ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্থানীয়দের মুখে হাসি ফোটাতে চান কক্সবাজারের চার ফুটবলার

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ৯ অক্টোবর ২০১৮

স্থানীয়দের মুখে হাসি ফোটাতে চান কক্সবাজারের চার ফুটবলার

রুমেল খান, কক্সবাজার থেকে ॥ ব্যক্তির চেয়ে দল, দলের চেয়ে দেশ বড়। তবে কখনও কখনও দেশের প্রয়োজনেই মুখ্য ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে ব্যক্তি। তারা স্বভাবতই চলে আসেন আলোচনায়, পাদপ্রদীপের আলোয়। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতার খেলার ভেন্যু তিন স্থানেÑ সিলেট, কক্সবাজার এবং ঢাকায়। ইতোমধ্যেই গ্রুপ পর্বের সব খেলা শেষ হয়েছে সিলেটে। মঙ্গলবার থেকে শুরু কক্সবাজার-পর্ব। এখানে অনুষ্ঠিত হবে দুটি সেমিফাইনাল ম্যাচ। সিলেটের মাটিতে এবারই বাংলাদেশ জাতীয় দল প্রথমবারের মতো খেলেছে এবং জয় পেয়েছে (বিপক্ষ লাওস)। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে কক্সবাজারেওÑ এমনটাই প্রত্যাশা ফুটবলপ্রেমীদের। সিলেটের মাটিতে খেলার সময় সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছিল জাতীয় দলের বর্তমান স্কোয়াডের চার ফুটবলার মাসুক মিয়া জনি, বিপলু আহমেদ, মতিন মিয়া এবং মাহবুবুর রহমান সুফিলকে নিয়ে। বিপলুর গোলেই জয় কুড়িয়ে নিয়েছিল লাল-সবুজরা। এবার পালা জাতীয় দলে খেলা কক্সবাজারের চার ফুটবলারের। এরা হলেনÑ সুশান্ত ত্রিপুরা, আনিসুর রহমান জিকো, তৌহিদুল আলম সবুজ ও মোহাম্মদ ইব্রাহিম। কক্সবাজারবাসীর প্রত্যাশা সেমিফাইনালের ম্যাচে ফিলিস্তিনের বিপক্ষে এদের কেউ গোল করুক এবং বাংলাদেশ নাম লেখাক স্বপ্নের ফাইনালে। সোমবার বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামে অনুশীলন করছে বাংলাদেশ দল, এমন খবর পেয়ে সেখানে যাওয়া। ভেতরে ঢুকতেই চোখ আটকে গেল বিশেষ একটি ব্যানারের দিকে। চার স্থানীয় ফুটবলারের গ্রুপ ছবি। যাতে লেখা, ‘আমরা তোমাদের নিয়ে গর্বিত’। কক্সবাজারের সর্বত্রই এখন এই চার লোকাল হিরোকে নিয়ে তুমুল আলোচনা-কৌতূহলের জোয়ার বইছে। অনুশীলন শেষ হতেই ইব্রাহিম, সবুজ, সুশান্ত এবং জিকোর সঙ্গে ‘সেলফি’ তুলতে আবদার স্থানীয় দর্শকদের। আর সেই আবদারে হাসিমুখেই সাড়া দিলেন তারা। এই মাঠেই শৈশব-কৈশোরে খেলে বড় হয়েছেন। এই মাঠের সঙ্গে জড়িয়ে আছে কতই না স্মৃতি। সেই মাঠেই কাল নিজেদের প্রমাণে নামবেন এই চার সেনানী। যদি গোলরক্ষক জিকোর খেলার সম্ভাবনা কম। কারণ আশরাফুল ইসলাম রানাই হচ্ছেন কোচ জেমি ডের প্রথম পছন্দ। এটা মেনে নিয়েছেন জিকো। ঘরের মাঠে খেলা। এজন্য দারুণ রোমাঞ্চিত চকরিয়া উপজেলার দুলহাজরা ইউনিয়নের এ সুদর্শন গোলরক্ষক। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে এখানে খেলে বড় হয়েছি। জাতীয় দলের সঙ্গে এখানে এসেছি এজন্য অনেক ভাল লাগছে। এলাকার লোকজন খেলা দেখবে। নিজের কাছে অন্যরকম একটা আনন্দ লাগছে।’ ২০০৯ সালে ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু জিকোর। কক্সবাজার অ-১৬ ট্রায়াল দিয়ে উত্তান। ২০১৩ সালে কক্স সিটির হয়ে চ্যাম্পিয়নশিপ লীগ খেলে। এখনও জাতীয় দলের জার্সিতে আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়নি। তবে কোরিয়া ও কাতারে প্রস্তুতি ম্যাচের সময় গোলরক্ষক হিসেবে খেলেছিলেন। দুলহাজরা থেকে জিকুর সঙ্গে ওঠে এসেছেন ফরোয়ার্ড ইব্রাহিম ও সুশান্ত। আরেক ফরোয়ার্ড তৌহিদুল আলমের বাড়ি মহেশখালীতে। ফুটবলে যার শুরু বিকেএসপির হয়ে। কক্সবাজারে লীগে খেলেছিলেন। কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে এবারই প্রথম এই মাঠে নামার প্রতীক্ষায়। এই আবেগে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি ভালমতোই। বসুন্ধরা কিংসের এ খেলোয়াড় বলেন, ‘কক্সবাজারের এই মাঠে বাংলাদেশের সঙ্গে আমিও প্রথমবারের মতো খেলব। নিজের মাঠ বলে এ নিয়ে খুবই রোমাঞ্চিত, খুশি। আমার খেলা দেখার জন্য পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব সবাই আসবে স্টেডিয়ামে।’ বাবা বদরুল আলম আনসারী সবুজের সবচেয়ে বড় ভক্ত। ‘আমি যখন অফ-সিজনে খেপ খেলতে বিভিন্ন এলাকায় খেলতে যাই, উনি সেখানেও গিয়ে খেলা দেখেন।’ সবুজের ভাষ্য। ঘরের মাঠে সেমির ম্যাচের লক্ষ্য কি? ‘পজিশন যেহেতু ফরোয়ার্ড, কাজেই লক্ষ্য থাকবে স্থানীয় দর্শকদের সামনে গোল করার। যদি সেটা নাও পারি, তাহলেও চেষ্টা থাকবে দলকে জেতাতে। দর্শকদের মুখে হাসি ফোটাতে পারলে খুব ভাল লাগবে।’ সবুজের মতো একই কাহিনী ইব্রাহিমেরও। বাবা ইয়াসিনের হাত ধরে তার ফুটবলার হওয়া। যেখানেই ছেলের খেলা, সেখানেই বাবার হাজির হওয়া। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে সিলেটে গ্রুপ পর্বেও ম্যাচেও গ্যালারিতে হাজির ছিলেন বাবা। এ প্রসঙ্গে ইব্রাহিমের মন্তব্য, ‘বাবার জন্যই আজ আমি ফুটবলার। নিজের মাঠে খেলা, তাই খেলতে চাই। আগের ম্যাচে বদলি হিসেবে খেলেছিলাম। এবার ঘরের মাঠে শুরুর একাদশে খেলার ইচ্ছা। যদিও এটা নির্ভর করছে কোচের ওপর। তবে যতটুকু সুযোগ পাব, চেষ্টা করব ভাল কিছু করার।’ ২০১২ সালে কক্সসিটির হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করা ইব্রাহিমের অভিষেক হয়েছিল গোল্ডকাপের এবারের আসরে লাওসের বিপক্ষে ম্যাচে। তার খেলা দেখার জন্য পরিবারের সবাই মাঠে আসবেন। এলাকা থেকে অনেক দর্শকও আসবে। ‘তাদের খুশি করে এবং আমরা নিজেরাও খুশি হয়ে ঢাকায় গিয়ে ফাইনাল খেলতে চাই। কক্সবাজারে বাংলাদেশের মতো আমারও এই মাঠে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ। চাইব এটাকে স্মরণীয় করে রাখতে।’ ফিলিপিন্সের বিপক্ষে জাতীয় দলের জার্সিতে অভিষেক ডিফেন্ডার সুশান্ত ত্রিপুরার। বাকি তিনজনের মতো তিনিও খুব রোমাঞ্চিত, ‘আমি খেলার সুযোগ পাই বা না পাই, দল ভাল রেজাল্ট করুকÑ এটাই আমার প্রত্যাশা।’ এখন দেখার বিষয়, সেমির ম্যাচে কক্সবাজারের এই ফুটবলারদের চাওয়া কতটা পূরণ হয়।
×