ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আল্লামা মাসঊদের পথযাত্রা

সুনামগঞ্জে সমাবেশে শেষ হলো

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১০ অক্টোবর ২০১৮

সুনামগঞ্জে সমাবেশে শেষ হলো

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জঙ্গীবাদ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে ঐতিহাসিক পথযাত্রা সমাপ্ত করলেন জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান শোলাকিয়া ঈদগাহের গ্র্যান্ড ইমাম শাইখুল হাদীস আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। মঙ্গলবার সুনামগঞ্জ পুরান বাসস্ট্যান্ডের সমাপনী জনসভায় আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেছেন, হযরত ইলিয়াস (রহ.) উম্মতের মধ্যে বিভক্তি করার জন্য তবলীগ জামাত তৈরি করেননি। কাউকে নাস্তিক-মুরতাদ বলে ফতোয়া দেয়ার জন্য নয়। মসজিদে মসজিদে মারামারি জন্য ইসলাম আসেনি। ইসলাম প্রেম ও ভালবাসার ধর্ম। গত ৬ অক্টোবর সকাল ১১টায় যশোরের চাঁচড়ার মোড়ে জনসভার মাধ্যমে আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের নেতৃত্বে শুরু হয়েছিল আলেম ওলামা জনতার পথযাত্রা। ৬ অক্টোবর বিকেল ৫টায় খুলনার শহীদ হাদীস পার্কে একটি জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। পরদিন ৭ অক্টোবর রবিবার সকাল ১০টার সময় গোপালগঞ্জে পথসভা অনুষ্ঠিত হয়, তারপর ফরিদপুরের ভাঙ্গায় দুপুর ২টার দিকে, বিকেল ৫টার সময় মাদারীপুরের শিবচরে, রাত ৮টায় মুন্সীগঞ্জে, ৮ অক্টোবর সোমবার সকাল ১০টায় নরসিংদীর ভেলানগর, দুপুর ১২টায় ভৈরবের দুর্জয় মোড়ে, ২টায় ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় জনসভায় অনুষ্ঠিত হয়। ওইদিনই আছরের নামাজের পর হবিগঞ্জের বাহুবলে, রাত ৮টার দিকে মৌলভীবাজারে, রাত ১০টার দিকে সিলেটের নয়াসড়কে পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মঙ্গলবার সুনামগঞ্জ পুরান বাসস্ট্যান্ডে সর্বশেষ জনসভা ও সমাপনী দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। সমাপনী জনসভায় মাদক যুবসমাজকে নষ্ট করে দিচ্ছে মন্তব্য করে আল্লামা মাসঊদ বলেন, বাংলাদেশ একটি ধর্মপ্রাণ দেশ। এদেশের যুবকরা ধর্মপ্রেমী। ইসলাম, ধর্ম ও দ্বীনের প্রতি এত টান যে অন্যান্য দেশের যুবকদের মাঝে কমই দেখা যায়। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে কিছু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শক্তি আমাদের দেশের উন্নতি সহ্য করতে না পেরে আমাদের যুব সমাজকে মদ-নেশার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মাদকাসক্ত করে তাদের জীবনকে নষ্ট করার পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। যদি যুবকদের জীবন নষ্ট করে দিতে পারে, তাহলে বাংলাদেশ আর কখনও বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না। দুর্নীতি দেশের উন্নতি নষ্ট করে দেয় দাবি করে আল্লামা মাসঊদ বলেন, দুর্নীতি একটি সামাজিক ব্যাধি। সমাজের সর্বত্র দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, এদেশের এই উন্নয়নের ধারা আঁকড়ে রাখতে হলে আমাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের আওয়াজটা ওঠাতে হবে, যাতে মানুষ সচেতন হতে পারে। হযরত ইলিয়াস (রহ.) উম্মতের মধ্যে বিভক্তি করার জন্য তবলীগ জামাত তৈরি করেননি দাবি করে আল্লামা মাসঊদ বলেন, হযরত ইলিয়াস (রহ.) ইসলামের প্রচার-প্রসার, মানুষের দ্বীনের হেফাজত, জনসাধারণকে উলামায়ে কেরামের সঙ্গে জুড়িয়ে দেয়ার জন্য তবলীগ জামাত তৈরি করেছেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মতের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করার জন্য নয়। জমিয়তুল উলামা চেয়ারম্যান আরও বলেন, তবলীগের মাধ্যমে সারাবিশ্বে সুন্দর একটা দাওয়াতি কাজ চলছিল। তবলীগের সাথীরা পৃথিবীর সর্বত্র দ্বীনের প্রচার-প্রসার করছিল। তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে পরস্পরের প্রেম-ভালবাসাকে ইসলাম পছন্দ করে। বিভাজন-বিদ্বেষকে নয়। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ‘আল্লাহর জন্য মানুষকে ভালবাসা।’ তবলীগের মধ্যকার দ্বন্দ্ব ভুলে আলেম-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে তবলীগের কাজকে বেগবান করার আহ্বান জানান তিনি। কওমি মাদ্রাসা স্বীকৃতি প্রদান করায় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে আল্লামা মাসঊদ বলেন, কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি প্রদান করে শেখ হাসিনা প্রমাণ করে দিয়েছেন তিনি ইসলাম ও উলামায়ে কেরামকে ভালবাসেন। শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি না থাকার কারণে আমাদের শিক্ষার্থীরা বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছিল না, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আমাদের এখন বিশ্ব দরবারে শিক্ষিত হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছেন। জনসভায় বক্তব্য রাখেন ঐতিহাসিক পথযাত্রা বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মাওলানা ইয়াহয়া মাহমুদ, মাওলানা আব্দুর রহীম কাসেমী, মাওলানা দেলওয়ার হোসাইন সাইফী, মাওলানা ইমদাদুল্লাহ কাসেমী, মাওলানা আবু সুফিয়ান যাকী, মুফতি তাজুল ইসলাম কাসেমী, মাওলানা সদরুদ্দিন মাকনুন, মাওলানা আইয়ুব আনসারী, মাওলানা আব্দুল আলীম ফরীদী, মাওলানা সাঈদ নিজামী, দারুল হাদিস তেঘরিয়া মাদরাসার মোহতামিম মাওলানা আনোয়ার হুসাইন, মাওলানা আবদুল্লাহ প্রমুখ। মাওলানা ইয়াহয়া মাহমুদ বলেন, আল্লামা মাসঊদ উলামায়ে কেরামের অভিভাবক। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদবিরোধী মানবকল্যাণে শান্তির ফতোয়া প্রকাশ করে তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন কওমি মাদ্রাসায় কোন জঙ্গী নেই।
×