ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিশ্বমানের চিকিৎসা

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১০ অক্টোবর ২০১৮

বিশ্বমানের চিকিৎসা

মানুষের মৌলিক অধিকারের অন্যতম একটি হলো চিকিৎসা সেবা। কিন্তু সেই সেবাটুকু পাওয়ার ক্ষেত্র যদি না হয় বিস্তৃত, তবে সুস্থতার পথ হয়ে যায় রুদ্ধ। বাড়ে দুর্ভোগ। মৃত্যু এসে ধরা দেয় যন্ত্রণার লাঘবেই বুঝি। চিকিৎসকদের একটু দরদী স্পর্শ, একটু সহানুভূতি, একটু হাসিমাখা মুখের কথা, এমনকি জটিল ও কঠিন ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তিকেও আশাবাদী করে তোলে। ভুলিয়ে দেয় রোগ যন্ত্রণা। চিকিৎসাশাস্ত্র এখন অনেক উন্নত। রোগ নির্ণয়ের নিখুঁত নানা পদ্ধতি এখন করায়ত্ত। টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে বিশ্বের যে কোন প্রান্তের যে কোন রোগীকে চিকিৎসা করার বিষয়টিও ক্রমশ সুলভ হয়ে আসছে। দেখা যায়, শুধু চিকিৎসা প্রদানই নয়, চিকিৎসকের মুখের একটু কথাতেও অনেক সময় রোগী বোধ করেন সুস্থতা। এটা নিশ্চিত করেই বলা চলে যে, অনেক চিকিৎসক স্বপ্রণোদিত হয়েই এমনটি করেন। তাদের কারণেই দরিদ্র ও অসহায় নারী-পুরুষ হাসপাতালে কিংবা চিকিৎসকের চেম্বারে স্বাস্থ্যসেবা পেয়ে থাকেন। তবে এর ব্যত্যয় ঘটে এ দেশেই। এমনিতেই দেশের মোট জনসংখ্যার বড় অংশই বাস করে গ্রামে। তাদের কাছে চিকিৎসা সেবা মানেই হাতুড়ে ডাক্তার, পানিপড়া, ঝাড়ফুঁক ও কবিরাজি ব্যবস্থা। যা সুস্থ হওয়ার পথ ও পদ্ধতি নয়। দীর্ঘকাল ধরেই গ্রামবাংলা জুড়ে এসবের দাপট বা প্রভাব পরিলক্ষিত হয়ে আসছে। উন্নত ও আধুনিক চিকিৎসার কথা তাদের ভাবনা-চিন্তা হতে যোজন যোজন দূরে অবস্থান করে। এমনিতেই আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উন্নত ও আধুনিক চিকিৎসা প্রদানে নিজেদের উপযুক্ত করে তুলতে পারেনি চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোসহ চিকিৎসকরা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান পর্বে আন্দোলনকালে এ দেশের মানুষের চিকিৎসা পাওয়ার অধিকারের কথা বলতেন। স্বাধীন দেশে তিনি চিকিৎসা ক্ষেত্রকে সম্প্রসারিত করার জন্য নানা উদ্যোগ নিয়েছিলেন। বলেছিলেন, মানুষের সেবা করাই একজন চিকিৎসকের সর্বপ্রথম কর্তব্য। চিকিৎকরা সবচেয়ে মহৎ সেবাই দিয়ে থাকেন। চিকিৎসকদের মন তাই হতে হয় অনেক উদার এবং সেবার। একজন চিকিৎসক ভাল ব্যবহারের মাধ্যমে একজন রোগীর অর্ধেক রোগ সারিয়ে দিতে পারেন। সে কারণেই সেবার মান নিয়ে মানুষকে চিকিৎসা প্রদান করা সঙ্গত। যুগের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে চিকিৎসকদের সেবার মান ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেকে গড়ে তোলাটা অনস্বীকার্য। যাতে বিশ্ব চিকিৎসা ব্যবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেদের বলা যায়। শুধু ঢাকা কেন্দ্রিক নয়, সারাদেশেই মানুষের চিকিৎসা সেবা পৌঁছানো না গেলে মানুষের মৌলিক অধিকারের ক্ষেত্র সঙ্কুচিত হতে বাধ্য। গ্রামের কৃষক ও হতদরিদ্র মানুষ তাদের চিকিৎসার জন্য নির্ভর করেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর ওপর। কিন্তু এগুলো নানা রকম সঙ্কট; অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায় আক্রান্ত। তাই গ্রামীণ দরিদ্র মানুষেরা প্রতিনিয়তই বঞ্চিত হচ্ছেন কাক্সিক্ষত চিকিৎসা সেবা থেকে। প্রত্যন্ত আঞ্চলের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে বড় সঙ্কট হচ্ছে লোকবল ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদির। আবার যে সরঞ্জামাদি আছে তারও সদ্ব্যবহার হয় না। যে লোকবল নিয়োজিত আছে তাদেরও কর্মস্থলে যথাযথ দায়িত্ব পালন নিশ্চিত হচ্ছে না। চিকিৎসকরা সেখানে দায়িত্ব পালনে আগ্রহী নন। সবাই শহর কেন্দ্রিক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন যে, বিপুলসংখ্যক নতুন চিকিৎসক নিয়োগ দেয়ার পরও গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসকদের না থাকার প্রবণতা বাড়ছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কমপক্ষে দশজন চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু কোথাও একজন, খুব বেশি হলে চারজন থাকেন। সেখানে চিকিৎসক থাকেন না। বর্তমান সরকারের টানা দুই মেয়াদে ১২ হাজার ৮শ’ ৪৬ জন নয়া চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অথচ তারা গ্রামে যেতে চান না। শেখ হাসিনার সরকার তৃণমূলে চিকিৎসসেবা পৌঁছে দিতে অত্যন্ত আন্তরিক। তা ছাড়া দেশের প্রতিটি বিভাগে একটি করে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হচ্ছে। তাতে উন্নতমানের চিকিৎসক তৈরির ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হবে। এমনিতে দেশের চিকিৎসা খাত নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা অভিযোগ শোনা যায়। চিকিৎসায় অবহেলা সেগুলোর একটি। ডিজিটাল যুগে অনেক জেলাতেও বিশ্বমানের হাসপাতাল ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে যাচ্ছে যখন, তখন দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা বিশ্বমানের করাই সঙ্গত। সারাদেশের মানুষ আধুনিক ও উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা যাতে পায়, সরকার সে জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে। তাই এই খাতকে যথাযথ মানে উন্নীত করার জন্য কর্তৃপক্ষকে সজাগ হতে হবে। কমাতে হবে বিদেশ নির্ভরতা।
×