেই। প্রান্তিক চাষাবাদ পদ্ধতিতে নারী কৃষি শ্রমিকের সংখ্যা আজ হাতেগোনার মতো নয়। অনেকটা পুরুষের কাছাকাছি। আর পোশাক শিল্পের সিংহভাগই নারী শ্রমিক, যা বাংলাদেশের এখন প্রধান রফতানি শিল্প। শুধু সমতার ভিত্তিতে দেশ এগোচ্ছে বললে ভুল হবে, মানুষে মানুষে ফারাকও কম দৃশ্যমান হচ্ছে। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান বাড়ায় সার্বিক অর্থনীতিতে তার প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। মোট প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ অতিক্রম করেছে। ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন ধারাকে আরও গতিশীল করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোন বিকল্প রাজনৈতিক নেতৃত্ব দৃশ্যমান নয়। লেখক : সাংবাদিক
×