ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইনজুরির মিছিল

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ৯ অক্টোবর ২০১৮

ইনজুরির মিছিল

মোঃ মামুন রশীদ ॥ সম্প্রতি এশিয়া কাপে বাংলাদেশ দলে ছিল ইনজুরির মিছিল। তবে সেই ইনজুরিগুলোকে সঙ্গী করেই খেলেছিলেন দলের অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা। এশিয়া কাপ চলার সময়েই বাংলাদেশের পক্ষে তিন ফরমেটেই সর্বাধিক রানের মালিক, ওপেনার তামিম ইকবালের ইনজুরি দীর্ঘ সময়ের জন্য মাঠের বাইরে চলে যাওয়া নিশ্চিত করেছিল। এরপর অপরিহার্য অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানও অন্তত ৩ মাসের জন্য চলে গেছেন মাঠের বাইরে। ইনজুরি নিয়েই ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা ও মিডলঅর্ডার ব্যাটিং স্তম্ভ মুশফিকুর রহীম খেলে গেছেন। জানা গেছে, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও ইনজুরি নিয়েই খেলেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর ও এশিয়া কাপে। চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ঘরের মাঠে এবার জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজ শুরু হবে। র‌্যাঙ্কিংয়ে অনেক পিছিয়ে থাকার কারণে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ পুরোপুরি জিতলেও রেটিংয়ে তেমন সুবিধা হবে না, উল্টো একটি ম্যাচ হারলেও রেটিং কমে যাবে অনেক। অপরিহার্য ৫ ক্রিকেটারের ইনজুরি সমস্যা নিয়েও তাই জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে আসন্ন সিরিজ বাংলাদেশ দলের জন্য মহাবিপদেরই! এরপর নবেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজেও একই চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশ দলের জন্য। এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচেই তামিম হাতের কব্জিতে আঘাত পেয়ে দেশে ফিরে আসেন। পরবর্তীতে আর খেলা হয়নি তার। চিকিৎসকদের কথা অনুসারে তিনি জিম্বাবুইয়ে সিরিজ খেলবেন না। অবশ্য, তামিমকে ছাড়া উদ্বোধনী জুটিতে মারাত্মক বিপর্যয় দেখলেও ফাইনালে চমক দেখিয়েছে বাংলাদেশ। ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো মেহেদী হাসান মিরাজ ওপেনিং করেন। তার সঙ্গে লিটন দাস যোগ করেন ১২০ রান। শেষ ম্যাচ থেকে তাই নিশ্চিত হয়েছে লিটন ওপেনিংয়ে থিতু হয়ে থাকবেন। তার সঙ্গে কে থাকবেন সেটাই এখন বড় সংশয়। অবশ্য সর্বশেষ যে দলটি নিয়মিত মাঠে নেমেছে তাতে ওপেনার ছিলেন কয়েকজন- মোহাম্মদ মিঠুন, ইমরুল কায়েস, সৌম্য সরকার, নাজমুল হোসেন শান্ত! এর মধ্যে শান্ত পুরোপুরি ব্যর্থ হওয়াতে তার থাকার সম্ভাবনা শূন্যের কোঠায়। ফাইনালে ইমরুল ওয়ানডাউনে নেমেছিলেন, মিরাজকে নিয়ে আর পরীক্ষা-নিরীক্ষা না চালালে হয়তো জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ২১ অক্টোবরের প্রথম ওয়ানডেতে লিটনের সঙ্গে ওপেনিংয়ে দেখা যেতে পারে তাকেই। আর অধিনায়ক মাশরাফি এশিয়া কাপের সুপার ফোরের শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে শোয়েব মালিকের ক্যাচ নিতে গিয়ে আঙ্গুলের যে ফ্র্যাকচারে পড়েছিলেন সেটা নিয়েই ফাইনালে খেলেছেন। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষেও তিনি খেলবেন এমনটাই জানা গেছে। মুশফিক পাঁজরের ভাঙ্গা হাড় নিয়ে পুরো এশিয়া কাপ খেলেছেন। তিনিও খেলবেন এমনটাই জানা গেছে। কিন্তু তামিম-সাকিবকে এবার পাচ্ছে না বাংলাদেশ দল। ক্যারিবীয় সফরে মাহমুদুল্লাহ পিঠের এবং এশিয়া কাপে পাঁজরের ইনজুরি নিয়ে খেলেছেন। তিনিও থাকবেন। তবে পুরোপুরি ফিটনেস নিয়ে এ তিনজনই খেলতে পারবেন না। অথচ জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে আসন্ন সিরিজটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এই মুহূর্তে ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ে ৭ নম্বর দল বাংলাদেশ। আর জিম্বাবুইয়ে ১১ নম্বরে! আইসিসির নিয়ম অনুসারে র‌্যাঙ্কিংয়ে নিচে থাকা দলের কাছে হেরে গেলে রেটিংয়ে অবনতি ঘটে। আর জিতলে খুব একটা উন্নতি ঘটে না। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে আসন্ন সিরিজে একটি ওয়ানডে হারলেও বিপদ বাংলাদেশের। সিরিজ জিতেও পয়েন্ট হারাতে পারে টাইগাররা। আসন্ন সিরিজে বাংলাদেশ যদি ৩-০ ব্যবধানে জিতে তবেই কেবল একটি রেটিং পয়েন্ট পাবে। বর্তমানে টাইগারদের পয়েন্ট ৯২। তখন হবে ৯৩। অর্থাৎ খুব বেশি লাভ হবে না। তবে হারলে বিপদ আরও বেশি। যদি বাংলাদেশ একটি ম্যাচ হেরে যায় আর ২-১ ব্যবধানে জিতে, তবে ২টি রেটিং পয়েন্ট হারাতে হবে। আর যদি জিম্বাবুইয়ে সিরজ জিতে, তবে আরও বেশি হারে কমবে রেটিং। ২-১ ব্যবধানে জিম্বাবুইয়ে জিতলে ৫টি রেটিং পয়েন্ট হারাবে বাংলাদেশ। হবে ৮৭ পয়েন্ট। আর ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হলে কমে যাবে ৭ রেটিং পয়েন্ট। তখন পয়েন্ট হবে ৮৫। অবশ্য রেটিং যতই কমুক, বাংলাদেশের অবস্থান ৭ নম্বরেই থাকবে। তবে ৮ নম্বরে থাকা শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ব্যবধান কমে আসবে অনেকখানি। এই মুহূর্তে লঙ্কানদের রেটিং ৭৭। কিন্তু ঘরের মাটিতে র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বরে থাকা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লঙ্কানরা সিরিজ ৫-০ ব্যবধানে জিতে গেলে এবং বাংলাদেশ দল জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ হলে শ্রীলঙ্কা টপকে যাবে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশ সিরিজ হারলে এবং শ্রীলঙ্কা কোনভাবে সিরিজ জিতলেও ব্যবধান অনেকখানি কমে যাবে। সেক্ষেত্রে ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পরবর্তী সিরিজেও চ্যালেঞ্জের মুখে থাকবে বাংলাদেশ দল। কারণ, ক্যারিবীয়রাও ওয়ানডেতে বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে, তাদের অবস্থান ৯ নম্বরে। সে কারণে আসন্ন দুই সিরিজেই বাংলাদেশ দলের শতভাগ জয় তুলে নেয়া অপরিহার্য। আর এ দুই সিরিজেই সাকিব থাকছেন না, ক্যারিবীয়ানদের বিপক্ষেও তামিমের ফেরা পুরোপুরি নিশ্চিত নয়। কয়েকদিনের মধ্যেই জিম্বাবুইয়ে দল বাংলাদেশ সফরে আসবে। খেলবে ৩ ওয়ানডে, ২ টেস্ট খেলবে তারা। ২১ অক্টোবর ওয়ানডে দিয়ে সিরিজ শুরু। ১৫ তারিখ থেকেই অনুশীলনে নামবে টাইগাররা। এশিয়া কাপ শেষে ১৬ দিনের বিশ্রাম পেয়েছেন ক্রিকেটাররা, তবে অনেকেই নিজ উদ্যোগে অনুশীলন করছেন। বিশেষ করে মুশফিক। আর মাহমুদুল্লাহ, মাশরাফিও জানিয়েছেন তারা সময়মতোই ফিরে আসবেন। এরপর নবেম্বরের শেষদিকে আসবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল। তারা খেলবে ২ টেস্ট, ৩ ওয়ানডে ও ৩ টি২০ ম্যাচের সিরিজ। এ দুটি দলের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজই বেশি গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশ দলের জন্য। তাছাড়া আগামী বছর মে মাসে ইংল্যান্ডে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। এর আগে এ দুটি সিরিজ প্রস্তুতির জন্যও বেশ গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশ দলের জন্য। যদিও ফেব্রুয়ারিতে নিউজিল্যান্ড সফরে ৩ ওয়ানডে খেলার সুযোগ থাকবে। তবে সবদিক থেকে আসন্ন দুটি সিরিজে বেশ চ্যালেঞ্জের মুখেই থাকবে বাংলাদেশ দল।
×